ভ্যাটমুক্ত অনলাইন বেচাকেনা।
- বাংলাদেশের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে অনলাইনে পণ্য কেনা-বেচায় কর আরোপের যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সেটিকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান জানান, ‘ভার্চুয়াল বিজনেস’ নামে যে নতুন সেবার সংজ্ঞা তৈরী করা হয়েছে, অনলাইনে পণ্য বা সেবা কেনা-বেচা তার আওতায় পড়বে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া প্রানের৭১ কে জানান ফেসবুক, ইউটিউব বা গুগলের মত মাধ্যমে দেয়া বিজ্ঞাপনের ওপর কর আরোপ করা হবে।
তিনি বলেন, অনলাইনে কেনা-বেচাকেও দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর ভ্যাট থাকবে না, তবে অনলাইনে টিভি বা ফ্রিজের মতো অন্যান্য পণ্য কেনা হলে তার ওপর ভ্যাট দিতে হবে।
বাজেটে অনলাইনে পণ্য কেনা-বেচার ওপর কর আরোপের প্রস্তাব করা হলে তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের উদীয়মান ই-কমার্স ও এফ-কমার্স খাত দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।
ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে চামড়াজাত পণ্য বিক্রি করেন এমন একজন তাসলিমা মিজি মনে করেন, এর ফলে দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবেন।
তাসলিমা মিজি বলেন, “বাংলাদেশে অনেক ছোট উদ্যোক্তা রয়েছে যাদের দোকান তৈরী করার সামর্থ্য নেই। এদের মধ্যে অনেক নারীও রয়েছেন।”
তার মতে এই অনলাইন ব্যবসা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য এটি অনেক বড় একটা সুযোগ – যেখানে একটি কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করা যায়।
“কর আরোপ করা হলে তাদের প্রয়াসটা বাধাগ্রস্ত হবে”, বলে মত প্রকাশ করেন মিজ. মিজি।
তাসলিমা মিজির মতে করের বোঝা চাপিয়ে উদ্যোক্তাদের বাধাগ্রস্ত না করে সরকারের উচিত এই ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোর প্রসারে সহায়তা করা।
তিনি মনে করেন, সরকারের এই খাতকে প্রণোদনা দেয়া উচিৎ।
বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন : নারী উদ্যোক্তারা কিভাবে ফেসবুকে পণ্য বিক্রি করছেন?
“প্রণোদনা দেয়ার ফলে দীর্ঘমেয়াদে যদি সরকার লাভবান হয় তাহলে সেরকম পদক্ষেপই নেয়া উচিত।”
একই ধারণা পোষণ করেন অনলাইনে পোশাক বিক্রি করেন এমন একজন উদ্যোক্তা কাকলি তানভীর। মিস. তানভীরের মতে অনলাইনভিত্তিক ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোকে বড় হতে সহায়তা করলেই কেবল সেসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাষ্ট্র লাভবান হতে পারবে।
মিজ তানভীর বলেন, “একটা গাছকে বড় হতে দিয়ে তারপর ফল আশা করতে হয়। ভাল ফরের জন্য চারাগাছকে যথেষ্ট পরিমাণ পরিচর্যা করতে হয়।”
“চারাগাছ থেকে যেমন ফল আশা করা যায় না তেমনি এসব ক্ষুদ্র ব্যবসা বড় হওয়ার সুযোগ না দিলে এগুলো থেকে সরকার লাভবান হওয়ার আশাও করতে পারবে না” – বলেন তিনি।
এছাড়া ঢালাওভাবে কর আরোপ না করে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরী করে সব ধরণের অনলাইন ব্যবসাকে সংজ্ঞায়িত করে আইনের আওতাধীন করা উচিত বলে মন্তব্য করেন কাকলি তানভীর।
তা না করলে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়পক্ষই অসদুপায় অবলম্বনে প্ররোচিত হবেন বলে মনে করেন তিনি।
“সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলে ক্রেতা ও বিক্রেতা দুই পক্ষেরই ঝুঁকি কমে যায়।”
মিজ তানভীর মনে করেন একটা নীতিমালার মধ্যে আসলে ব্যবসায়ীও চাইবেন ক্রেতাকে না ঠকিয়ে ব্যবসা করতে পারলে টিকে থাকা সহজ হবে আর ক্রেতাও চাইবেন প্রতিযোগিতামূলক দামে ভাল পণ্য পেতে।
“কাজেই নীতিমালা হওয়ার পরই অনলাইন ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের করের আওতায় আনা যুক্তিযুক্ত হবে। তা না হলে ফাঁকি দেয়ার প্রবণতাটা বেড়ে যাবে।”
তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, বাজেটে ‘ভার্চুয়াল বিজনেস’ নামের নতুন সেবায় অনলাইনে পণ্য বা সেবা কেনা-বেচার বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত নয়। মি. ভূঁইয়া জানান ফেসবুক, ইউটিউব বা গুগলের মত মাধ্যমে দেয়া বিজ্ঞাপণের ওপর কর আরোপ করা হবে।
আর অনলাইনে পণ্য ও সেবা কেনাবেচার ক্ষেত্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর কোনো ধরণের কর আরোপ করা থাকবে না।
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া জানান ‘ভার্চুয়াল বিজনেস’কে দুই ভাগে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে।
“ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব-এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপনভিত্তিক আয় হলে সেগুলোর ওপর ভ্যাট দিতে হবে।”
“আর অনলাইনে কেনা-বেচাকেও দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর ভ্যাট থাকবে না, তবে অন্যান্য পণ্য যেমন অনলাইনে টিভি, ফ্রিজ কেনা হলে সেগুলোর ওপর ভ্যাট দিতে হবে।”
ই-কমার্স ও এফ-কমার্স সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এরকম কর আরোপের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে শুধু দেশের ভেতরে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা নয়, নিরুৎসাহিত হবে এই খাতে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক বিদেশী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও।
« নিয়োগ পেয়ে গর্বিত রোডস (পূর্বের সংবাদ)
(পরবর্তি সংবাদ) ঘুম থেকে উঠে স্ত্রীকে স্বামীর প্রশ্ন: তুমি কে? »