বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যান্ড কতটা স্থায়ী হচ্ছে?
বাংলাদেশে পণ্য ও সেবার বাজারে বিদেশি ব্রান্ডগুলোর দাপটের মুখে দেশি ব্রান্ড কতটা দাঁড়াতে পারছে?
একটি আন্তর্জাতিক মার্কেটিং কোম্পানির জরিপে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে যেসব ব্রান্ড শীর্ষস্থান দখল করে আছে তার সবগুলোই বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির।
জরিপটি চালায় বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা বাজার জরিপ প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি কান্টার ওয়ার্ল্ড প্যানেল। এতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের শীর্ষ দশটি ব্র্যান্ডের মধ্যে প্রথম স্থানে আছে সানসিল্ক, দ্বিতীয় স্থানে লাক্স এবং তৃতীয় স্থানে রিন।
এই তিনটি পণ্যই বাংলাদেশে বাজারজাত করে বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার।
বাংলাদেশের নিজস্ব কোম্পানিগুলোর মধ্যে তিব্বত বল সাবান রয়েছে তালিকার ১০ নম্বরে।
তবে শীর্ষ স্থানীয় ৫০টি ব্র্যান্ডের তালিকায় বাংলাদেশের নিজস্ব কোম্পানি রয়েছে ২৫টি।
বাংলাদেশের নিজস্ব কোম্পানিগুলোর ব্যবসা এবং প্রসার গত দুই দশকে বাড়লেও ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে উঠেনি।
কেন বহুজাতিক বা বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে দেশি কোম্পানিগুলোকে পেছনে ফেলে এতটা এগিয়ে তার কারণ ব্যাখ্যা করলেন ঢাকার গ্রে অ্যাডভার্টাইজিং এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গাওসুল আজম শাওন।
“প্রথমত যে বিদেশি ব্রান্ডগুলো এই জরিপে এগিয়ে আছে তারা ব্রান্ড মার্কেটিং এর চর্চায় যুক্ত বহু বছর ধরে। এটা একটা বড় কারণ। তাই আমাদের বাংলাদেশের যে কোম্পানিগুলো এখন উঠে আসছে, তারা কিন্তু অতি সম্প্রতি এ ধরণের চর্চা শুরু করেছে। বিদেশি কোম্পানিগুলো এক্ষেত্রে যে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে, সেটাকে কাটিয়ে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে যেতে হলে অনেক সময় লাগবে, এটা হঠাৎ করে হয় না।”
বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম নামের একটি বেসরকারি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্পাদক শরিফুল ইসলামও মওেন করেন, ব্র্যান্ডিং একটি দীর্ঘমেয়াদি বিষয়। এর পেছনে অনেক টাকা বিনিয়োগ করতে হয়।
মি: হাসান বলেন, ব্র্যান্ডিং-এর জন্য বিনিয়োগ করলে অতি দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়না। ধীরে-ধীরে বিষয়টি গড়ে উঠে এবং দীর্ঘমেয়াদী ভালো ফল পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের ব্যবসায়িক অঙ্গনে ব্র্যান্ডিং খুব বেশি দিনের কথা নয়। অনেক কোম্পানি এখনো ব্র্যান্ডিং-এর মর্ম উপলব্ধি করতে পারেনি।
বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের ব্র্যান্ড গড়ে তোলার পেছনে গবেষণাসহ নানা খাতে লাখ-লাখ ডলার খরচ করে।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশের বাজার কেন চীনা পণ্যের দখলে?
বাংলাদেশ নিয়ে আতঙ্কে পশ্চিমা পোশাক ব্র্যান্ড?
এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো অনেক পিছিয়ে আছে বলে মনে মি: হাসান।
তিনি বলেন, “শুধু বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্র্যান্ড তৈরি হয় না। এর পেছনে অনেক কম্পোনেন্ট (উপাদান) আছে। অনেকে মনে করে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই ব্র্যান্ড তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আসলে সেটা ঠিক না। তবে বিজ্ঞাপন অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমিকা পালন করে।”
তবে বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোর কাছে এখন ব্র্যান্ডের গুরুত্ব বেড়েছে বলে মি: ইসলাম উল্লেখ করেন।
মানুষের সামনে যখন বিভিন্ন ধরনের বিকল্প থাকে, তখন সেখান থেকে মানুষ যে পণ্য বা সেবাটিকে বেছে নেয়, সেটির মাধ্যমে ব্র্যান্ড গড়ে উঠে।
এক্ষেত্রে পণ্যের গুণগত মান একটি বড় বিষয় বলে উল্লেখ করেন মি: ইসলাম।
তিনি বলেন একটি পণ্য বা সেবা যখন ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে উঠে তখন পেছনে কয়েকটি কারণ থাকে।
প্রথমত; পণ্যের মান, দ্বিতীয়ত; দাম, তৃতীয়ত; জীবনের সাথে সে পণ্যের প্রাসঙ্গিকতা কতটা রয়েছে।
“আপনি খুব ভালো ক্যাম্পেইন বা ব্র্যান্ডিং দিয়ে খারাপ একটা প্রডাক্টকে বেশি দিন চালাতে পারবেন না। আপনাকে ভালো পণ্য দিতে হবে এবং সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ হতে হবে।” বলছিলেন মি: ইসলাম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশর নিজস্ব কোম্পানিগুলোর পণ্য এবং সেবার মান আগের চেয়ে বেড়েছে।
কিন্তু এখনো আরো অনেক পথ অতিক্রম করতে হবে বলে মনে করেন মি: ইসলাম।
কোম্পানির মালিকদের দার্শনিক ভিত্তির উপর নির্ভর করে ব্র্যান্ড গড়ে উঠে বলে মনে করেন মি: ইসলাম।
শুধু বাজারজাত করণের জন্য টাকা খরচ করলেই ব্র্যান্ড গড়ে উঠবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তবে গ্রে অ্যাডভার্টাইজিং এর গাওসুল আজম শাওন মনে করেন, ব্রান্ড নিয়ে দেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। ধীরে ধীরে তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটছে। খুব তাড়াতাড়ি এর ইম্প্যাক্ট দেখা যাবে বলে আশাবাদী তিনি।