প্রাণের ৭১

স্মার্টফোন যারা অনেক ক্ষণ ধরে ব্যবহার করেন তাদের মাইয়োপিয়া বা চোখের স্বল্প-দৃষ্টিতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: ক্রিং ক্রিং স্বরে বেজে ওঠা টেলিফোন যুগ পেরিয়ে এলো ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট ফোনের যুগ। তারপর সে ফোনে যুক্ত হলো গান শোনা,ছবি তোলার সুবিধা আরো কত কি! সেই মোবাইলও আজ পুরনো হয়ে গিয়েছে নিত্যনতুন স্মার্টফোনের সামনে। প্রতিদিনই বাজারে আসছে নতুন নতুন মডেলের স্মার্ট ফোন। সাথে থাকছে নিত্যনতুন ফিচার। আর সেই নতুন নতুন ফিচার আর এপ্লিকেশনের জন্য স্মার্টফোন এখন প্রায় সবার হাতে হাতে। আর যাদের হাতে স্মার্টফোন রয়েছে তাদের দিনের একটি বড় অংশ যাচ্ছে এই ফোনের পেছনে।

স্মার্টফোন আমাদের জীবনকে অনেকটা সহজতর করেছে। এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এর একটি পিলে চমকানোর দিকের কথাও উঠে এসেছে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায়। স্মার্টফোন যারা অনেক ক্ষণ ধরে ব্যবহার করেন তাদের মাইয়োপিয়া বা চোখের স্বল্প-দৃষ্টিতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যারা মাইয়োপিয়াতে আক্রান্ত হন তাদের দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হয়। তবে চোখের সমস্যা বেশি হলে অনেকের ক্ষেত্রে দূরের জিনিসের সাথে সাথে কাছের জিনিস দেখতেও সমস্যা হতে পারে।

ইংল্যান্ডে ফোকাস হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড এলামবি এই বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন ধরেই গবেষণা করছিলেন। তিনি জানান ১৯৯৭ সালে স্মার্টফোনের উদ্ভাবনের পর থেকে স্বল্প-দৃষ্টি বা মাইয়োপিয়াতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গিয়েছে। এক হিসেবে দেখা গিয়েছে,নতুন প্রজন্মের যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন তাদের মাঝে মাইয়োপিয়াতে আক্রান্ত রোগীর হার ৩৫ ভাগ বেড়ে গিয়েছে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০ বছরের মাঝে এই হার ৫০ শতাংশে গিয়ে ঠেকবে।

কিন্তু কেন এরকম হচ্ছে? গবেষণায় দেখা গিয়েছে ইংল্যান্ডের তরুণ প্রজন্মের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দিনে দুই ঘন্টা করে এক নাগাড়ে স্মার্টফোন ব্যবহার করে। তারা ক্ষেত্রবিশেষে চোখ থেকে মাত্র ৩০ সেমি দূরে রেখে ফোন ব্যবহার করে। অনেকের ক্ষেত্রে তা ১৮ সেমি দূরত্বেরও কম। এর সাথে যদি যোগ করা হয় কম্পিউটার,ল্যাপ্টপ , ট্যাব ও টিভির প্রোগ্রাম দেখার বিষয়টি তবে দেখা যাবে তরুণরা দিনের একটি বড় সময় জুড়ে এক নাগাড়ে কোন না কোন স্ক্রিণের দিকে তাকিয়ে আছে।

মাইয়োপিয়ার নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ একটি জিন দায়ী। স্বাভাবিকভাবে জিনটি এমনভাবে কাজ করে যাতে একজন মানুষ ২০ বছর পার করে ফেলার পর আর মাইয়োপিয়াতে আক্রান্ত না হয়। কিন্তু এভাবে এক নাগাড়ে স্মার্টফোনের স্ক্রিণের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে সেই জিনটি তার কার্যক্ষমতা হারাতে শুরু করে। ফলে আজকাল অনেক মানুষকেই ত্রিশ কিংবা চল্লিশ বছরেও মাইয়োপিয়াতে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

২০১৪ সালের মধ্যে ১২ থেকে ১৭ বয়সী বাচ্চারা হবে স্মার্টফোনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহারকারী। প্রথমে থাকবে যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়স তারা। তাই বোঝাই যাচ্ছে অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে মাইয়োপিয়াতে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি তাদেরই সবচেয়ে বেশি।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন এই উপসর্গের নাম দেয়া হয়েছে Screen-sightedness। তাই যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন তারা নিজেদের চোখ ভালো রাখার স্বার্থেই স্মার্টফোন ব্যবহারে একটু সচেতন হোন। প্রয়োজন ছাড়া দীর্ঘক্ষণ স্মার্টফোনের স্ক্রিণের দিকে তাকিয়ে থাকা থেকে বিরত থাকুন। রক্ষা করুন মানুষকে দেয়া প্রকৃতির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদের একটি চোখের দৃষ্টিকে।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*