সমাজে শান্তি বজায় রাখতে আলেমদের ভূমিকা পালনের আহবান প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজে শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে আলেম-ওলামাদের ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়ে বলেছেন, তাঁর সরকার কোনভাবেই ইসলাম এবং রাসুল (সা:) এর বিরুদ্ধে কোন ধরনের অপপ্রচার বরদাশত করবে না।
প্রধানমন্ত্রী ইসলামকে শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে বলেন, ‘গুটিকতক লোক ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে আজকে সারাবিশ্বে ইসলাম ধর্মকে বদনাম দিচ্ছে। অথচ, ইসলাম কখনও সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না।’
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পুণরোল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাংলাদেশে কোন জঙ্গিবাদের স্থান হবে না। সন্ত্রাসের স্থান হবে না। মাদকের স্থান হবে না। দুর্নীতির স্থান হবে না। বাংলাদেশ হবে একটা শান্তিপূর্ণ, উন্নত, সমৃদ্ধশালী দেশ।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে কওমী মাদ্রাসার আলেমদেও শোকরানা মাহফিলে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
কওমী মাদ্রাসা শিক্ষার সর্ব্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমানের স্বীকৃতি দিয়ে বর্তমান সরকার জাতীয় সংসদে আইন পাশ করায় ‘হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমী বাংলাদেশ’ এই শোকরানা মাহফিলের আয়োজন করে।
কোন আন্তর্জাতিক ফোরামে কেউ ‘ইসলামি টেররিষ্ট’ বললে তিনি তীব্র প্রতিবাদ করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ ইসলাম সন্ত্রাস লালন করে না, আর সন্ত্রাসীর কোন ধর্ম নেই, দেশ নাই, সমাজ নাই, তাদের পরিচয় এই যে, সে তারা সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা প্রকৃত ইসলামে বিশ্বাস করে তারা কখনও সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী হতে পারে না।’
আল্লাহতায়ালা আমাদের অনেক নেয়ামত দিয়েছেন এবং তা দিয়েই আমরা বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই উল্লেখ করে সরকার প্রধান সোশ্যাল মিডিয়ার নানা ধরনের অপপ্রচার এবং গুজবে কান না দেওয়ার জন্য সকলর প্রতি আহবান জানিয়ে যে কোন বিষয়ে প্রকৃত সত্য যাচাই করে দেখার পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অপপ্রচার কেউ বিশ্বাস করবেন না। ইতোমধ্যে এই অপপ্রচার প্রতিরোধে আমরা সাইবার ক্রাইম আইন তৈরী করেছি। কেউ যদি কোন ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত হয় তাহলে সাখে সাথে সেই আইনদ্বারা তাদের গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ধর্ম ইসলাম এবং নবী করিম (সা:) সম্পর্কে কেউ কোন কটু কথা বললে সেই আইন দ্বারাই তার বিচার হবে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় আইন কাউকে নিজেদের হাতে তুলে না নেওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আইন নিজেদের হাতে তুলে নেব না, আইন দ্বারাই তাদের বিচার করে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দেব যাতে কখনও তারা এধরনের অপপ্রচার চালাতে না পারে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকা উন্নয়নের পূর্বশর্ত উল্লেখ করে বলেন, দেশের শান্তি বিঘিœত হোক তা আমরা চাই না, দেশে শান্তি বজায় থাকলেই উন্নতি হবে। আর উন্নতি বজায় থাকলে সকলেই লাভবান হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় এই পাক-ভারত উপমহাদেশের মুসলমানদের শিক্ষা গ্রহণের একমাত্র ক্ষেত্রই ছিল এই কওমী মাদ্রাসা। এই কওমী মাদ্রাসার মধ্যদিয়েই মুসলমানদের শিক্ষা গ্রহণের শুরু।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন যারা শুরু করেছিলেন তাদের হাত ধরেই এই কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার প্রচলন। যাদের আমরা সবসময় সম্মান করি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে কওমী মাদ্রাসার যে স্বীকৃতি এটা শুধু স্বীকৃতি নয়, এদেশের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে কওমী মাদ্রাসায় শিক্ষা গ্রহণ করছে, শুধু তাই নয়, সব থেকে বড় কাজ আপনারা যেটা করছেন- যারা এতিম হয়ে যাচ্ছে, যারা হতদরিদ্র, যাদের কোথাও যাবার জায়গা নাই, আপনারা তাঁদেরকে আশ্রয় দেন। খাদ্য দেন, শিক্ষা দেন। এতিমকে আশ্রয় দিচ্ছেন, এরথেকে বড় কাজ আর কি হতে পারে। কাজেই সেখানে আপনাদের স্বীকৃতি দেব না এটাতো কখনও হতে পারে না।’
