প্রাণের ৭১

দেশে দেশে নববর্ষ পালনের রীতি

আজ বাংলা বছর ১৪২৫ এর প্রথম দিন। দেশ জুড়ে বর্ণাঢ্য সব আয়োজনের মধ্যে বরণ করে নেওয়া হচ্ছে নতুন এই বছরকে। বাঙ্গালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী উৎযাপন পয়লা বৈশাখ। সুপ্রাচীন কাল থেকেই এই দিনটিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় লালন করে আসছি আমরা বাঙালিরা। বিশ্বের সর্বত্রই নতুন বছরকে বরণ করতে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অঞ্চল ও সংস্কৃতি ভেদে এই অনুষ্ঠানগুলো বিচিত্র। তবে চলুন জেনে নেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ কি ভাবে তাঁদের নতুন বছরকে বরণ করে।

চীন: মাসব্যাপী নানা আয়োজনের মাধ্যমে চীনারা নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। ফেব্রুয়ারিতে উদযাপিত হয় চীনের নববর্ষ। ‘চুন জি’ ইংরেজিতে ‘স্প্রিং ফেস্ট’হলো চীনের বর্ষবরণ। বেইজিংয়ের হোয়াংহো নদীর তীরের মন্দিরের মেলায় ভিড় জমান উৎসাহীরা। ওই দিন চীনের প্রাচীরের একটি অংশে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই দিন লাল পোশাক, লাল সন্ধ্যাবাতিতে সেজে ওঠে চীনের জনজীবন। ‘ওয়েইল’ নামে বিশেষ ভোজনের আয়োজন করা হয় এই দিনে।

জাপান: পূর্ব চীন এবং জাপানে একই দিন নববর্ষ উদযাপন হতো। এখন জানুয়ারির এক তারিখে জাপানিরা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে নববর্ষ পালন করে। এই দিনে খারাপ আত্মাকে দূরে রাখতে জাপানিরা বাড়ির বাইরে দড়ি দিয়ে খড়ের টুকরো ঝুলিয়ে রাখে। একে তারা সুখ এবং সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করে। প্রার্থনা, ঘন্টা বাজানো ও  বিশেষ খাওয়া দাওয়ার মধ্য দিয়ে বর্ষবরণের উৎসব পালন করেন জাপানিরা।

ফিলিপাইন: ফিলিপাইনের বেশির ভাগ মানুষ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। তাই তারা সবাই জানুয়ারির এক তারিখেই নববর্ষ উৎসব পালন করে। তারা তাদের নববর্ষকে ‘Manigong bagong taown’ বলে। এর অর্থ নতুন বছরে জীবন সফল হোক, সবাই যেন সুখি হয়।

আর্জেন্টিনা: আর্জেন্টিনায় নববর্ষের দিন নদী বা পুকুরে সাঁতার কেটে তারা নববর্ষ উদযাপন করেন। তারা বছরের শেষ দিন রাতে পরিবারের সব সদস্য একসঙ্গে খাবার টেবিলে বসে খাওয়া দাওয়া করেন।

ব্রাজিল: ব্রাজিলে রিও ডি জেনিরো সমুদ্রসৈকতে বর্ষবরণের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানটি হয়। চোখ ধাঁধানো সব পোশাক পড়ে সকলে হাজির হয় সৈকতে। সমুদ্রে সাতটি ডুব আর সাতটি ফুল ছুড়ে নতুন বছরকে বরণ করে ব্রাজিলের মানুষজন। তাঁদের ধারণা এই রীতি পালন করলে নতুন বছর খুব ভালো কাটবে।

স্পেন: স্পেনে রাত ১২টা। আর তখনই সবাই ১২টা করে আঙুর খেয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় সবাই। তারা এই আঙুরকে তাদের সৌভাগ্যের প্রতীক বলে বিশ্বাস করে।

নিউজিল্যান্ড: চোখ ধাঁধানো আতশবাজি উৎসবের মাধ্যমে নিউজিল্যান্ডবাসী বরণ করে নেয় নতুন বছরকে।

