প্রাণের ৭১

রোহিঙ্গা নিপীড়নের নিন্দায় যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে প্রস্তাব

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের নিপীড়নের নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধিসভায় একটি প্রস্তাব উঠেছে। ওই প্রস্তাবে জাতিসংঘের সত্যানুসন্ধানী দলের প্রতিবেদন আমলে নেওয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারে কারাবন্দি রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে দেশটির প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমার আওতায় অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বেশ কয়েকটি দেশ মিয়ানমারের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তাভাবনা করছে। আজ সোমবার জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৩৯তম অধিবেশন শুরু হচ্ছে। এই অধিবেশনেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে জাতিসংঘ সত্যানুসন্ধানী দলের প্রতিবেদন ও সুপারিশ উত্থাপনের কথা রয়েছে। অন্যদিকে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যাচ্ছেন বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে শুক্রবার একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। কংগ্রেসম্যান স্যান্ডি লেভিন উত্থাপিত ওই প্রস্তাবের মূল বিষয় হলো রোহিঙ্গা নিপীড়ন উন্মোচনকারী রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সো ওকে মুক্তি দিতে মিয়ানমারের বেসামরিক সরকার, বিশেষ করে স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির প্রতি আহ্বান জানানো। তবে সেখানে জাতিসংঘের সত্যানুসন্ধানী দলের প্রতিবেদনের বেশ কিছু প্রসঙ্গ যেমন রোহিঙ্গাদের ওপর ধারাবাহিক নিপীড়ন, সন্ত্রাস নির্মূলের নামে পুরো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও সেনাদের মাধ্যমে মানবাধিকারের চরম বিপর্যয় ঘটানো এবং গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মিয়ানমারের জ্যেষ্ঠ সামরিক অধিনায়কদের বিচারের আহ্বানের কথাও রয়েছে।

এ ছাড়া রোহিঙ্গা নিপীড়নের জোরালো অভিযোগ সত্ত্বেও তা ঠেকাতে সু চির উদ্যোগ না নেওয়া, রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া, গত বছরের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে প্রায় সাত লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা সহিংসতা, নিপীড়ন ও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার তথ্য প্রস্তাবে আমলে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পলিটিকো জার্নালের ইউরোপ সংস্করণে গতকাল রবিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে মিয়ানমারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের তদন্তের আহ্বানও আমলে নিয়েছে ইইউভুক্ত দেশগুলো। বেশ কয়েকটি দেশ মিয়ানমারের ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয় বিবেচনা করছে। রোহিঙ্গা নিপীড়নের দায়ে ইইউ কয়েক মাস আগে মিয়ানমারের সাত জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সম্প্রতি রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে সাত বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়ার পর অনেক দেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নতুন করে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে। তবে বড় পরিসরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে মিয়ানমারের সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই রোহিঙ্গা নিপীড়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের একটি প্রতিনিধিদল আজ সোমবার ব্রাসেলস সফর করে ইইউ ও ইউরোপীয় কমিশনকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাবে। রোহিঙ্গাদের সংগঠন ‘বার্মা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্কের’ নির্বাহী পরিচালক কিউ উইন বলেন, ‘গণহত্যা শেষ হয়ে যায়নি, এখনো চলছে।’

ইউরোপীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে পলিটিকো জার্নাল জানতে পেরেছে, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান ও উপ-সেনাপ্রধানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলো মিয়ানমারের ওপর বাণিজ্যিক বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চায় না। ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে মিয়ানমারের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে।

অন্যদিকে গত বছরের আগস্ট মাসে রোহিঙ্গা ঢল শুরুর পর প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে কক্সবাজারে যাচ্ছেন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। ভারত রোহিঙ্গাদের জন্য এ পর্যন্ত দুই দফায় মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের অবস্থান আগের চেয়ে অনেক বদলেছে। দেশটি বলছে, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়েই এই সংকটের সমাধান হবে। রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ সৃষ্টিতেও দেশটি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কাজ করছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, ভারতীয় হাইকমিশনারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে সংকটের মাত্রা সম্পর্কে ভারতের জানার আরো সুযোগ সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারতের কাছ থেকে আরো জোরালো উদ্যোগ প্রত্যাশা করে।

ইইউর সদস্য রাষ্ট্র এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সোয়ান মিক্সারের সঙ্গে গতকাল ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর বৈঠকেও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*