ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু শুক্রবার।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে রেল বিভাগ। এরই অংশ হিসেবে কমলাপুরে নতুন করে স্থাপন করা হয়েছে তিনটি টিকিট কাউন্টার। এছাড়া দেওয়ালে রঙ করা ও সহায়তা বুথ স্থাপনহ স্টেশনের আনুষঙ্গিক কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে আগামী শুক্রবার (১ জুন) থেকে। এদিন সকাল আটটা থেকে ১০ জুনে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে।
প্রস্তুত কমলাপুর
ঈদ উপলক্ষে কমলাপুর রেলস্টেশনে ৩টি অস্থায়ী টিকিট কাউন্টার স্থাপিত হয়েছে। আগামী শুক্রবার (১ জুন) সকাল আটটা থেকে ১০ জুনের ট্রেনের টিকিট বিক্রির মধ্য দিয়ে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে।
মঙ্গলবার (২৯ মে) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, কাউন্টারে শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। স্টেশনের পূর্বপাশের একটি কোণে কাউন্টার তিনটিতে রঙ দেওয়ার কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। শ্রমিকদের একজন জানালেন, কাল-পরশু কাউন্টারে নির্দেশিকা সাঁটানো হবে।
কাউন্টার ছাড়াও অতিরিক্ত যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে আশেপাশের স্টেশনগুলো থেকে জনবল ধার করেছে কমলাপুর স্টেশন। এছাড়া আইনশঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়াও রেলওয়ে পুলিশসহ নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। এরই মধ্যে কমলাপুরে স্থায়ী টিকিট কালোবাজারিদের একটি বড় অংশকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেছে রেল পুলিশ।
ঢাকা রেলওয়ে থানা’র এসআই তফাজ্জুল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতি কঠোর নজরদারি অব্যাহত আছে। বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক। স্টেশনে কালোবাজারি নেই। অনেককে আটক করা হয়েছে।’
ট্রেনের শিডিউল সম্পর্কে কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদের আগের তিনদিন ও পরের সাতদিন বিশেষ ট্রেন চলবে কমলাপুর থেকে। ঈদের দিন ঢাকা-শোলাকিয়া বিশেষ ট্রেন যাতায়াত করবে ভৈরবে।’
টিকিট কালোবাজারি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সিতাংশু চক্রবর্তী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কালোবাজারি ঠেকাতে যথারীতি রেলওয়ের নিজস্ব বাহিনী, পুলিশ, আর্মড পুলিশ,র্যাবসহ সব গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে রয়েছে সিসিটিভি। আমরা সবসময় মনিটরিং করি। এখন কালোবাজারের সুযোগ নেই।’
ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াসিন ফারুক মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে আমরা অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে আছি। ইতোমধ্যে কালোবাজারিদের অনেককে আটক করা হয়েছে। গত চারমাসে আমরা প্রায় ৬-৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।’
ঈদের বিশেষ ট্রেন
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত বগি যুক্ত করবে রেলের পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চল। এছাড়া রেলবিভাগ অতিরিক্ত ১৫ হাজার যাত্রী চলাচলের ব্যবস্থা করেছে। রেলওয়েতে প্রতিদিন ২ লাখ ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করে। এবার আরও ১৫ হাজার বেশি আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, ‘ঈদ উপলক্ষে সাত জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। ট্রেনগুলো হলো—দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা, চাঁদপুর স্পেশাল-১: চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম, চাঁদপুর স্পেশাল-২: চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম, রাজশাহী স্পেশাল: রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী, পার্বতীপুর স্পেশাল: পার্বতীপুর-ঢাকা-পার্বতীপুর, সকল স্পেশাল ট্রেন ঈদের পূর্বে ১৩-১৪-১৫ জুন তিনদিন এবং ঈদের পরে ১৮ জুন হতে ২৪ জুন ০৭ দিন চলাচল করবে। এছাড়া শোলাকিয়া স্পেশাল-১: ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরববাজার, শোলাকিয়া স্পেশাল-২ ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ, ঈদের দিন।
মন্ত্রী এও জানান, পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর ০৫ (পাঁচ) দিন পূর্বে ১১ জুন থেকে ঈদের পূর্ব দিন পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনগুলো সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও চলাচল করবে।
রেলের চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (কারখানা) এফ এম মহিউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘এবার রেলের পূর্বাঞ্চলে সাধারণ বগি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫টি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আরও ১০-১৫টি বগি যুক্ত করার ব্যাপারে আশাবাদী। এছাড়া পূর্বাঞ্চলে অন্তত ১১৫ টি সচল ইঞ্জিন যুক্ত করার লক্ষ্যমাত্র ঠিক করা হয়েছে।’
এদিকে, সৈয়দপুর কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক কুদরত-ই খোদা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদে যাত্রীসেবা ঠিকঠাক রাখতে পশ্চিমাঞ্চলে ৯০টি কোচ যুক্ত করার টার্গেট রয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন রাখতে।’
এর আগে রেলমন্ত্রী মো. মজিবুল হক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘ঈদ উপলক্ষে সর্বমোট ১৪০৫টি কোচ চলাচল করবে। এতে ২২৯ টি ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে।’