দেশে এখনো ২ কোটি ৪৪ লাখ মানুষ অতি দরিদ্র।
বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্যের হার ১৫ দশমিক ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। এরপর এখনও ২ কোটি ৪৪ লাখ মানুষ চরম দরিদ্র। তবে উচ্চ দারিদ্র্যের হার কমানোর এ অগ্রগতি অর্জনে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্ব দারিদ্র্য নিরসন দিবস উপলক্ষে বুধবার রাতে প্রকাশিত ‘প্রভাটি অ্যান্ড শেয়ারড প্রসপারিটি ২০১৮ : পিসিং টুগেদার দ্য প্রভার্টি পাজল’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৫ বছরে বিশ্বে শত কোটি মানুষ দারিদ্র্য জয় করেছে। দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে ১০ শতাংশে। এ অবস্থায় কিছু অঞ্চলে দারিদ্র্য বৃদ্ধির প্রবণতা ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলোতে দারিদ্র্যের হার বাড়ছে।
বিশ্বের ৭৩ কোটি ৫৯ লাখ মানুষ এখনও দরিদ্র্য সীমার নিচে। বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনের গতিও কমে এসেছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে অতি দারিদ্র্য দূর করার লক্ষ্য পূরণে সংশয় প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক।
এতে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। চলতি বছরের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৮ দশমিক ৬০ শতাংশে নেমে আসবে বলে ধারণা দেয়া হয়েছিল সংস্থার পক্ষ থেকে।
তবে এ লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। তবে ২০২০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৯ শতাংশে নেমে আসবে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে। দারিদ্র্য হ্রাসের গতি কমে আসায় উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিশ্বে এখন চরম দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অতীতের যে কোনো সময়ের চাইতে কম।
বর্তমান মানব প্রজন্মের এটা অনেক বড় অর্জন। ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য দূর করতে হলে অনেক বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগে মানব সম্পদ উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এখনও দারিদ্র্য সীমায় থাকা মানুষের উন্নয়নে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের অর্ধেকের বেশি দেশে দারিদ্র্যের হার এখন ৩ শতাংশের কম। ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর দারিদ্র্যের হার ১ শতাংশ হারে কমেছে। ফলে ৩৬ শতাংশ থেকে অতি দরিদ্রের হার নেমেছে ১০ শতাংশে। তবে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ২ বছরে দারিদ্র্য কমেছে মাত্র ১ শতাংশ। মূলত দক্ষিণ এশিয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্য সীমা অতিক্রম করায় বৈশ্বিক দারিদ্র্য হার কমছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে পরবর্তী ২ বছরে বিশ্বে অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেছে ৬ কোটি ৮৩ লাখ। এ সময়ে বিশ্বে ৮০ কোটি ৪২ লাখ থেকে কমে চরম দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৩ কোটি ৫৯ লাখে।
এ সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ২৭ কোটি ৪৫ লাখ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২১ কোটি ৬৪ লাখে। ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ থেকে কমে অতি দারিদ্র্যের হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশে। অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ায় দুই বছরে চরম দারিদ্র্য জয় করেছে ৫ কোটি ৮১ লাখ মানুষ। এর ৮৫ শতাংশের বেশি দক্ষিণ এশিয়ায়।
এ অঞ্চলের বাইরে দারিদ্র্য জয় করা মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিশ্বের অর্ধেকের বেশি দরিদ্র মানুষের বাস সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে। অঞ্চলটির ৪১ দশমিক ১০ শতাংশ মানুষ এখন অতি দরিদ্র। এর পরিমাণ ৪১ কোটি ৩৩ লাখ।
২০১৩ সালে সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে দরিদ্রের সংখ্যা ছিল ৪০ কোটি ৫১ লাখ। শতকরা হিসাবে দারিদ্র্যের হার সাড়ে ৪২ শতাংশ থেকে সামান্য কমলেও মোট সংখ্যা বেড়েছে। ২০৩০ সালে বিশ্বের প্রতি ১০ জন দরিদ্র মানুষের ৯ জনেরই আবাস হবে এ অঞ্চলে। ওই পর্যন্ত সেখানে দারিদ্র্যের হার থাকবে দুই অঙ্কে।
দারিদ্র্যের মাত্রায় পরিবর্তন : দারিদ্র্য হারের মাত্রায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে বিশ্বব্যাংক। বর্তমানে দৈনিক ১ দশমিক ৯০ মার্কিন ডলার আয় হলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দারিদ্র্যসীমার বাইরে বলা হয়ে থাকে। আগামীতে নিু-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য দারিদ্র্য সীমা ধরা হচ্ছে ৩ দশমিক ২০ ডলার। আর উচ্চমধ্যবিত্ত দেশগুলোর জন্য দারিদ্র্য সীমা হবে সাড়ে ৫ ডলার। দারিদ্র্যের মানদণ্ডের আয়সীমা বাড়িয়ে দেয়ায় দারিদ্র্য কমানো কঠিন হবে। এখন বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষের দৈনিক আয় সাড়ে ৫ ডলারের কম।