হেপাজত ইসলাম প্রধানমন্ত্রীকে ৫ নভেম্বর গণসংবর্ধনা দেবে।
কওমি মাদ্রাসাগুলোর ৬ বোর্ড নিয়ে গড়া ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কাওমিয়া বাংলাদেশ’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গণসংবর্ধনা দিচ্ছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
৫ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ আয়োজন করা হয়েছে। ওই সমাবেশে সারা দেশ থেকে কওমিপন্থী কয়েক লাখ লোকের সমাগম করারও প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি সমমান দিয়ে জাতীয় সংসদে বিল পাস করায় এ সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং দাওয়াত পত্র তার হাতে তুলে দেয়। সদস্যদের মধ্যে ছিলেন ২০ দলীয় জোটের একাংশ ও ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি মাওলানা ফয়জুল্লাহ, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, হেফাজতের মজলিসে শূরা সদস্য মুফতি মাওলানা জসিম উদ্দীন, জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য মুফতি ওয়াক্কাস, ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতি নুরুল আমিন, হেফাজত আমীরের ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী, হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে হেফাজত আমীরের কী কথা হয়েছিল জানতে চাইলে প্রতিনিধি দলের এক সদস্য যুগান্তরকে জানান, সংবর্ধনা ও কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মার্স্টাস ডিগ্রি সমমান স্বীকৃতি প্রসঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়। সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের মান দেয়া সরকারের দায়িত্ব এবং পাওয়াটা কওমিদের অধিকার বলে জানিয়েছেন।
হেফাজতের দুর্গ বলে খ্যাত দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হাইয়াতুল উলইয়ার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে গণসংবর্ধনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। হাইয়াতুল উলইয়ার কো-চেয়ারম্যান মাওলানা আশরাফ আলীকে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয়েছিল ১৫ সদস্যের বাস্তবায়ন কমিটি।
সংবর্ধনার বিষয়ে জানার জন্য হেফাজত আমীর ও আল-হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বক্তব্য জানার জন্য হাটহাজারীতে আল জামেয়াতুল ইসলামিয়া মাদ্রাসায় যাওয়া হয়। এ সময় তিনি (আল্লামা শফী) বিশ্রামে রয়েছেন বলে যুগান্তর প্রতিবেদককে ফিরিয়ে দেন তার একান্ত সচিব ও হেফাজত নেতা মাওলানা শফিউল আলম।
তবে হেফাজতে ইসলামের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মুফতি হারুন ইজহার সংবর্ধনার বিষয়ে বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাওরায়ে হাদিসকে যে মাস্টার্স সমমান স্বীকৃতি দিয়েছেন এর জন্য অবশ্যই তিনি কৃতিত্বের দাবিদার। এ জন্য ঢাকায় একটি হলে তাকে সংবর্ধনা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল দাওয়াতি কনসেপ্ট থেকে। কিন্তু পরে গোপন সমঝোতায় কোনো কোনো নেতা সোহরাওয়ার্দ্দী উদ্যানে নিয়ে গেছেন সংবর্ধনার ভেন্যু। আমি মনে করি এটা একটা নির্বাচনী গেম।’
সংবর্ধনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মহাসচিব এমএ মতিন যুগান্তরকে বলেন, ‘কওমিরাই বর্তমান সরকারের পতন ঘটাতে শাপলা চত্বরে জড়ো হয়েছিল। এ সরকারকে নাস্তিক ও ব্লগারদের পৃষ্ঠপোষক বলে ফেনা তুলেছিল। তারাই প্রধানমন্ত্রীকে এখন সংবর্ধনা দিচ্ছে। রাজনৈতিক ফায়দা ও নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্যই তারা এমনটি করছে।’