প্রাণের ৭১

কাতারে যাচ্ছে রুশ ক্ষেপনাস্ত্র। সৌদি পুত্র’র সালমানের হামলার হুমকি।

সৌদি আরবের উদ্বেগ ও হুমকির মধ্যেই কাতারকে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতে যাচ্ছে রাশিয়া। দেশটি বলছে, ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনা থেকে তারা সরে আসবে না। এমন খবরে আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর ফলে পারস্য উপসাগর এলাকার দুই দেশ সৌদি ও কাতারের মধ্যে নতুন করে সংকট তৈরি হতে চলেছে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে কাতার সরকার যে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে চেয়েছে, তা বিক্রির পরিকল্পনা থেকে সরছে না রাশিয়া। আর ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করা হলেই কাতারে হামলার হুমকি দিয়েছেন সৌদি বাদশা সালমান।
ফ্রান্সের লা মঁদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারের ক্ষেপণাস্ত্র কেনার কর্মসূচি বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছে সৌদি আরব। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ এ উদ্বেগের কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁকে। দোহা যদি ক্ষেপণাস্ত্র কেনে তবে ‘প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ’ নেবে দেশটি বলেও হুমকি দিয়েছে সৌদি আরব। চিঠিতে অনুরোধ করা হয়েছে, ফ্রান্স সরকার যেন কাতারকে ক্ষেপণাস্ত্র কেনা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানায়। চিঠিতে সৌদি বাদশা লিখেছেন, পরিস্থিতি কঠিন হলে কাতারে অভিযান চালানোর মতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রাশিয়ার উচ্চকক্ষের নেতা, প্রতিরক্ষা এবং নিরপত্তাবিষয়ক কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান আলেক্সি কনড্রায়েভ বলেছেন, রাশিয়া এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কাতারের কাছে বেচবে। রাশিয়ার স্পুটনিককে তিনি বললেন, ‘রাশিয়ার নিজস্ব আগ্রহ আছে। আমাদের নিজের বাজেটের দিকেও লক্ষ রাখতে হয়। সৌদি আরবের অবস্থানের কারণে কাতারের কাছ ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে আমরা পিছপা হব না। রাশিয়া তার অবস্থান থেকে সরে আসবে না।’
মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে সৌদি আরব বৃহত্তম ক্ষমতাশালী রাষ্ট্র। তার পূর্ব সীমায় থাকা কাতার একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। সেই রাষ্ট্র যদি এফ ৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনে, তাহলে তা বেশ চিন্তারই কারণ সৌদি আরবের জন্য। এই ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে মরিয়া কাতার সরকার। রাশিয়ার সঙ্গে তাদের কথাও চলছে।
এদিকে কাতার সরকার এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি। তবে হুমকির পর দেশটির রাজধানী শহর দোহাতে ছড়িয়েছে প্রবল আলোড়ন। নতুন করে উপসাগরীয় যুদ্ধের আশঙ্কায় আরবের পূর্ব প্রান্তে ক্ষুদ্র দেশ কাতারে ছড়াচ্ছে আতঙ্ক।
গত বছরের অক্টোবরে রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি করে কাতার। একই মাসে রাশিয়া সফরে যান বাদশাহ সালমান। তিনিও রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয়ের জন্য প্রাথমিক চুক্তি করেন।
সন্ত্রাসের সহায়তা করছে—এমন অভিযোগে গত বছরের ৫ জুন কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করে সৌদি আরব, বাহরাইন, আরব আমিরাত, মিসর। দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও ছিন্ন করে কয়েকটি দেশ। এরপর থেকে কাতারের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক চলছে সৌদি আরবের।
সৌদি আরবের এই বিরোধিতায় কাতারের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি নিয়ে মস্কোর হিসাব-নিকাশে কোনো পরিবর্তন আসার সুযোগ আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে রুশভিত্তিক প্রতিরক্ষা-সম্পর্কিত বিশ্লেষক পাভেল ফেলগেনহাওয়ার আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এমনটা সাধারণত হয় না। কয়েক বছর ধরেই রাশিয়া সৌদি আরবের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই চেষ্টা খুব একটা কাজে দেয়নি। রুশ অস্ত্র কেনা নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে সৌদি আরব শুরুতেই কিছু রাজনৈতিক শর্ত নিয়ে আসে। এর মধ্যে প্রথমেই আসে ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি। ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনমন কিংবা সিরিয়ায় রুশ পক্ষের অবস্থান বদলের শর্ত হাজির করে তারা। কাতার এমন কোনো বাড়তি শর্ত নিয়ে আলোচনা করে না। আর উপসাগরীয় অঞ্চলে যা ঘটছে, তার সঙ্গে সামরিকভাবে যুক্ত হওয়ার কোনো ইচ্ছে রাশিয়ার নেই। তবে বিমান-বিধ্বংসী যে ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয় নিয়ে কথা হচ্ছে, তা কাতারের কাছে গেলেও, তাত এখনো অনেক সময় লাগবে।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*