চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডে ২ ত্রিপুরা উপজাতী কিশোরীকে ধর্ষন শেষে হত্যা।
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে দুই ত্রিপুরা কিশোরীকে ধর্ষণ শেষে মুখে বিষ ঢেলে ও গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল (শুক্রবার) বিকাল ৩টার দিকে পৌরসদরের দুর্গম পাহাড়ে মহাদেবপুর ত্রিপুরা পল্লীর একটি ঘর থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এক বখাটে প্রেমিক তার সাঙ্গ–পাঙ্গ নিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে নিহত কিশোরীদের পরিবারের দাবী। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ নিয়ে ঐ পাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকাল আনুমানিক ৩টায় সীতাকু– পৌরসদরের জঙ্গল মহাদেবপুর ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দা সুমন ত্রিপুরার ঘরে একই রশিতে সুমনের কন্যা ছবি রানী ত্রিপুরা (১১) ও পার্শ্ববর্তী ঘরের ফলিন ত্রিপুরার মেয়ে সুকুলতি ত্রিপুরার (১৫) ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায় এলাকাবাসী। ঘটনার সময় দুই কিশোরীর বাবা–মা বাড়িতে ছিলেন না। পরে তাদের খবর দেওয়া হলে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং আশপাশের বাসিন্দারা দড়ি কেটে লাশ দুটি নিচে নামিয়ে আনেন। এদিকে লাশ দুটি নামানোর পর তারা দেখেন মেয়ে দুটির মুখ থেকে বিষ জাতীয় কোন তরল পদার্থ ঝরে পড়ছে। যেখানে লাশগুলো ঝুলছিলো সেখানেও এ ধরণের পদার্থ দেখেন তারা। এদিকে ঘটনার পর পাড়ার সবাই উপস্থিত হলে পাড়ার কয়েকজন শিশু জানায়, পাশের গ্রামের কয়েকজন যুবক দুপুরে বৃষ্টির মধ্যে ঐ ঘরে প্রবেশ করেছিলো। পরে তারা আবার চলে গেছে। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে সন্দেহ তীব্রতর হয়ে উঠে। কারণ, পার্শ্ববর্তী চৌধুরীপাড়া এলাকার এক বখাটে যুবক বেশ কিছুদিন ধরেই সুকুলতি ত্রিপুরাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছে। প্রায়ই সে ত্রিপুরা পাড়ায় ঢুকে তাকে বিরক্ত করত। এ নিয়ে আনুমানিক ২০–২৫ দিন আগে এ ত্রিপুরা বাসিন্দারা নিজেদের মধ্যে একটি বৈঠকও করে। কিন্তু ঐ যুবকটিকে আটকানো যাচ্ছিল না। সে দল বল নিয়ে এ পাড়ার চারপাশে ঘুরঘুর করত। ফলে দুই কিশোরীর ঘরে কোন অভিভাবক না থাকার সুযোগে তারা এ ঘটনা ঘটাতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
সরেজমিনে গতকাল বিকাল ৫টার দিকে ঘটনাস্থল পৌরসদরের জঙ্গল মহাদেবপুর ত্রিপুরা পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সুমন ত্রিপুরার ঘরের মেঝেতে তার মেয়ে ছবি রানী ও ফলিন ত্রিপুরার মেয়ে সুকুলতি রানী ত্রিপুরার লাশ রাখা হয়েছে। লাশের পাশে অসহায়ের মত বসে হাউ মাউ করে কাঁদছে হতভাগা স্বজনরা।
পরিদর্শনকালে কথা হয় নিহত দুই কিশোরীর বাবার সাথে। ছবি ত্রিপুরা বাবা সুমন ত্রিপুরা হাউ মাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার দুই ছেলে এক মেয়ে। ঈশ্বরের কাছে অনেক প্রার্থনা করে এই মেয়েটি পেয়েছি। একটা ভারি কাজও মেয়েকে করতে দিতাম না। নিজে কষ্ট করেও মেয়েকে অনেকে আদরে রেখেছি। কিন্তু এক বখাটে আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। তার সাথে ঐ ছেলেটার কোন সম্পর্ক ছিলো না।চৌধুরী পাড়ার আবুল হোসেন (২৫) নামক ঐ যুবক পাশের বাড়ির সুকুলতি ত্রিপুরাকে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। রাজি না হওয়ায় পাড়ার ভেতরে এসেই বিরক্ত করত। গত কিছুদিন আগে ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দারা এ নিয়ে সামাজিক বৈঠকও করেন। ছেলেটিকে বারণ করা হয়। তবুও সে আসত। শুক্রবার দুপুরেও সেই ছেলেটি আরো দুইজনকে নিয়ে পাড়ায় এসেছিলো এবং সেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে গেছে বলে তারা ধারনা করছেন। তিনি মেয়ের মুখ দেখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মেয়ের মুখে বিষও আছে আবার গলায় ফাঁসও আছে। আর ফাঁস থাকলেও শরীরের বেশিরভাগই ছিলো মাটিতে লাগানো। একটি মেয়ে বিষ খেয়ে কি আবার ফাঁস খেতে যায় ? আর শরীরের অধিকাংশ মাটিতে থাকলে ফাঁসে কি মৃত্যু হয় ? সুকুলতির বাবা ফলিন ত্রিপুরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা অসহায় দুর্বল মানুষ। তাই ঐ বখাটে আমার মেয়েকে এভাবে মেরে ফেলল। আমি এর বিচার চাইব কার কাছে। আমার তো টাকা পয়সা নাই। এই দুই অবিভাবক জানান, এই পাহাড়ের তাদের ঘরের পাশে আর কারো ঘর নেই। অন্যদের ঘর আরো কিছুটা নিচুতে। তাই অনেকটা নির্জনে বাস করেন তারা। ঘটনার সময় সুকুলতির বাবা–মা দুজনেই দূর পাহাড়ে জুম চাষে গিয়েছিলো। আর ছবির মা কয়েকদিন আগে বাপের বাড়ি ফটিকছড়ি যান। ছবির বাবাও গিয়েছিলেন জুম চাষে। বাড়ি দুটিতে সুকুলতি ও ছবি ছাড়া অন্যরা ৩–৪ বছর বয়সী শিশু। এই শিশুরাই বলছে যে ঐ বখাটে যুবকসহ তিনজন বৃষ্টির মধ্যে ঘরে এসেছিলো। তাই তারা ধর্ষণ শেষে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে ত্রিপুরা পাড়ার সকলের বিশ্বাস। এদিকে বিকাল ৩টায় লাশ উদ্ধারের পর থেকে লাশ নিয়ে কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না অবিভাবকরা। তাই হতভম্বের মতই বসে রয়েছেন তারা। এ ঘটনায় মামলা করবেন নাকি লাশ দাফন করে ফেলবেন তাও বুঝতে পারছিলেন না তারা। পরে এ প্রতিবেদক পুলিশকে জানালে সীতাকু– থানার ওসি মো. ইফতেখার হাসান সেখানে ফোর্স পাঠানোর উদ্যোগ নেন। রাতেই লাশ দুটি পোস্টমর্টেমের জন্য প্রেরণ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ওসি ইফতেখার হাসান জানান। সীতাকু– পৌরসভার ঐ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শফিউল আলম মুরাদ বলেন, কিশোরী দুই জনের মৃত্যু নিয়ে নানান কথা বলা হচ্ছে। ধর্ষণ করে হত্যার অভিযোগও উঠছে। আমি ও পুলিশ লাশ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠিয়েছি।