প্রাণের ৭১

রোজার মাস ঘিরে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার

রোজার মাসকে কেন্দ্র করে দেশের নিত্যপণ্যসহ কাঁচা সবজির বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে মূল্য বেড়েছে মাছ ও মুরগির মাংসেরও। গরুর মাংস স্থানবিশেষে আগের দামে স্থিতিশীল থাকলেও সুযোগমতো তার বেড়েছে রমজানকে কেন্দ্র করে। বাজারের এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতি আরও কিছুদিন থাকবে বলেই জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর কোনাপাড়া বাজারের সবজি বিক্রেতা রহমত আলী বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘রোজার সময় সবাই কমবেশি বাজার করে। এর ফলে এ সময় সব ধরনের পণ্যের চাহিদা বাড়ে। আর চাহিদা বাড়লে বাড়ে পণ্যের দাম। এ আর নতুন কী?’ তিনি জানান, ‘পণ্য বাজারে এলেই দাম বাড়ে না। রোজার সময় কৃষকের মাঠ থেকে মোকাম, মোকাম থেকে পাইকারি আড়ত, পাইকারি আড়ত থেকে খুচরা বিক্রেতার দোকান এবং খুচরা বিক্রেতার দোকান থেকে ক্রেতার ঘর পর্যন্ত বাড়তি দামে পণ্য প্রবেশ করে। এই সময় এই বাড়তি দামের জন্য সবাই প্রস্তুত থাকে বলে বাজেটও থাকে বাড়তি।’ এটি এ দেশের চিরাচরিত নিয়মে পরিণত হয়েছে বলে জানান রহমত আলী।
রাজধানীর শ্যামবাজারের মুদি ব্যবসায়ী হাসান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী খোরশেদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়লে ব্যবসায়ীদের দোষ দেয় সবাই। কিন্তু এটা ঠিক না। দেশে কোনও পণ্যের ঘাটতি নেই। সরবরাহেও কোনও সমস্যা নেই। সব কিছুই স্বাভাবিক। তার পরেও অস্থিরতা নিয়ে বাজারে আসেন ক্রেতা। ক্রেতার হাবভাব দেখে মনে হয়, বাজারে সব পণ্য শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিনতে না পারলে না খেয়ে থাকতে হবে। অনেক সময় ক্রেতারা দাম দর জিজ্ঞাস না করেই অতিরিক্ত পরিমাণ পণ্যের অর্ডার দিতে থাকেন। এক কেজির স্থলে দুই কেজি। দুই কেজির স্থলে ৫ কেজি। ৪ কেজির স্থলে ১০ কেজি পরিমাণের পণ্য কেনেন। এতে বাজারে একটি চাপ পড়ে। এ কারণেই অনেক সময় সরবরাহে সমস্যা তৈরি হয়। আর এই সুযোগটি গ্রহণ করেন ব্যবসায়ীরা।’
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা দোকানগুলোয় প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়। প্রতি লিটার সয়াবিন ১০৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পাঁচ লিটারের বোতল কোনও কোম্পানি ৫৪০ টাকা, কোনও কোম্পানি ৫৫০ টাকায় বিক্রি করছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৮ থেকে ৯০ টাকায়।
এ ছাড়া রমজান উপলক্ষে বেড়েছে মসুর ডাল, কাঁচা মরিচ, শসা, বেগুন ও লেবুর চাহিদা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার ৪০ টাকার প্রতি কেজি বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ৩৫-৪০ টাকার কাঁচামরিচ ৯০ থেকে ১০০ টাকা, ২০-২৫ টাকার হালি দরের লেবু ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মসুর ডাল মুদি দোকানগুলোয় ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেলেও রাজধানীর বিভিন্ন সুপারশপে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে পর্যন্ত বিক্রি করতে দেখা গেছে। ৩২ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরের দেশি পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে। কারণ জানতে চাইলে ওই একই জবাব রমজান, তাই দাম বেড়েছে পেঁয়াজের।
এদিকে সরকারের নির্দেশ অনুসারে বাজারের প্রবেশমুখে নিত্যপণ্যের দর টানিয়ে রাখার বিধান থাকলেও তা মানছেন না কেউই। সিটি করপোরশন গরুর মাংসের দাম ঠিক করে দিয়েছেন প্রতিকেজি ৪৫০ টাকা। যা প্রথম রোজা থেকে কার্যকর হবে। এই সুযোগে ৫০০ টাকা কেজি দরেও গরুর মাংস বিক্রি করেছেন অনেক ব্যবসায়ী। ক্রেতারাও কিনেছেন। সুযোগ বুঝে ব্রয়লার ও পাকিস্তানি—উভয়জাতের মুরগির দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১০০ টাকা পর্যন্ত। অতিবৃষ্টির কারণে পুকুর-নালা-ডোবা পানিতে ভরে গেছে। ফলে মাছ সংকট ছিল আগে থেকেই। দেশি ও চাষের উভয় প্রকার মাছের দাম আগেই বেড়েছিল।রোজা কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্রায় সব বাজারেই দেশি ও চাষের মাছের দাম আগের তুলনায় ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ১১০ টাকা কেজি দরের পাঙ্গাস ১৬০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা এবং ১২০ টাকা কেজি দরের তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে।
জানতে চাইলে কাওরানবাজারের মুদি ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘রোজায় এই মূল্য বৃদ্ধির ঘটনা কোনও নতুন কিছু নয়। ৮-১০ রোজার পর সব ধরনের পণ্যেরই চাহিদা কমে যায়। আর চাহিদা কমে গেলেই দামও কমে যাবে।’aaa






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*