বিধান বাবুদের স্বপ্নগুলো- রাজীব কুমার দাশ,ইন্সপেক্টর,বাংলাদেশ পুলিশ
রাজীব কুমার দাশ
বিধান বাবুদের স্বপ্নগুলো ফিকে হয়ে যায়,কোনোদিনই পূরন হবার নয়।স্কুল কমিটি, পরীক্ষক,প্রধান শিক্ষকের প্রতি ধাপগুলো পেরিয়ে এক বুক সোনালী দিনের আশায় শিক্ষকতার মহান পেশায় বিধান বাবুদের শুরু।একটাই স্বপ্ন,বিদ্যালয় জাতীয়করণ কিংবা এমপিও ভুক্তির আশা।আশার ঘাণি টানতে টানতে একসময় জীবনের কালবেলা শুরু। বউ বাচ্চা, মা, বাবা আত্মীয় স্বজনদের দৈনন্দিন চাহিদাপুরণে হতাশার শুরু।মধ্যবিত্তদের কি যাতনা, একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানে! না পারে বলতে না পারে সইতে। সরকারী অন্য চাকরীর বয়স তো কবেই শেষ !
হতাশার চরম প্রহর শুরু।শুভাকাংখি,আতœীয়স্বজন, স্ত্রী, সন্তান,পিতা মাতার কাংখিত প্রত্যাশার মাত্রা শূন্যের কোটায়! ধার দেনার টানাটানিতে প্রাণ ওষ্ঠাগত,মাস শেষে মুদি দোকানির দরের চক্রবৃদ্ধির চোখরাঙানি,টিপ্পনি,টেনে-টুনে মাস পার! স্ত্রী, সন্তান পিতা মাতার নিত্য প্রয়োজনীয় আবদার ও এক সময়ে আর বিধান বাবুরা হাজারো চেষ্টায় পুরণ করতে পারেনা।ধার, দেনার যাঁতাকল আর পার হয়ে ওঠেনা। অনিদ্রা,টেনশনে জীবনমানের সূচক ক্রমশ:নিম্নমুখী। এরই মধ্যে ডায়াবেটিকস কিংবা হাইপারটেনশন, কিংবা হাইপ্রেশার! তবু ও বোর্ড কর্তা,মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের ম্রিয়মান আশ্বাস হবে পরিবার পরিজন,মুদি দোকানি,প্রতিবেশীরা বিধান বাবুদের আশার ফুলঝুঁড়িতে আর বিশ্বাস করেনা।সবাই বিধান বাবুদের দোষ খুঁজে বেড়ায়।বিধান বাবু অযোগ্য ছিলো,কিংবা অন্য কোনো সমস্যা আছে।
অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আশার শেষ বাতিটা যখন নিভলো,চারিদিকে শুধু অন্ধকার! পাওনাদারদের তর্জন,গর্জন পরিবার পরিজনদের হতাশা,ছোট ছেলে মেয়েদের কান্না,শত্রুদের বিদ্রুুপের টিপ্পনি,হাসি আরো কত কি! বিধান বাবুরা সত্যই ধরে নেয়,সে সবার কাছে অযোগ্য অপদার্থ! না হলে সবারটা হলে তারটা হলো না কেনো? জীবন প্রশ্নের কোনো উত্তর পায়না! চারিদিকে শুধু হতাশার চিৎকার! আমি অপদার্থ! আমার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই?বিধান বাবুরা সমাজের কাছে রাষ্ট্রের কাছে কিছু প্রশ্ন রেখে একদিন হতাশার নীল কষ্টে পত্রিকার ছাপা হয়ে পৃথিবী নামক গ্রহ হতে মানুষ যেন না হতে হয়, বিধাতার কাছে সে আকুলতায় হারিয়ে যায়।
প্রকাশ থাকে যে, ঘটনাটা সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ঝড়গাছা গ্রামের। একজন মেধা গড়ার কারিগরের আত্মহননের নিষ্ঠুর গল্প।পত্রিকা পড়তে গিয়ে হঠাৎ ই চোখে পড়লো এ কাহীনি।কীটনাশক খেয়ে আত্মহনন করে নীরবে চলে গেলেন না ফেরার দেশে সেনেরগাঁতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক বিধান চন্দ্র ঘোষ।তার বিদ্যালয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায় ২০০২ সালের ২৩ জুন যোগদানের পর থেকে তিনি সরকারি বিধি মোতাবেক বিদ্যালয় থেকে বেতন ভাতাদি পেয়ে আসছিলেন।সম্প্রতি তার নাম বিদ্যালয়ের মাসিক বেতন তালিকা থেকে বাদ পড়ে।এ নিয়ে বিদ্যালয় কতৃপক্ষ মন্ত্রনালয়ে যোগেেযাগ করে ্ও কোন সন্তোষজনক উত্তর পাচ্ছিলেন না।ফলে বেশ ক’মাস তিনি বেতন ছাড়াই শিক্ষকতা করে আসছিলেন।
রাজীব কুমার দাশ : ইন্সপেক্টর,বাংলাদেশ পুলিশ
গাজীপুর জেলা।মোবাইল ০১৭১৫০২৭৪০৭