বাংলাদেশের ভাবনায় শেষ চার ওভার।
প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে শেষের চার ওভার। বল হাতে আফগান-ঝড়ের মুখে পড়তে হয়েছিল বাংলাদেশকে, ব্যাট হাতেও শেষে কিছুই করতে পারেনি। আজকের ম্যাচে বাংলাদেশ সবচেয়ে মনোযোগী এই শেষ ৪ ওভার নিয়ে
হতাশা কাটানোর খোঁজ চলছে বাংলাদেশ শিবিরে। চলছে আস্থা ফিরিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা।
সোমবার রাতে খেলোয়াড়দের নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট একপ্রস্থ আলোচনায় বসেছিল। আফগানিস্তানের কাছে কেন নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে—ঘণ্টা খানেক ধরে চলে তারই ময়নাতদন্ত। এত দিন ধরে খেলে চলা একটি দল আফগানদের কাছে কেন এমন শামুকের মতো গুটিয়ে যাচ্ছে, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ। হারানো আত্মবিশ্বাস ফেরাতে আরও একাগ্র হওয়ার কথাই উঠে আসে সিনিয়রদের কথায়। প্রত্যেকেই একটি বিষয়ে একমত হন, সিরিজ শেষ হওয়ার আগে হারার কথা কল্পনাতেও যেন ঠাঁই না পায়।
এর অর্থ একটাই, আজকের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানো। কীভাবে তা সম্ভব, সোমবার রাত এবং মঙ্গলবার দুপুরে তারই খোঁজ চলে। দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ বলেন, সেরাটুকু দিতে সবাই নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
কাল সোমবার ছিল ঐচ্ছিক অনুশীলন। সবাই মাঠে আসেননি। মাহমুদ জানালেন, অনুশীলনে কারও বিন্দুমাত্র ঘাটতি নেই। কিন্তু আসল সময়ে একসঙ্গে অনেকে কেন যে ভুল করে বসছে, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক ম্যাচের চাপ নেওয়ার মানসিকতা কি এই দলের নেই? প্রশ্নটা করা হলে মাহমুদ বলেন, ‘তা–ই বা বলি কী করে? এই দলই তো শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে। ভারতকে হারিয়েছে।’ তাহলে আফগানিস্তান কেন এভাবে সব বিভাগেই ছড়ি ঘোরাচ্ছে? মাহমুদের জবাব, ‘আমাদের মধ্যে সেই খোঁজটাই চলছে।’
দলীয় এক সূত্রের কথায়, একটা সম্ভাব্য কারণ, খেলার সময় কখনো কখনো মনঃসংযোগ বা একাগ্রতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেটা যাতে না হয়, সে জন্য সিনিয়রদের সব সময় সচেষ্ট থাকতে হয়। সোমবার রাতের আলোচনায় প্রাধান্য পায় স্লগ ওভার। শেষের এই ওভারগুলোয় দুটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের খামতি রয়েছে বলে মনে করা হয়। একটি হলো, মোক্ষম ওভারগুলোয় ইয়র্কারের ব্যবহার ঠিকমতো না হওয়া, অন্যটি ভালো মানের লেগ স্পিনারের অনুপস্থিতি।
মুজিবুর রহমানের চেয়ে বেশি আলোচনা হয় রশিদকে নিয়ে। রশিদের বলের গতি ও চরিত্রে এখনো ধাতস্থ হতে পারেনি বাংলাদেশিরা। গুগলি ও লেগস্পিনের পার্থক্য বুঝতে কঠিন হওয়ায় (তাঁকে কম খেলার কারণে) ব্যাটসম্যানরা ঝুঁকি নিতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রথম ম্যাচে সেই ঝুঁকি কাজে দেয়নি।
এখানেই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে করণীয় কী, বিশেষ করে রশিদের ক্ষেত্রে। অধিকাংশই মনে করেন, রশিদকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিলে ওই চার ওভারে রানের হার কমবে। খেলাটা কার্যত হয়ে দাঁড়াবে ১৬ ওভারের। ওই ৪ ওভারের ঘাটতি পুষিয়ে দিতে হলে অন্য বোলারদের থেকে বেশি রান নিতে হবে। সেখানেও বাড়তি ঝুঁকি নিতেই হবে। ভুল হতেই পারে। সেটাও কাম্য নয়।
রশিদকে স্তিমিত রাখতে ঝুঁকি অতএব নিতেই হবে। সে জন্য প্রয়োজন হাতে উইকেট থাকা। সেটা যাতে থাকে সেদিকে নজর রাখা প্রয়োজন। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, প্রথম ম্যাচের প্রথম বলেই তামিম এবং চতুর্থ ওভারে সাকিবের চলে যাওয়া। চার ওভারে ২৪ রানে ২ উইকেটের পর কেউ চাপমুক্ত হতে পারেননি। সোমবার রাত ও মঙ্গলবার দুপুরের মিটিংয়ে সিনিয়ররা সবাই মনে করছেন, দুই ওপেনার অন্তত চার ওভার টিকে থেকে স্কোর বোর্ড রোটেট করতে পারলে সবাই অনেক চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারবে। চাপমুক্ত থাকাটাই বড় কথা।
স্পিন না পেস, স্লগ ওভারে কার ওপর ভরসা করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত এখনো কোটি টাকার প্রশ্ন। দল একটি বিষয়ে নিশ্চিন্ত, উইকেটের চরিত্রে বিশেষ কোনো হেরফের ঘটবে না। চাপ ও ভারমুক্ত হয়ে আত্মবিশ্বাসী থেকে সিরিজের আগ্রহ জিইয়ে রাখাটাই বাংলাদেশের কাছে আজ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।