সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে স্বীকার করে নিয়েছে সৌদি আরব।
তুরস্কের ইস্তাম্বুল কসন্যুলেটেই সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে স্বীকার করে নিয়েছে সৌদি আরব। ঘটনার ১৭ দিন পর প্রথমবারের মতো দেশটি জামাল খাসোগির যে মৃত্যু হয়েছে, সে কথা স্বীকার করল। কনস্যুলেটের মধ্যে ধস্তাধস্তির পর তিনি নিহত হয়েছেন বলে দেশটির রাষ্ট্রীয টেলিভিশনের সংবাদে উল্লেখ করা হয়। সাংবাদিক খাসোগি সৌদির ক্ষমতাবান যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের একজন কঠোর সমালোচক ছিলেন।
এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্তার অভিযোগে গোয়েন্দা সংস্থার উপ-প্রধান আহমদ আল আসিরি ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের অন্যতম দেহরক্ষি সৌদ আল কাতানিকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলেও জানায় সৌদি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ঘটনাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে সৌদি যে তাদের ‘গুরুত্বপূর্ণ মিত্র’ সেকথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
সৌদি আরবের পাবলিক প্রসিকিউটরকে উদ্বৃত করে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সংবাদে বলা হয়, খাসোগি ও সেখানে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। যার ফলশ্রুতিতে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এখনও এই ঘটনায় তদন্ত হচ্ছে। ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে এর মধ্যেই ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বরখাস্ত হওয়া মেজর জেনারেল আহমেদ আল আসিরি ইয়েমেন যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ একজন মুখপাত্র। ২০১৭ সালে তিনি ইযেমেনের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের হামলার পক্ষে সাফাই গেয়েছিলেন।
এদিকে গোয়েন্দা সংস্থাকে ঢেলে সাজাতে একটি মন্ত্রিপরিষদ কমিটি করেছেন সৌদি বাদশাহ সালমান। যার প্রধান করা হয়েছে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে।
ট্রাম্প বলেন, জড়িতদের গ্রেফতার গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ধাপ। তাছাড়া এই ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তিনি সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা এক্ষেত্রে একটা পদক্ষেপ হতে পারে। তবে এমন পদক্ষেপ নেয়া হলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে।
এদিকে হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করা হয়, এ ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন খুব শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।
সাংবাদিক জামাল খাসোগি সবশেষ ২ অক্টোবর বিবাহ সংক্রান্ত কাগজপত্র আনতে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করেন। এরপর তার কোনও খোঁজ মেলেনি। ওয়াশিংটন পোস্টের নিয়মিত কলাম লেখক খাসোগি তুর্কি এক নারীকে বিবাহ করতে চেয়েছিলেন। কনস্যুলেটের বাইরে তাকে রেখে গিয়েছিলেন খাসোগি। পরে ওই নারীই তুরস্কের কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন।
সেই থেকে জামাল খাসোগিকে কনস্যুলেটের ভিতরে হত্যার অভিযোগ করে আসছে তুরস্ক। তবে সৌদি আরব বরাবরই সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এর মধ্যেই কনস্যুলেটের ভিতরে তুর্কি পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। ইস্তাম্বুল শহরের পার্শ্ববর্তী বনভুমি বা কৃষি জমিতে তার দেহের অংশ বিশেষ ফেলে দেয়া হতে পারে বলে সন্দেহ করে তুরস্ক। এ কারণে সেখানেও তল্লাশী চালায়।
ঘটনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সৌদি আরব ও তুরস্ক সফরে পাঠান। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সফর শেষ করে দেশে ফেরার তিন দিনের মধ্যেই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে নিল সৌদি কর্তৃপক্ষ।