তিনি বলেন, তাঁর সরকার যে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে সেখানে ধর্মীয় শিক্ষাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কারণ, তিনি মনে করেন একটা শিক্ষা তখনই পুর্ণাঙ্গ হয় যখন এরসঙ্গে ধর্মীয় শিক্ষাও গ্রহণ করা হয়।
লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে শিক্ষা গ্রহণ করছে সেখানে তাঁদের ডিগ্রীর যদি স্বীকৃতি না থাকে তাহলে তারা কোথায় যাবে, কি করে চলবে, এই প্রশ্ন উত্থাপন করে তিনি বলেন, তারপরে ‘হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমী বাংলাদেশ’র পক্ষ থেকে যখন বলা হলো দাওরায়ে হাদিস মাষ্টার্স ডিগ্রীর যেন সমমর্যাদা পায়, আমরা কিন্তু সেটা করে দিলাম পার্লামেন্টে আইন পাশ করে। কারণ, আইন পাশ না করলে এটা বাধ্যবাধকতা থাকে না। তিনি বলেন, আর কেউ ক্ষমতায় এলে ’৭৭ সালের মত যাতে এটা আর কেউ বন্ধ করতে না পারে সেজন্য আমরা আইন পাশ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী এসময় এই শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, আপনারা এমনভাবে কাজ করবেন যাতে এই মাদ্রাসা থেকে যারা শিক্ষা নেয় তাঁরা যেমন মাষ্টার্স ডিগ্রীর স্বীকৃতি পেলেন তেমনি তারা দেশ ও জাতির জন্য যেন কাজ করতে পারেন।
তিনি বলেন, এই দেশকে যেন আমরা উন্নত করতে পারি। এই দেশে আর একটা মানুষও যাতে গরিব না থাকে, ক্ষুধার জ্বালায় এবং রোগেভুগে যেন কেউ কষ্ট না পায়।
হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমী বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান এবং হেফাজত-ই-ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমেদ শফি মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ এবং প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমী বাংলাদেশের সহ-সভাপতি আল্লামা আশরাফ আলী, মওলানা আজহার আলী আনোয়ার, আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসুদ, মওলানা রুহুল আমিন, আবু তাহের নদভী, মওলানা আহমাদুর রহমানী, মওলানা আব্দুল কুদ্দুসও বক্তৃতা করেন।
শোকরানা মাহফিল যোগদান করতে পারায় শেখ হাসিনা প্রধান অতিথির ভাষণে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন ।
তিনি বলেন, ‘যারা দীন ইসলামের খেদমত করছেন তাদের মধ্যে উপস্থিত হতে পারাটা সৌভাগ্যের বিষয়। আমাকে যখন আল্লামা শফী সাহেব বললেন যে এই বিল আমরা পার্লামেন্টে পাস করেছি, তিনি একটি সংবর্ধনার আয়োজন করবেন। তখন আমি বললাম, সংবর্ধনা আমার জন্য নয়, বরং এটা হবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করার মাধ্যমে।’
স্বাধীনতার পর ইসলামের প্রসারে জাতির পিতার পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এদেশে ইসলামের প্রসারে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে যান, টঙ্গীতে যে বিশ্ব ইজতেমা হয় সেজন্য জায়গাটিও জাতির পিতাই বরাদ্দ দিয়ে যান এবং বাংলাদেশে যাতে বিশ্বইজতেমা হতে পারে আন্তর্জাতিক ভাবে তিনিই এটা আদায় করে নিয়ে এসেছিলেন।
তিনি বলেন, ইসলামিক সম্মেলন ‘ওআইসি’র সদস্য পদও পেয়েছিলাম জাতির পিতার উদ্যোগে এবং জাতির পিতা একটি জাহাজ ক্রয় করে হাজীদের স্বল্প খরচে হজে প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরই কন্যা হিসেবে এদেশের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করা এবং বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা এবং তাঁদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করাকে আমি আমার কর্তব্য বলে মনে করি। আর সেই দায়িত্ববোধ থেকেই দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা আমাদেরকে সবসময় এই শিক্ষাই দিয়েছেন যে, মানুষের সেব করো। আর সাধারণভাবে জীবন যাপন করো।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ’৭৫ এর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে বলেন, ‘মাত্র ১৫ দিন আগে বিদেশ যাবার আগে অনেক কেঁদেছিলাম। আর ১৫ দিন পরেই শুনি আমাদের আর কেউ নাই আমরা এতিম, নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে গেছি।’
