চকরিয়া ইয়াবার সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ
কক্সবাজার থেকে এইচ এম শহীদ :সরকারের ঘোষিত সিদ্ধান্তের আলোকে সারা দেশে এক যোগে মাদক বিরোধী অভিযানে নামে র্যাব, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ইতিমধ্যে সারা দেশে অন্তত দুই শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত ও চলমান অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে চকরিয়ার বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তথ্যবহুল ও বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশন হয়ে আসছে। একইভাবে থানা পুলিশের অভিযানে অনেক ইয়াবা কারবারি ও বিক্রেতারা গা ঢাকা দিয়ে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে গেলেও ওই অভিযানে অন্তত ২শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়েছে। সম্প্রতি বরইতলীর শীর্ষ সন্ত্রাসী দা বাহিনীর প্রধান ও মাদক ব্যবসায়ী শাহজাহান বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। মৃত্যুর পর তার আরো দুই সহযোগিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্থানীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানাগেছে, বন্দুকযুদ্ধে বরইতলীর শাহজাহান নিহত হলেও আন্ডারগ্রাউনে থাকা শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসা ও মোটরসাইকেল চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের প্রধান চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের দিগরপানখালী এলাকার মৃত শামসুল হুদার ছেলে বিএনপির সহযোগি সংগঠন ফাসিয়াখালী ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সদস্য সচিব পদ থেকে বহিস্কৃত জালাল উদ্দিন ওরফে ইয়াবা জালাল এবং তার আপন বড়ভাই অবৈধ মাদকদ্রব্য মামলার এজাহার নামীয় আসামী আবুল হাসেম (প্রকাশ টুটটেং হাসেম)কে পুলিশ এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইয়াবা ব্যবসায়ী ও মোটর সাইকেল চোরাকারবারী জালাল উদ্দিন ও তার ভাই হাসেমের ইয়াবা ব্যবসার মূল টার্নিং পয়েন্ট হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলার ফাসিয়াখালী হাসেরদীঘি ষ্টেশনস্থ জালালেল মালিকানাধীন টায়ার-পার্টসের দোকান। তারা প্রশাসন ও লোকচক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে ওই পয়েন্ট থেকেই সকল ইয়াবা চালান বিভিন্ন কৌশলে সরবরাহ দিয়ে থাকে। দু’ভাইয়ের সিন্ডিকেট ইয়াবা বাণিজ্যে নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। ইয়াবা জালাল ব্যক্তিগতভাবে বিএনপির সহযোগি সংগঠন শ্রমিকদলের ইউনিয়ন সদস্য সচিব হিসেবে রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইয়াবা ব্যবসার সম্পৃক্তরার দায়ে শ্রমিকদল থেকে গতকাল ৭জুন’১৮ইং তাকে (জালাল) বহিস্কার করা হয়েছে। কিন্তু ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ থেকে রেহায় পেতে গোপনে সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে দিব্যি অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। জানাগেছে, অভিযুক্ত জালাল উদ্দিন ইয়াবা ব্যবসার পাশাপাশি তার টায়ার ও মোটর পার্টসের দোকানের আড়ালে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ চোরামোটরসাইকেল ব্যবসা। দেশের উত্তর বঙ্গসহ বিভিন্ন স্থান থেকে চোরাইকৃত ও টানা মোটর সাইকেল তার দোকানে এনে প্রকাশ্যদিবালোকে চালিয়ে যাচ্ছে এ অবৈধ ব্যবসা। কিন্তু তার এ অবৈধ ব্যবসা বন্ধ কিংবা ও গ্রেফতারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোন হস্তক্ষেপ আজোবধি চোখে পড়েনি। ফলে স্থানীয় সচেতন মহলের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। থানা সূত্রে জানায়, ইয়াবা ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিনের আপন বড় ভাই মৌলভী আবুল হাসেম ইয়াবা ট্যাবলেটের চালান নিয়ে ঢাকায় গেলে বিগত ২০১৫সনের ৬ সেপ্টেম্বর ডিএমপি’র (ঢাকা) শাহজাহানপুর থানা পুলিশ মাথার টুপির ভেতরে মোড়ানো ৪০০০ (চার হাজার) পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ হাতে নাতে গ্রেফতার করে। ওই অভিযান নিয়ে শাহজাহানপুর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনের ১৯৯০ সনের ১৯(১)এর ৯ (খ) ধারায় মামলা হয় ইয়াবা ব্যবসায়ী ধৃত আবুল হাসেমের বিরুদ্ধে। ওই মামলায় দীর্ঘ ১৬ মাস কারাভোগ থাকার পর জামিনে বের হয়ে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ছোট ভাই জালালের নিয়ন্ত্রিত ইয়াবা ব্যবসার ফের হাল ধরেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নাকের ডগায় ইয়াবা জালাল ও হাসেম দিব্যি অবৈধ মাদক (ইয়াবা) ব্যবসা চালিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনরূপ ব্যবস্থা গ্রহণে আগ্রহী নয়। এনিয়ে স্থানীয় সচতেন মহল ও এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে এলাকায় চিহ্নিত মাদক কারবারিদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এদিকে অবৈধ ইয়াবা ব্যবসা থেকে পারপেতে লক্ষ লক্ষ টাকার মিশন নিয়ে নেমেছে ইয়াবা ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন ও তার ভাই মৌলভী আবুল হাসেম ওরফে টুটটেং হাসেম। ইতিপূর্বে তাদের অবৈধ ইয়াবা ব্যবসা নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশন হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে কর্মরত দুই জন সাংবাদিকসহ ৩জনকে অভিযুক্ত করে গতকাল ৭জুন চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মিথ্যা ফৌজদারী অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য পিবিআই পুলিশ কক্সবাজারকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এনিয়ে সচেতন মহলে ও সংবাদ মাধ্যমে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দ, কর্মরত সাংবাদিক ও সচেতন মহল চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন ও তার ভাই আবুল হাসেমকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও চলমান আইনে শাস্তি দাবী করেন। চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীর পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীর একটি তালিকা তৈরীর প্রক্রিয়া চলছে। অচিরেই তালিকাভুক্তসহ চিহ্নিত ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া হবে। অভিযুক্ত দুই সহোদরের ব্যাপারে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পাওয়ার সাথে সাথেই গ্রেফতারসহ আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি ইয়াবা ব্যবসায়ী কর্তৃক সাংবাদিকদের নিয়ে আদালতে অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি অবগত নয় বলে জানান