বৃন্দাবন অাশ্রমের মা ঢাকার মিডিয়ায় হয়ে গেল বাংলাদেশের স্টেশনে ফেলে যাওয়া বিসিএস কর্মকর্তার মা
বৃন্দাবন অাশ্রমের মা ঢাকার মিডিয়ায় হয়ে গেল বাংলাদেশের স্টেশনে ফেলে যাওয়া বিসিএস কর্মকর্তার মা । জঘন্য এই সাংবাদিকতা। বিসিএস কর্মকর্তা এই সম্মানজনক পেশার প্রতি অাপত্তিকর মানহানি হয়েছে এই ঘটনায়। এরকমই প্রায় প্রতিদিন জঘন্য সব অসত্য খবর দিয়ে বাংলাদেশের ডাক্তারদেরও মানহানি করা হয়। তখন কোন ক্যাডারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের আমাদের পাশে দাঁড়াতে দেখি না। কিন্তু অঅমরা মানবতার সেবক ডাক্তার। যে কোন ক্যাডারের কোন ইমেজে অসত্য প্রোপাগান্ডার আমরা প্রতিবাদ করি। লিখে সেই জঘন্য মিথ্যাচারের নিন্দা জানাই। কেমন করে এই কাজ করতে পারে মিডিয়া, জনপ্রিয় সব প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া। জনপ্রিয় পত্রিকা ও টিভি গুলো খবর ছড়িয়েছে, এক বিসিএস ক্যাডার তার ম্যাজিস্ট্রেট বউয়ের কথায় বৃদ্ধা মাকে রেল স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছে। একজন আইনকর্মী নাকি এ নিয়ে মামলাও রুজু করেছেন। খবরের প্রামাণিক চিত্র হিসেবে ওই বিসিএস কর্মকতার মাকে লেখা চিঠি ও মায়ের একটি ছবিও জুড়ে দেয়া হল! সে ছবি নাকি বাংলাদেশের রেল স্টেশনের ছবি। খতিয়ে দেখা গেল, রেলস্টেশন কোথায় । এতা কোন আশ্রম। আরও খতিয়ে দেখা গেল, সে ছবি
VRINDAVAN, INDIA – JUNE 13, 2015: An elderly sad Indian woman sitting on her bed in a dormitory at the Ashram. সূত্র থেকে ভিডিও ছবি থেকে টুকলিফাই করা। ২০১৫ সালের বৃন্দাবন আশ্রমের ছবিকে এ বছরের ২০১৮ সালের বাংলাদেশের রেলস্টেশন বলে চালাতে মিডিয়ার কোন কৃপণতা ঘটে নি।
এরকম নিন্দা জানাচ্ছেন সকল মানবতাবাদী মানুষ।
স্বাস্থ্যসেবার অকৃত্রিম কর্মী ও মানববন্ধু সুমত বনিক এক লেখায় প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে কার্পণ্য করেন নি।
সুমিত বনিক জানাচ্ছেন,
FAKE NEWS ALERT ।। বানোয়াট খবর পরিবেশনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে আরো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়া উচিত।
নিচের ক্লিপটি ইমতিয়াজ এমটুর দেওয়াল থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে করা গুগল সার্চের ফলাফল। ভারতে বৃন্দাবনের একটি আশ্রমে এই বৃদ্ধা নারীর ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে একজন সরকারী কর্মকর্তার স্টেশানে ফেলে যাওয়া বৃদ্ধা মা’র ছবি হিসেবে ভাইরাল হয়েছে। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমও এটি খবর হিসেবে প্রকাশ করেছে।
সন্দেহ নেই Fake News বিরাট একটা সমস্যা।
সামাজিক মাধ্যম থেকে তথ্য নিয়ে পাতা ভরানোর প্রবণতা এখন বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে মারাত্মক চেহারা নিয়েছে। ডেস্কে বসে প্রতিবেদন তৈরী করতে হলেও যে ভেরিফিকেশানের বিষয় আছে, সাংবাদিক হিসেবে সেটি বিস্মৃত হলে চলে? ‘সম্পাদক’ হিসেবে যাদের গেট-কিপিং করার কথা, তারাই বা কোথায়?
