প্রাণের ৭১

সুমন জাহিদ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাক্ষী ছিলেন।

শহিদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের ছেলে সুমন জাহিদের লাশ উদ্ধার

স্টাফ রির্পোটারঃ শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের ছেলে সুমন জাহিদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) দুপুরে রাজধানীর খিলগাঁও বাগিচা এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় তার শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। সুরতহালের জন্য তার লাশ ডিআরপি (রেলওয়ে পুলিশ) থানা, কমলাপুরে রাখা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পলাতক চৌধুরী মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে সাক্ষী ছিলেন তিনি। তিনি বেসরকারি ব্যাংক দ্য ফারমার্স ব্যাংকে চাকরি করতেন। এর আগে তিনি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল চ্যানেল নাইনে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অ্যাকাউন্ট্যান্ট ছিলেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, তিতুমীর কলেজ ও নটরডেম কলেজে পড়ালেখা করেছেন সুমন জাহিদ।

শাজাহানপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মাবুদ সারাবাংলা’কে বলেন, ‘সুমন জাহিদ নামে একজনের লাশ উদ্ধার হওয়ার খবর জেনেছি। আমরা শুনেছি, তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দিয়েছিলেন। তবে রেলওয়ে এলাকা থেকে লাশ উদ্ধার হওয়ায় বিষয়টি ডিআরপি (রেল পুলিশ) থানা দেখভাল করছে। এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারছি না।’ সুমন জাহিদ ট্রেনে কাটা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে— জানান আব্দুল মাবুদ।

ডিআরপি, কমলাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন আহমেদ সারাবাংলা’কে বলেন, ‘সুমন জাহিদ পথচারী ছিলেন। সকাল ১০টার দিকে তিনি ট্রেনে কাটা পড়েছেন। আশপাশের মানুষও সেটাই আমাদের বলেছেন। দুপুর ১টার দিকে আমরা তার লাশ উদ্ধার করেছি। এখন ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।’

শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনের ছেলে তৌহিদ রেজা নূর সারাবাংলা’কে বলেন, সকাল ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। শাজাহানপুর থানা পুলিশ কমলাপুর রেল স্টেশন পুলিশকে জানায় যে রেল লাইনের পাশে একটি লাশ দেখা গেছে। পরে কমলাপুর রেলওয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। তিনি জানান, সুমন জাহিদের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। তবে তার শরীরের বাকি অংশ অক্ষত ছিল।

সুমন জাহিদ ট্রেনে কাটা পড়েছেন বলে পুলিশ ধারণা করলেও সেই আশঙ্কার কথা অস্বীকার করেছেন তৌহিদ রেজা নূর। তিনি বলেন, আমরা মনে করছি, সুমন জাহিদের মৃত্যু কোনোভাবেই দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যা নয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হোতা চৌধুরী মাঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন সুমন জাহিদ। এদিকে, কয়েকদিন আগে মুন্সীগঞ্জের প্রকাশক, ব্লগার, লেখক শাজাহান বাচ্চুকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সোচ্চার ছিলেন সুমনও। শাজাহান বাচ্চুকে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তমনা মানুষদের বিরুদ্ধে হত্যার যে ধারা শুরু হয়, এই ঘটনাও তারই ধারাবাহিকতা।

তৌহিদ রেজা নূর আরো বলেন, বলা হচ্ছে, ‘সুমন জাহিদ আত্মহত্যা করেছেন কিংবা দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। কিন্তু আমরা সবাই অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। মানসিকভাবে আমরা অনেক শক্ত। আমরা মনে করি না, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তাছাড়া তিনি মোটরসাইকেল চালাতেন। তিনি অনেক সাবধানী ছিলেন। দুর্ঘটনা হলে তার লাশ এভাবে পাওয়া যেত না। আমরা কোনোভাবেই তার মৃত্যুর এই ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলেও মেনে নিতে রাজি না।’

দুর্ঘটনায় সুমন জাহিদের মৃত্যু হয়েছে, এমন বক্তব্য অস্বীকার করেছেন তার শ্যালক কাজী মোহাম্মদ বখতিয়ার উদ্দিনও। তিনি বলেন, ‘৩১২ উত্তর শাজাহানপুরে থাকতেন তিনি। তার বাসা খিলগাঁও বাগিচার এলাকার পাশেই। প্রতিদিন সকালেই তিনি বাসা থেকে বের হতেন। কর্মদিবসে অফিস করার জন্য, অন্যান্য দিন বাজার করতেও বের হতেন সকালে। বলা হচ্ছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু তিনি আত্মহত্যা করার মতো মানুষ নন। মাত্র ৮ বছর বয়সে মা’কে হারানোর পর যে কষ্ট তিনি করেছেন, তাতে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন না।’

কাজী বখতিয়ার উদ্দিন আরো বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি চৌধুরী মঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন তিনি (সুমন জাহিদ)। সবাই ধারণা করছি, দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।’






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*