প্রাণের ৭১

আলো নিভিয়ে দেশব্যাপী এক মিনিট নীরবতা গণহত্যা দিবস পালন

একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে গণহত্যা স্মরণে দেশব্যাপী এক মিনিট নীরবতা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কেপিআই ও জরুরি স্থাপনা ছাড়া সারাদেশের মানুষ গতকাল রবিবার রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত দাঁড়িয়ে সব আলো নিভিয়ে একসঙ্গে নীরবতা পালন করেন। নতুন এই কর্মসূচির নাম ছিল ‘ব্ল্যাক-আউট’।

এছাড়া একাত্তরের সেই ভয়াল ২৫শে মার্চ কালরাতে শহীদদের স্মরণে সারাদেশের বধ্যভূমিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মশাল প্রজ্বলন, আলোর মিছিল, স্মরণ সভা, সাংস্কৃতিক আয়োজন ও বিভীষিকাময় সেই কালরাতের স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে গতকাল রবিবার জাতীয় গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। প্রতিটি কর্মসূচিতে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গিকার ব্যক্ত করা হয। দিবসটি পালনে আয়োজিত সকল অনুষ্ঠানে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি ছিল প্রচন্ড। জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় গতকাল সকাল ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ গণহত্যার ইতিহাস’ শীর্ষক শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। এছাড়া সারাদেশে সভা, সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোকচিত্র প্রদশর্নী হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যৌথ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল সন্ধ্যা ৭টায় স্মৃতি চিরন্তন-এ মোমবাতি প্রজ্বলন, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, আলোচনা সভা। এছাড়া বা’দ জোহর মসজিদুল জামিয়ায় ২৫ মার্চের রাতে নিহতদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মিরপুর বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে পুস্পার্ঘ্য অর্পন করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে ১৪ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। দিবসটি উপলক্ষে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি শহীদ স্মৃতি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের স্মরণে তারা বিভিন্ন স্থানে ৩০ লাখ গাছ লাগান। গতকাল রবিবার বিকালে বঙ্গভবনের মাঠে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ২৫ মার্চের কালরাতের স্মরণে ২৫টি বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এবং একুশে ফেব্রুয়ারির মতোই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘটানো গণহত্যাকাণ্ডের দিনটি জাতীয়ভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে এ প্রস্তাব পাস হয়। দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালনের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সমর্থন আদায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

গণহত্যা দিবস পালনে জাতীয় পার্টি (জেপি) বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল গতকাল সকাল ৬টায় জেপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সকল কার্যালয়ে কালো পতকা উত্তোলন। দুপুর ২টায় সকল উপাসনালয়ে ২৫ মার্চে কাল রাত্রিতে শহীদদের স্মরণে বিশেষ প্রার্থনা, রাত ৯টায় নিষ্প্রদীপ মহড়ায় অংশগ্রহণ। এদিকে যথাযোগ্য মর্যদা এবং ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের বিভিন্ন হাইকমিশন ও দূতাবাসে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে।

গণহত্যা দিবস উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গতকাল বিকাল সোয়া ৫টায় বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে কুরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। দোয়া ও মুনাজাত পরিচালনা করেন দ্বীনী দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারি পরিচালক জুবাইর আহাম্মদ আল-আযহারী। ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে সকল শহীদের রুহের শান্তি কামনা করে দোয়া ও মুনাজাত করা হয়। এ ছাড়া মুনাজাতে দেশ ও জাতির শান্তি-সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণকারী তাঁর পরিবারের সকল সদস্যের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। মুনাজাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ সাধারণ মুসল্লিগণ উপস্থিত ছিলেন।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*