তথ্য প্রযুক্তি যাচাইয়ের বিষয়টিও তো সহজ করে তুলেছে। ইমেজ সার্চ করুন, যিনি তথ্য দিচ্ছেন তার সাথে পুর্নবার যোগাযোগ করুন। ফেসবুক থেকে পেয়েছেন এটি বলা কি যথেষ্ট? ফেসবুক থেকে তো আমরা সবাই পাই।
কিন্তু আপনারা তো সংবাদ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান তাই না? নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতায় নিজেরাই কুড়োল চালাচ্ছেন কেন?
https://www.shutterstock.com/…/clip-10576886-stock-footage-…
__________
এপ্রিল ফুল শিরোনামে আরেক লেখায় সুলেখক
বিশাখদত্ত দত্ত লিখেছেন,
বাংলাদেশে কালেরকন্ঠ নামক জনপ্রিয় পত্রিকা খবর ছেড়েছে এক বিসিএস ক্যাডার তার ম্যাজিস্ট্রেট বউয়ের কথায় বৃদ্ধা মাকে রেল স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছে। একজন ব্যারিস্টার এ নিয়ে মামলা রুজু করেছেন। খবরের প্রামাণিক চিত্র হিসেবে ওই বিসিএস কর্মকতার মাকে লেখা চিঠি ও মায়ের একটি ছবিও জুড়ে দেয়া হল!
আমি তো ‘গট ম্যারিড’ লিখে এপ্রিল ফুলের রঙ্গ করলাম! কালেরকন্ঠ তো মনে হচ্ছে সবাইকে ফুল বানিয়ে কন্ঠরুদ্ধ করে ফেলেছিল! দু’পাড় বাংলারই অনেক বাঙালী মর্মাহত চিত্তে এইসব খবর শেয়ার করছিলেন। আমার অসুবিধাটা হচ্ছে আমার অভিজ্ঞতার হিসেব অনুযায়ী আমি বাংলাদেশের প্রথম সারির পত্রিকাগুলোকে পর্যন্ত একদম বিশ্বাস করে উঠতে পারি না। ফেব্রিকেটেড নিউজ নয় শুধু, পুরোপুরি ডাহা বানোয়াট খবর লিখে চালিয়ে দিচ্ছে এমন অসংখ্যবার দেখেছি! অনলাইন পোর্টালগুলোতো আরও জঘন্য! যথারীতি এই খবরটাও হজম করতে পারিনি। এই খবরে মর্মাহত হওয়া আর এপ্রিলের ১ তারিখে ফুল বনে যাওয়া এক বস্তু!
কিন্তু একটা বিষয় ভাববার যে দেশের মেইনস্ট্রিম প্রিন্ট মিডিয়া পর্যন্ত মানুষকে কি রকম বোকা বানায়? এরা কি মানুষকে গরু ছাগল ভাবে? মানুষের ইমোশনকে হাতিয়ার করে দু’পয়সা বেশী না কামালে নয়? আর মানুষও কি করে নির্বিচারে সব বিশ্বাস করে বুঝি না। আসলে তাদেরই বা দোষ কি? মিডিয়ার স্বাধীনতা কতটা থাকা উচিত এই প্রশ্নটাই আজও অমীমাংসিত! যখন তখন যাচ্ছেতাই এরা লিখতেই পারে। তাই না?
বৃন্দাবনের বৃদ্ধাশ্রমের এক বৃদ্ধার ছবিকে বিসিএস ক্যাডারের মা বলে চালিয়ে দিতে এদের লজ্জাও করল না! কালের কন্ঠের প্রথম ফেক খবর দেখেছিলাম ভারতের জেল থেকে পালাতে গিয়ে দুই জঙ্গী পুলিশের গুলিতে অক্কা পেলে সেটাকে মুসলমান নিধনের নামে চালিয়ে দিচ্ছিল! একই কর্মগুলো বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি দৈনিক করে থাকে। বিশেষত তাদের অনলাইন পোর্টগুলো! এরা প্রতিদিন এপ্রিলফুল খাওয়াচ্ছে! ভারতেও মিডিয়া প্রচন্ড বজ্জাত। কিন্তু একদম বানোয়াট গল্প লেখিয়ে নয়। মানুষ কি করে আস্থা রাখবে?
হ্যাপি এন্ড অফ এপ্রিল ফুল। বিয়ের নিমন্ত্রণ তাই দিইনি!