ফেসবুকে পরিচয়,চট্টগ্রামে কিশোরীকে খুন করল প্রেমিক।
ফেসবুকে বন্ধুত্বের এক মাসের মাথায় তাসফিয়া নামে এক স্কুলছাত্রীকে শবেবরাতের রাতে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে খুন করেছে আদনান মির্জা ও তার সহযোগীরা।
বুধবার (২ মে) সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত থেকে ওই স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
যুগান্তরের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নিহত স্কুলছাত্রীর নাম তাসফিয়া। সে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার ডেইলপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী মো. আমিনের মেয়ে। তারা নগরীর খুলশী থানাধীন ও আর নিজাম রোড এলাকার বসবাস করেন। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তাসফিয়া সবার বড়। সে নগরীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
স্কুলছাত্রীর পরিবার জানায়, আদনান মির্জা ফেসবুকে বন্ধুত্বের ‘মাসপূর্তি’ উদযাপনের প্রলোভন দিয়ে তাসফিয়াকে মঙ্গলবার শবেবরাতের দিন বিকালে একটি চায়নিজ রেস্টুরেন্টে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে আদনান তাসফিয়াকে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয় পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আদনানকে তাসফিয়ার পরিবারের লোকজন আটকও করেছিলেন। কিন্তু তাসফিয়াকে ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে সে (আদনান) কৌশলে সটকে পড়ে। তাকে ছাড়িয়ে নিতে ফিরোজ ও আকরাম নামে চিহ্নিত দুই সন্ত্রাসীও প্রভাব বিস্তার করে বলে অভিযোগ করেছে তাসফিয়ার পরিবার।
এদিকে, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের পাথরের ওপর থেকে উদ্ধার করা স্কুলছাত্রী তাসফিয়ার চোখেমুখে আঁচড়ের চিহ্ন ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয়েছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
পুলিশ ও তাসফিয়ার পারিবারিক সূত্র জানায়, এক মাস আগে আদনান মির্জা নামে এক তরুণের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয় তাসফিয়ার। এর সূত্র ধরেই আদনান মঙ্গলবার পবিত্র শবেবরাতের দিন বিকাল ৫টায় তাসফিয়াকে ঘর থেকে কৌশলে বের করে নেয়। বন্ধুত্বের মাসপূর্তি উদযাপনে চায়নিজ রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর প্রলোভন দেয় আদনান। বিকাল ৫টার দিকে তাসফিয়া যখন বাসা থেকে বের হচ্ছিল, তখন তার (তাসফিয়ার) মা আছরের নামাজ পড়ছিলেন। নামাজ থেকে উঠে তাসফিয়াকে বাসায় না পেয়ে তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন তিনি।
জানা গেছে, আদনান নামে কোনো এক তরুণের সঙ্গে তাসফিয়ার যে ফেসবুকে সম্পর্ক হয়েছে, সে বিষয়টি কিছুদিন আগেই টের পায় পরিবার। তাই সন্দেহবশত ফেসবুক আইডি থেকে নম্বর নিয়ে কৌশলে আদনানকে মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে তাসিফয়াদের বাসায় ডেকে আনা হয়। এ সময় তাসফিয়ার বাবা-চাচারা আদনানকে চাপ দেন তাসফিয়া কোথায় তা জানাতে। এ সময় আদনান তার পরিচিত বন্ধু-বান্ধবদের ফন করে জানায় তাকে আটকে রাখার বিষয়টি।
পরে মুরাদপুরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ফিরোজ ও আকরামসহ কয়েকজন তাসফিয়াদের বাসায় এসে আদনানকে ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ দেয়। এক পর্যায়ে আদনাকে ছেড়ে দেয়া হলে তাসফিয়া আধা ঘণ্টার মধ্যেই বাসায় ফিরে আসবে বলে জানানো হয়।
একদিকে সন্ত্রাসীদের হুমকি, অন্যদিকে তাসফিয়াকে ফিরে পেতে আকুল তাসফিয়ার পরিবার অদনানকে সরল বিশ্বাসে ছেড়ে দেন। কিন্তু এরপর থেকেই আদনানের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তাসফিয়ার পরিবার জানায়, আদনানের পরিবার সম্পর্কে বা তার বাড়ি কোথায়, সে কী করে সে বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। কেবল ফেসবুক থেকে নম্বর নিয়েই তারা আদনানকে আটক করেছিলেন। শবেবরাতের রাতে তারা এখানে-সেখানে পাগলের মতো খুঁজেছেন তাসফিয়াকে। কিন্তু কোথাও তার খোঁজ পান নি।
বুধবার সকালে পতেঙ্গায় অজ্ঞাত তরুণীর লাশ উদ্ধার হওয়ার খবর পাওয়ার পর তাসফিয়ার বাবা-চাচারা পতেঙ্গা থানায় যান। সেখানে গিয়েই তারা দেখতে পান তাসফিয়ার লাশ।
পতেঙ্গা থানার এসআই আনোয়ার হোসেন জানান, সকালে সৈকতের ১৮ নম্বর ব্রিজের উত্তরপাশে পাথরের ওপর তরুণীর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। পরে তরুণীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে গোলপাহাড়ের মোড়ে অবস্থিত চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্ট থেকে একটি ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই রেস্টুরেন্ট থেকে তাসফিয়া ও আদনানকে একসঙ্গে বের হতে দেখা যায়। এ সময় আদনানকে বিল দিতেও দেখা যায়। ওই ভিডিও ফুটেজটি ঠিক কোন মুহূর্তের তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।