প্রাণের ৭১

ব্যাংক আমানত ও ঋণ সুদ কমালে লাভবান কে হবে?

বাংলাদেশে ব্যাংক ঋণ ও আমানতের সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো।
আজই দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছে, পহেলা জুলাই থেকেই ঋণ ও আমানতের সুদের হার এক অংকে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
অন্যদিকে বেসরকারি বেশ কয়েকটি ব্যাংক কয়েকদিন ধরেই এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে যাচ্ছে তাদের গ্রাহকদের জানানোর জন্য।
বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, পহেলা জুলাই থেকে তাদের আমানতের সর্বোচ্চ সুদের হার হবে ৬ শতাংশ। আর ঋণের সুদ হার হবে ৯ শতাংশ।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম এমন ঘোষণা দিয়েছিলো দেশের বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাংক ইসলামি ব্যাংক।
ব্যাংকটিকে এ মূহুর্তে আমানতের পরিমাণ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বেশি আর ঋণের পরিমাণ ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংক গত ডিসেম্বর প্রান্তিকেও আমানত থেকে বিশাল পরিমাণ অর্থ লাভ করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
ইসলামি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া বিবিসিকে বলছেন এক অংকের নীচে নামিয়ে আনার কারণে সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ীরা।
“তারা ঋণ নিয়ে ব্যবসা করবেন। এখন আগের চেয়ে কম টাকা সুদ হিসেবে পরিশোধ করতে হবে। বিশেষ করে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বেশি সুবিধা হবে”।
কিন্তু যারা গাড়ি, ফ্ল্যাট বা এ ধরনের কাজে ব্যাংক ঋণ নেবেন তাদের কি কোন সুবিধা হবে?
এমন প্রশ্নের জবাবে আবু রেজা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া বলেন, এগুলো আসলে ব্যাংকগুলো পরে নির্ধারণ করবে যে কোন কোন খাতের এক অংকের ডিজিট সুদ হিসেবে কার্যকর হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সুদের হার কমানোর প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন আছে। কারণ এটা করার কথা ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের, কোন সমিতির নয়।
“আবার প্রায়ই অভিযোগ আসে যে ঘোষণা করা সুদের হার মনে করেন ৯ শতাংশ কিন্তু যখন সুদ আদায় করা হয় তখন নানা মারপ্যাচে ১২শতাংশ আদায় করে ব্যাংক। এ জিনিস এখন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে”।
তিনি বলেন, সার্ভিস চার্জ নাম দিয়ে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে নেবে ব্যাংকগুলো।
এগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় কেনো?
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলছেন, এটা ব্যাংক মালিকদের সিদ্ধান্ত কিন্তু কতটা বাস্তবায়ন হবে সংশয় আছে।
“প্রথমত তিন মাসের জন্য করেছে। আর ব্যাংকগুলো যা করে সেটা নানা ভাবে নানা কিছুতে চার্জ দিয়ে সুদের হার বাড়িয়ে ফেলে। আর আমানতকারীদের সুদের হার নির্ধারণ করা ঠিক হয়নি। মুদ্রাস্ফীতি ৫ দশমিক ৮ আছে এটা বেড়েও যেতে পারে। আর ব্যাংক সেক্টর প্রতিযোগীতামূলক”।
তিনি বলেন, শিল্পপতিরা চাচ্ছেন কিন্তু কমানোর তো আরও অনেক উপায় আছে। ভালো উপায় ছিলো ব্যাংকগুলোর অব্যবস্থাপনা উন্নত করা। সেটা করলেই প্রফিট বাড়তো। পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি ব্যাংকগুলোর। স্বচ্ছতা বাড়াতে দুর্নীতি কমালে আমানতকারীদের সুদের হার কমাতে হতোনা।
আমানতকারীরা কি নিরুৎসাহিত হবে?
ব্যাংক মালিক বা ব্যবসায়ীদের যুক্তি ছিলো, ঋণের সুদের হার কমলে ব্যাংকের অলস টাকা বিনিয়োগ হবে এবং ঋণের চাহিদাও বাড়বে। আর ঋণের সুদের হার কমাতে হলে আমানতের সুদের হার কমাতে হবে।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ব্যাংকের বেশিরভাগ আমানত আসে ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীর কাছ থেকেই এখন তাদের সুদ কমলে তারা নিরুৎসাহিত হবে এটাই স্বাভাবিক।
সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমানতকারীরা এমনি আগ্রহ হারিয়েছে ব্যাংকের অবস্থার কারণে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র আমানতকারীরা যারা ঝুঁকির কারণে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে চায়না।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র আমানতকারীরা তাদের সামান্য অর্থের জন্য একটি নিরাপদ জায়গা চায় আর সেজন্যই তারা ব্যাংকে টাকা রাখতো।
“এখন আমানতেও সুদের হার কমানোর কারণে যাদের টাকা আছে এমন খাতে টাকা রাখবে -যা কাজে লাগবেনা। অথচ অর্থনীতিতে বিনিয়োগেরও প্রয়োজন আছে অনেক।
ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ব্যাংক ব্যতীত যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে তাদের সুদের হার বেশি হয়। সেখানে কিছু টাকা যেতে পারে।
কিন্তু বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম খুব বড় নয়, তাই ব্যাংকগুলোতে আমানতের ওপর সুদের হার কমিয়ে দেয়ায় বড় পরিমাণে অর্থ ব্যাংক থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে যাবে বলে মনে করেন না তিনি।
অন্যদিকে ব্যাংকের আমানতের সুদের হার কমায় অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে সঞ্চয়পত্র বা পোস্টাল সেভিংস স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারেন বলেও মনে করছেন অনেকে।
যদিও অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যেই সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোরও ইঙ্গিত দিয়েছেন।



« (পূর্বের সংবাদ)



মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*