প্রাণের ৭১

কুমিল্লার ২১ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদে তিন বছর ধরে পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করছেন।

কুমিল্লার ২১ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদে তিন বছর ধরে পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করছেন। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ তৈরি করে তারা চাকরি নিয়েছে।

সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধানে তাদের সনদ জাল প্রমাণিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে তারা কনস্টেবল পদে চাকরি করছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলার পর অভিযুক্ত সদস্যরা কর্মস্থল ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুসারে কুমিল্লা জেলার স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে থেকে ৩২০ জনকে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের লক্ষ্যে নির্বাচিত করা হয়। তাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বেশ কয়েকজনকে নিয়োগ দেয়া হয়।

তাদের ইস্যু করা মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাইয়ের জন্য মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাইয়ে কুমিল্লা জেলার ২১ পুলিশ সদস্যের বাবা অথবা দাদা অথবা নানার মুক্তিযোদ্ধার সনদ ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়।

মিথ্যা তথ্য ও ভুয়া সনদ দাখিল করে চাকরি নেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ সদর দফতরকে অনুরোধ করা হয়। এ নিয়ে পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে কুমিল্লা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ প্রদানকারীরা হলেন- দেবিদ্বার উপজেলার গোপালনগর গ্রামের বাবুল ভুঁইয়ার ছেলে রিপন ভুঁইয়া, বুড়িচং উপজেলার বারেশ্বর গ্রামের খোরশেদ আলম ভুঁইয়ার ছেলে শাহ জালাল ভুঁইয়া, বুড়িচং উপজেলার পূর্ণমতি গ্রামের তারা মিয়ার ছেলে সোহাগ মিয়া, বি-পাড়া উপজেলার নাগাইশ গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে ইকবাল হোসেন, দেবিদ্বার উপজেলার ফুলতলি গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে এমরান হোসেন, বুড়িচং উপজেলার পূর্ণমতি গ্রামের আব্দুল ওহাবের ছেলে রাশেদ মিয়া।

তারা ইন্ডস্ট্রিয়াল পুলিশে কর্মরত। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জামপুর গ্রামের মমিন মিয়ার ছেলে কবির মিয়া, দেবিদ্বার উপজেলার ওয়াহেদপুর গ্রামের তফাজ্জল হোসেনের ছেলে জান্নাতুল ইসলাম, দেবিদ্বার উপজেলার ছোট শালঘর গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে আবুল হাসান।

তিনি চট্টগ্রাম জেলা পুলিশে কর্মরত। বুড়িচং উপজেলার হরিণধরা গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে আমজাদ হোসেন, একই উপজেলার বালীখাড়া গ্রামের মুমিনুল হকের ছেলে সাগর আহমেদ। তারা হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নে কর্মরত।

বি-পাড়া উপজেলার মহা-লক্ষ্মীপাড়া গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে কাইয়ুম হোসেন, আদর্শ সদর দক্ষিণ উপজেলার নলকুড়ি গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলাম, বুড়িচং উপজেলার খাড়াতাইয়া গ্রামের রেহান উদ্দিনের ছেলে জুয়েল রানা, আদর্শ সদর উপজেলার ঘিলাতলী গ্রামের জানে আলমের ছেলে জুয়েল হোসাইন, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাশিনগর গ্রামের হারুন অর-রশিদের ছেলে আরিফুল ইসলাম। তারা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পুলিশে কর্মরত।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মতিয়াতলী গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে আব্দুল আলিম, বি-পাড়া উপজেলার পূর্ব পুমকারা গ্রামের মফিজুল ইসলামের ছেলে আবু ইউসুফ আলী, বুড়িচং উপজেলার হরিপুর গ্রামের আব্দুল ওহাবের ছেলে শরিফুল ইসলাম, দেবিদ্বার উপজেলার জয়পুর গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে মাহমুদুল হাছান।

তারা ঢাকা জেলা পুলিশে কর্মরত। বুড়িচং উপজেলার হরিপুর গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে তানভীর হায়দার লিটন। তিনি নোয়াখালী জেলা পুলিশে কর্মরত।

জানা গেছে, পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে প্রতারকরা নিয়মিত সরকারি বেতন-ভাতা এবং রেশন সামগ্রীসহ অন্যান্য সুবিধা নিচ্ছে। সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ার পর পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে ২১ সদস্যের বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। এ মামলার খবরে কয়েকজন কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছে বলে জানা গেছে।

মামলার বাদী কুমিল্লা জেলা পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা (আরও-১) জয়নাল আবেদীন বলেন, জেলার ২১ পুলিশ সদস্যের মুক্তিযোদ্ধা সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, যারা মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ ব্যবহার ও প্রতারণা করে পুলিশে চাকরি নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*