প্রাণের ৭১

মানবতাবিরোধী অপরাধে ২ রাজাকারের রায় সোমবার

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে হবিগঞ্জের লাখাই থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. লিয়াকত আলী এবং কিশোরগঞ্জের আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করা হবে সোমবার।

আসামি দুজন বর্তমানে পালাতক রয়েছেন।

রবিবার বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন।

এর আগে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৬ আগস্ট মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছিল ট্রাইব্যুনাল।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী ও আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন ও লুটপাটের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সাত ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ পায় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১৮ মে দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হওয়ায় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

একই বছরের ১ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে ১৭ জন সাক্ষ্য দেন।

তদন্ত সংস্থার তথ্য অনুসারে, লিয়াকত আলী একাত্তরে মুসলিম লীগের সদস্য হিসেবে ফান্দাউক ইউনিয়নে রাজাকারের দায়িত্বে ছিলেন। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর দেশে আসেন তিনি। ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন লিয়াকত। এর আগে ২০১০ সালে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলে পালিয়ে যান তিনি।

অন্যদিকে, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থানার আলীনগর গ্রামের আমিনুল ইসলাম ১৯৭০ সালে ভৈরবের হাজী হাসমত আলী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় ইসলামী ছাত্র সংঘের কলেজ শাখার সভাপতি হন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ভৈরবে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে তিনি অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন এবং পরে এলাকায় ফিরে আল বদর বাহিনী গঠন করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আটক হয়েছিলেন আমিনুল। ১৯৭২ সালে তার বিরুদ্ধে দালাল আইনে তিনটি মামলাও হয়েছিল, যাতে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। ১৯৮১ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তিনি ‘আমি আল বদর বলেছি’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। ওই বইয়ে তার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগের আত্মস্বীকৃতি প্রকাশ পায়।

সাত অভিযোগ: প্রথম, ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর লিয়াকত ও আমিনুল পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে লাখাই থানার কৃষ্ণপুর গ্রামে গণহত্যা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটান। সেই সাথে ওই গ্রামের নৃপেণ রায়ের বাড়িতে রাধিকা মোহন রায় ও সুনীল শর্মাসহ ৪৩ জন হিন্দুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। দ্বিতীয় অভিযোগ, চণ্ডিপুর গ্রামে গণহত্যা ও লুটপাট। তৃতীয় অভিযোগ, গদাইনগর গ্রামে গণহত্যা ও লুটপাট। চতুর্থ অভিযোগ, অষ্টগ্রাম থানার সদানগর গ্রামে শ্মশান ঘাটে হত্যা। পঞ্চম অভিযোগ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক গ্রামের বাচ্চু মিয়াকে অপহরণ এবং রঙ্গু মিয়াকে অপহরণের পর হত্যা। ষষ্ঠ অভিযোগ, অষ্টগ্রাম থানার সাবিয়ানগর গ্রামে চৌধুরী বাড়িতে হত্যা এবং সপ্তম অভিযোগ, সাবিয়ানগর গ্রামে খাঁ বাড়িতে হত্যা।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*