আইসিটি খাতে মোট বরাদ্দ ১৩ হাজার ১১১ কোটি টাকা
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠন সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার- একথা উল্লেখ করে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রান্তিক মানুষসহ দেশের সবমানুষের দোরগোড়ায় সহজে সেবা প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে আমরা প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ এবং এর ব্যাপক সম্প্রসারণ করেছি।’
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ সালের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আইসিটি খাতে মোট ১৩ হাজার ১১১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই পরিমাণ প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের প্রায় ২ দশমিক ৮২ শতাংশ।
বিদায়ি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় বরাদ্দের এই পরিমান ১ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা বেশি। বিদায়ি অর্থবছরে এই বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ বরাদ্দ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এখাতে সার্বিক বরাদ্দের পরিমান ছিল ৪ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী মুহিত বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘৬৪টি জেলায় ১১৪টি উপজেলা হতে ১ হাজার ১০৪টি ইউনিয়নে প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, সম্প্রতি কুয়াকাটায় দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে ১ হাজার ৫০০ জিবিপিএস ব্র্যান্ডউইথ পাবে। এপ্রিল ২০১৮ পর্যন্ত দেশে মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা যথাক্রমে ১৫ দশমিক শূন্য ৩ কোটি এবং ৮ দশমিক ৬ কোটি এবং টেলিডেনসিটি ও ইন্টারনেট ডেনসিটির হার যথাক্রমে ৯১ ও ৫০ দশমিক ১ শতাংশ। ইতোমধ্যে দেশের ৬৪ শতাংশ জনগোষ্ঠী এবং ৪৮ শতাংশ ভৌগলিক এলাকা ৩-জি নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। বাংলা ডোমেইন চালুর ফলে দেশে ও বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ ইন্টারনেটে বাংলা ব্যবহার করতে পারছেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্র, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ই-সেবাকেন্দ্র, ১৪৭টি উপজেলা ও গ্রামীণ ডাকঘরের ই-সেন্টার, ২৫৪টি এগ্রিকালচারাল ইনফরমেশন সেন্টার ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য-পুষ্টি, কৃষি, জন্ম-নিবন্ধন, সামাজিক নিরাপত্তা ভাতাসহ প্রায় সকল সেবা সহজে ও সুলভে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। আমাদের প্রচেষ্টায় ৩টি দুর্গম পার্বত্য জেলার সব উপজেলায় মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু করা সম্ভব হয়েছে, যা পার্বত্য অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্র এক মহাউল্লম্ফন।’
তিনি বলেন, দেশের ৫৮টি মন্ত্রণালয়, ২৪০টি সরকারি দপ্তর ও ৬৪টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ ১৮ হাজার ৪৩৪টি সরকারি অফিসকে একটি একীভূত নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করা হয়েছে। সরাসরি কথোপকথনের জন্য এবং একসাথে একাধিক উপজেলায় বার্তা বা তথ্য প্রেরন ও সভা অনুষ্ঠানের জন্য ৮৮৩টি ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া, সরকারি দপ্তরে ই-নথির প্রচলন, সরকারি ক্রয়ে ই-জিপি’র প্রয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যে ই-কমার্সের ব্যবহারের ফলে কাজে যেমন গতিশীলতা বেড়েছে তেমনি জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বোপরি গত ১১ মে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট (বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১) মহাকাশে উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ পৌঁছে গেছে তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের এক অনন্য উচ্চতায়।