ফ্রান্স: বছরের প্রথম দিনে ফ্রান্সে ‘জউরদে এটরেন্স’বলা হয়। এখানে সপ্তাহব্যাপী বর্ষবরণের নানা অনুষ্ঠান চলে। এখানে একে অপরকে ‘বন্নে আনেস’বলে অভিবাদন করে। এই দিনে ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ারের পাশে বর্ণাঢ্য আতশবাজি উৎসব হয়। ফরাসিরা থার্টিফাস্ট নাইটকে ‘লা সেইন্ট সিলভেস্ট্রে’ বলে ডাকে। বছরের প্রথম দিনে বিশেষ ভোজের আয়োজন করা হয় প্রতিটি ফ্রান্সের প্রতিটি ঘরে।

যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের টাইমস স্কয়ারে নববর্ষ উৎসব জাঁকজমকের সঙ্গে উদযাপন করা হয়। এখানে নতুন বছর শুরু হওয়ার ১০ সেকেন্ড পূর্বে বিশাল ক্রিস্টাল বল নেমে আসে। নতুন বছরের আগমনে কাউন্টডাইন করা হয়। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় নিউ-ইয়ার পার্টি। এখানে প্রায় ৩০ লাখ লোক অংশগ্রহণ করে।

যুক্তরাজ্য: লন্ডনে নতুন বছরের প্রথম প্রহরে ট্রাফালগরে স্কয়ার ও পিকাডেলি সার্কাসে অনেক মানুষ সমবেত হয়। মধ্যরাতে বিগবেনের ধ্বনি শুনে তারা একত্রে নববর্ষকে বরণ করে নেয়। লন্ডনে বিগবেন এবং ওয়েস্টমিনিস্টার প্রাসাদের ঘড়ি ঘরের সামনে ঘটা করে উৎসব করে জনতা। লন্ডনে রাতভর জেগে বর্ষবরণের ঘটা করে নববর্ষ উৎসব পালন করে। আতশবাজি ও নাচে-গানে উল্লসিত হয়ে ওঠে সব শহরের দোকানপাট ও রেস্তোরাঁ।

থাইল্যান্ড: থাইল্যান্ডে নববর্ষের নাম ‘সংক্রান।’ থাইল্যান্ডে ১৩ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বৌদ্ধ নববর্ষ উৎসব হিসেবে এটি উদযাপিত হয়। তারা রাস্তায় পানি আর বরফ দিয়ে সবাইকে ভিজিয়ে এই দিনটি উৎযাপন করে।

ভিয়েতনাম: ভিয়েতনামে ৩১ ডিসেম্বর নববর্ষ উদযাপিত হয়। এখানে রাস্তা ফুল ও আলো দিয়ে সাজানো হয়। ভিয়েতনামের নববর্ষকে সংক্ষেপে ‘টেট’বলে। তাদের বিশ্বাস, ঈশ্বর ঘরে ঘরে থাকেন। নববর্ষে তিনি স্বর্গে বেড়াতে যান। বলা হয় কার্প মাছের পিঠে চড়ে ঈশ্বর ভ্রমণে বের হন। এ বিশ্বাসে ভিয়েতনামের লোকেরা নদী বা পুকুরে কার্প মাছ ছাড়েন।

বুলগেরিয়া: বুলগেরিয়াতে বিচিত্র সব উপায়ে নতুন বছরকে বরণ করা হয়। বুলগেরিয়াবাসীর কাছে বর্ষবরণের দিন হাঁচিকে সৌভাগ্য ও মঙ্গলের প্রতীক বলে মনে করা হয়। অতিথি হাঁচি ফেললে তাকে নিজস্ব পশু খামারে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ওই ব্যক্তি খামারের যে পশুটির ওপর প্রথম নজর দেবে সেই পশুকে ওই ব্যক্তিকে উপহার দেওয়া হয়। বুলগেরিয়ানদের ধারণা, হাঁচি ফেলা অতিথি নববর্ষে পুরো পরিবারের জন্য সুখ ও সমৃদ্ধি বয়ে নিয়ে আসেন।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*