তিনি বলেন, তখন যারা ক্ষমতা দখল করেছিল তারা আমাদের দেশে পর্যন্ত ফিরতে দেয়নি। ৬টা বছর বিদেশে রিফিউজির মত থাকতে হয়েছে। আর আমার বাবাতো সৎপথে জীবন যাপন করতেন কাজেই তিনিতো আর দেশে-বিদেশে পয়সা বানান নাই যে, আমরা সেখানে আরাম আয়েশে থাকবো। আমাদেরকে কষ্ট করে থাকতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ঘাতকচক্র ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে কেবল হত্যাই করে নাই ’৭৭ সালে এই কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতিটা বন্ধ করে দেয়, বাতিল করে দেয়।’
তিনি ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দেশে ফিরে আসার প্রেক্ষাপট স্মরণ করে বলেন, তখন খুনীরা অবাধে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। আর আমি খুনের বিচারও চাইতে পারিনি, কারণ, আইন করে বিচার চাওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমি কোথায় থাকবো, কি খাবো, কিছুই জানি না, কেবল আল্লাহর ওপর ভরসা করেই আমি দেশে চলে এসেছিলাম। আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে কোনরকম কষ্ট করে থেকেছি। আর দেশের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি। কারণ, আমার বাবা এদেশ স্বাধীন করেছিলেন।
স্মৃতিচারণে সেই দুঃসময়ের উল্লেখ করে তিনি অরো বলেন, ‘সবসময় আমি একটা কথাই বলতাম, যে কথা বাবার কাছ থেকেই শিখেছিলাম- একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করবে না।’
দেশে ফেরার পর তাঁর ওপর বারবার হত্যা প্রচেষ্টার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এরপর বারবার গ্রেনেড হামলা, গুলি, বোমা হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা থেকে কারবার যে বেঁচে গেছি মনে হয় এটা আল্লাহর কোন ইশারা। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন যেন মানুষের সেবা ও কল্যাণ করে যেতে পারি।’
তিনি এ সময় তাঁর সরকারের সমস্ত উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলো মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে কবুল হবার আরজি পেশ করে মানুষের কল্যাণে যেন এভাবেই কাজ করে যেতে পারেন, সেই প্রত্যাশা করেন।
সরকার প্রধান ইসলামের প্রসারে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, আমরা ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য ট্রাস্ট করে দিয়েছি। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি নিরক্ষরতা মুক্ত করার অংশ হিসেবে মসজিদ ভিত্তিক উপআনুষ্ঠানিক শিশু ও গণশিক্ষার ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রদানকারিদের জন্য ভাতার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
এরজন্য ৮০ হাজার আলেম-ওলামার কর্মসংস্থান হয়েছে, বলেন তিনি।
তিনি এ সময় তাঁর সরকারের সারাদেশের উপজেলা পর্যায়ে ৫৬০টি মডেল মসজিট কাম ইসলামিক কালচারাল সেন্টার প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগের প্রসংগ তুলে ধরে বলেন, এটি দেশীয় অর্থায়নে প্রথমে তিনি করার উদ্যোগ নিলেও তাঁর সাম্প্রতিক সৌদি আরব সফরের সময় সৌদি বাদশাহ এই প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দের আশ্বাস দিয়েছেন ।
তিনি বলেন, ‘দুটি পবিত্র মসজিদের জিম্মাদার সৌদি বাদশাহ এই মসজিদ নির্মাণে আমাদের পাশে থাকবেন এবং সহযোগিতা করবেন এবং এজন্য একটি টিমও তিনি বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সৌন্দর্য বৃদ্ধি তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, তিনি যখন প্রথমবার ’৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হন তখনই সৌদি আরবের আর্থিক সহযোগিতায় এই প্রকল্প গ্রহণ করলেও পরে বিএনপি-জামাত সরকার এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয় এবং পরে তিনি ২০০৮ সালে পুণরায় ক্ষমতায় এসে আল্লাহর রহমতে এই প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, ‘একদিকে মনে হয় ভালই হয়েছে এটা মনে হয় আল্লাহরই ইচ্ছা আমি দ্বিতীয়বার যখন ক্ষমতায় আসি তখন এই মসজিদের কাজ সম্পন্ন করতে পারি।’
