প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয় উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে ইউএনসিডিপি’র সনদ।উদযাপন
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে যাচ্ছে, এটি অবশ্যই আনন্দের বিষয়। আর তাই এ মর্যাদা লাভের বিষয়টিকে সরকারের পক্ষ থেকে গতকাল দিনব্যাপী ঘটা করে উদযাপন করা হয়েছে। সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত উৎসবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া হয় গণসংবর্ধনা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয় উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে ইউএনসিডিপি’র সনদ। ঢাকা মহানগরীকে ১৩টি জোনে ভাগ করে বিকালে বের করা হয় বর্ণাঢ্য র্যালি। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লেজার শো প্রদর্শন এবং আতশবাজি পোড়ানোর। শুধু রাজধানী নয়, বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হয় জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও।
একটি দেশের বৈশ্বিক পর্যায়ে উন্নয়নসংক্রান্ত মর্যাদার এক ধাপ উত্তরণ সেই জাতির জন্য গৌরবজনক ঘটনা অবশ্যই। একসময় বাংলাদেশকে দরিদ্র দেশের মডেল হিসেবে গণ্য করা হতো। বলা হতো, এলডিসির নেতৃত্বদানকারী দেশ বাংলাদেশ। আমাদের দারিদ্র্যকে কটাক্ষ করে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যায়িতও করা হয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ অবশ্যই কৃতিত্বপূর্ণ। বেড়েছে দেশের মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা। ফলে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় প্রবেশের প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে অনুষ্ঠেয় মধ্যবর্তী পর্যালোচনায় বাংলাদেশ তার অবস্থান ঠিক রাখতে পারলে ২০২৪ সালে আমরা চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হতে পারব। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের মর্যাদা ও অবস্থান আগের তুলনায় বাড়বে ও সুসংহত হবে। কোনো দেশ যখন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এ ধরনের সাফল্য অর্জন করে তখন বৈশ্বিক পর্যায়ে ধরে নেয়া হয় সেই দেশটি অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তার প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বেড়েছে।
তবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যে বিশেষ কিছু সুবিধা পেত তা আর পাবে না। যেমন, বাংলাদেশ স্বল্প সুদে আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশ থেকে ঋণ পেত। নির্দিষ্ট সময় পর বাংলাদেশের জন্য সেই সুবিধা আর থাকবে না। কাজেই এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আগেভাগেই নিতে হবে সেই প্রস্তুতি। এটি একটি চ্যালেঞ্জও বটে।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে এই উত্তরণের মূল কৃতিত্ব জনগণের। গতকাল গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়া সাধারণ মানুষের অর্জন, তারাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে- সরকার শুধু পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করছে।’ আমরাও মনে করি, যখন যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, যথাযথ পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে তাদের। স্বাধীনতার পর দুঃখজনকভাবে বারবার জনগণ সঠিক নির্দেশনা ও প্রেরণা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হয়েছে বাধাপ্রাপ্ত। এতে উন্নতি ব্যাহত হয়েছে। তা না হলে আরও আগে এ সাফল্য আসত সন্দেহ নেই। তবু স্বস্তির বিষয়, দেরিতে হলেও বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে যাচ্ছে। তবে এ অর্জন তখনই অর্থবহ হবে যখন দেশের সিংহভাগ মানুষ ভোগ করবে এর সুফল। দুর্নীতি ও বৈষম্য কমিয়ে আনার মাধ্যমে তা সম্ভব হতে পারে।