দ্বীনি শিক্ষার প্রসারে তাঁর সরকারের আরবি ইসলামি বিশ্বদ্যিালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আলেম-ওলামাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা আপনাদের কাছে দোয়া চাই, দোয়া করবেন। কারণ, আমরা সবসময় নবী করিম (সা:) এর পথ অনুসরণ করে চলি। কারণ, তিনি আমাদের শিখিয়েছেন ইসলাম ধর্মের মূল কথাই হচ্ছে হচ্ছে শান্তি, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা।
তিনি বলেন, আমরা যদি বিশ্বাস করি এই বিশ্বব্রম্মান্ড আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সৃষ্টি করেছেন, তাঁর ইশারা ছাড়া গাছের পাতাটাও নড়ে না, ভাল-মন্দ যা কিছু তা তিনিই করে দিয়েছেন। তাহলে আমরা এই বিশ্বাস নিয়েই পথ চলবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়, কারো প্রতি ঘৃণা নয়, কারো প্রতি কোন খারাপ চিন্তা নয়, আমরা সবসময় মনে করি মানুষের উন্নতি, মানুষের কল্যাণ, মানুষের মঙ্গল। মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে এবং শান্তিপূর্ণভবে বসবাস করতে পারে।
ইসলাম শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম এবং ইসলাম ধর্ম মানুষকে শান্তির পথ দেখায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বিদ্যমান থাকার প্রসংঙ্গটিও উত্থাপন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘এরফলে লাভবান হচ্ছে কারা, যারা অস্ত্র তৈরী করে, অস্ত্র বিক্রী করে তারা লাভবান হয়। আর রক্ত যায় আমাদের মুসলমানদের।’
ইসলামী সম্মেলনসহ বিভিন্ন ফোরামে এই বক্তব্য তুলে ধরেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই কথাটা আমি ওআইসিসেক্রেটারির কাছেও তুলে ধরেছি, জাতিসংঘে আমরা একটা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বিরোধী সম্মেলন করেছিলাম সে সময়ও এই কথাটা বলেছি এবং সৌদি বাদশাহকেও এই কথাটা বলেছি।
তিনি বলেন, ‘সমগ্র বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ এক হয়ে শান্তির পথে আমাদের যেতে হবে। কারো মাঝে যদি কোনরকম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকে তো আলাপ-আলোচনার মধ্যদিয়ে সেটার আমরা সমাধান করবো। ইসলাম যে শান্তির ধর্ম সেটাই আমরা প্রমাণ করতে চাই।’
উন্নয়নকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে তাঁর সরকারের পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে তিনি দুঃস্থদের জন্য ভাতা ও বিনা পয়সায় খাদ্য সরবরাহের কর্মসূচির উল্লেখ করে বলেন, আজকে বাংলদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছি, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
তিনি এ সময় ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের কালরাতে একসঙ্গে পিতা-মাতা-ভাই হারানোর দুঃসহ বেদনার কথা উল্লেখ করে তাঁর এবং তাঁর পরিবার এবং দেশবাসীর জন্য আলেম-ওলামাদের সকলের দোয়া চান। সামনেই জাতীয় নির্বাচনের উল্লেখ করেও তিনি সকলের দোয়া ও আশির্বাদ কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি নিঃস্ব রিক্ত, আমি এতিম, আমরা দু’টি বোন আছি, আমাদের জন্য, আমাদের ছেলে-মেয়ে নাতী-পুতিদের জন্য দোয়া করবেন, আর দোয়া করবেন বাংলাদেশের জনগণের জন্য।’
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আমি শুধু এই টুকুই চাই যে, আল্লাহ আমাকে যে শক্তি দিয়েছেন, আমি বাংলাদেশের জনগণের সেবা করে যেতে চাই আর এই বাংলাদেশকে একটা সুন্দর দেশ হিসেবে গড়ে তুলে রেখে যেতে চাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের দোয়া চাই সামনে নির্বাচন আছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যদি ইচ্ছা করেন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই আবার বাংলাদেশের জনগণের খেদমত করাবার সুযোগ আমাকে দেবেন।’
‘আর যদি না দেন আমার কোন আফসোস থাকবে না। কারণ, আমি সবকিছু আল্লাহর ওপরই ছেড়ে দিয়েছি,’ যোগ করেন তিনি।