নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী মার্কার তেলেসমাতি।।
রুহুল আমিন মজুমদারঃ–মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ক্ষমতার শীর্ষে আরোহন করার পর ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার উদ্দেশ্যে ফিল্ড মার্শাল আয়ুব খাঁনের পথ অনূসরণ করেন। প্রথমে তিনি হাঁ-না ভোটের আয়োজন করে তাঁর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকে জায়েজ করার পদক্ষেপ গ্রহন করেন । প্রতারণা পূর্ণ হাঁ-না ভোট দেশে বা বিদেশে কোথাও তেমন গ্রহনযোগ্যতা না পাওয়ায় সঙ্গত কারনে তাঁর রাজনৈতিক দল গঠন করার প্রয়োজন দেখা দেয়।
তিনি প্রথমবস্থায় বর্তমানে গঠিত ঐক্যফ্রন্টের মতই বিভিন্ন দলের দলচ্যুট নেতা, মুসলিমলীগ, পিডিপি, ভাসানী ন্যাপ সহ আরো কতিপয় দল নিয়ে ‘বিচারপতি আবসুস ছাত্তারের সমন্বয়ক করে জাতীয় গনতান্ত্রিক দল ‘(জাগদল)’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক জোট গঠন করেন। ‘৭৯ এর দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচন ঘোষিত হওয়ার পুর্বে তাঁর নেতৃত্বে “জাগদল” রাজনৈতিক জোটকে ‘বাংলাদেশ ন্যাশানালিষ্ট পার্টি’ (বিএনপি) নামে রাজনৈতিক দলে রুপান্তর করেন। এবং উক্ত দলের চেয়াম্যাপার্সন হিসেবে মেজর জিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে বেসামরিক রাজনীতিতে হাতে খড়ি নেন।
যেহেতু জিয়ার সৃষ্ট দলটি নতুন সৃষ্ট রাজনৈতিক দল ছিল, সেহেতু নির্বাচন কমিশনে উক্ত দলের বিপরীতে কোন নির্বাচনী মার্কা রেজিষ্টার্ড ছিলনা। মালানা আবদুল হামিদ খাঁন ভাসানী’র দল ন্যাশানাল আওয়ামী পার্টির মার্কা ধানের শীষ ছিল বাংলাদেশের জনগনের নিকট খুবই পরিচিত মার্কা।’৭৩ এর নির্বাচনে ঐ মার্কায় তাঁর দল নির্বাচনে অংশ গ্রহন করায় মার্কাটি নির্বাচন কমিশনে রেজিষ্ট্রি ভুক্ত ছিল।
মেজর জিয়াউর রহমান উক্ত মার্কাটি তাঁর নির্বাচনী মার্কা বিবেচনা করার জন্যে নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠান। মাওলানা সাহেব নিজে এবং তাঁর দল ন্যাপ তখনকার সময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাবশালী থাকা সত্বেও, তাঁর মার্কা চিনতাইয়ের আপত্তি জানাতে নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার সাহষ দেখাতে পারেননি।
নির্বাচন পরবর্তিতে সরকারে থাকাবস্থায় জিয়ার মৃত্যু হলে ক্ষমতার রদবদলে জেঃ এরশাদ বাংলাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে আর্বিভূত হন। তাঁর সরকারের নেতৃত্বে ‘৮৬ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে উক্ত নির্বাচন বিএনপি সহ বেশ কিছু দল অংশগ্রহন করা থেকে বিরত থাকে। ‘৮৮ সালের সাধারন নির্বাচনে জাসদ রবের নেতৃত্বে বৃহত্তর জোট ‘মশাল মার্কায়’ আংশ নিলেও আওয়ামীলীগ, বিএনপি সহ প্রতিষ্ঠিত কোন দল উক্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি। ধানের শীষ মার্কাটিও নির্বাচন কমিশনে অব্যাবহৃত পড়ে থাকে।
‘৯১ এর সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহন করলে ‘৭৯ ইং সালের রেজিঃ অনুযায়ী ধানের শীষ বিএনপি’র মার্কা হিসেবে উক্ত দলকেই দেয়া হয়।মার্কাটি মাওলানা ভাসানী প্রথমবস্থায় ভয়ে পরবর্তিতে তাঁর দল আইনগত জটিলতা থাকায় আর পূণঃদ্ধার করতে পারেননি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গনফোরামের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন সাহেবের নেতৃত্বে বিএনপি সহ অপরাপর দল, জোট ও ব্যাক্তিদের সমন্বয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট ‘ঐক্যফ্রন্ট’ গঠিত হয়। ঐক্যফ্রন্ট অধিভূক্ত দল ও জোটের মধ্যে বিএনপি দলের ধানের শীষ, কাদের সিদ্দিকী সাহেবের গামছা, আসম আবদু রবের মাশাল মার্কা ব্যাতিত রেজিঃ ভুক্ত দল ও মার্কার মধ্যে অন্যকোন দলের কোন মার্কা বাংলাদেশের রাজনীতিতে তেমন পরিচিতি নেই।
তম্মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন, জনাব মাহমূদুর রহমান মান্না, ডাঃ জাফর উল্যা সাহেব সহ অনেকগুলী দলের বিপরীতে নির্বাচন কমিশনে কোন মার্কা রেজিঃ নেই। ইতিপূর্বে তাঁদের দল বাংলাদেশের কোন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহনও করেনি।সঙ্গতকারনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ‘ধানের শীষ অথবা গামছা বা অন্যকোন মার্কা’ তাঁর নেতৃত্বের জোটের বরাবরে বরাদ্ধ দেয়ার জন্যে নির্বাচন কমিশনে চিঠি প্রেরণ করবেন বা করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন এইরুপ চিঠি পাওয়ার পর রেজিঃ মার্কার মালিক যদি কোন না থাকে সরাসরি বরাদ্ধ দিতে পারবেন।আর যদি পুর্বে কোন দলের বিপরীতে মার্কাটি রেজিঃ থাকে দলের প্রধান বা দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকে চিঠি মারফৎ জানতে চাইবেন তাঁদের কোন আপত্তি আছে কিনা।
পূর্বের ন্যায় ভয়ভীতির কোন কারন না থাকলেও নির্বাচন কমিশনে রেজিঃ মার্কার মালিক দলের প্রধান বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত নেতা তাঁর দলের পক্ষে অনাপত্তি পত্র প্রদান করবেন। উক্ত অনাপত্তি সনদ নির্বাচন কমিশনে প্রদান করার সাথে সাথে উক্ত দলের রেজিঃ মার্কার উপর দলটির সকল প্রকারের অধিকারের বিলুপ্তি ঘটবে। মার্কাটি নতুন ভাবে দল বা জোটের নামে রেজিঃ ভুক্ত হবে।
ড. কামাল হোসেন যেহেতু ফ্রন্ট প্রধান সেহেতু তাঁর অনুমতি বা সম্মতি ব্যাতিত নির্বাচন কমিশন আইনতঃ কোন মার্কা ফ্রন্টের বিপরীতে বরাদ্ধ দিতে পারবেন না। তদ্রুপ ঐক্যফ্রন্ট যদি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্টতা লাভ করে তাহলে রাষ্ট্রপতি প্রথমতঃ সংসদীয় দলের প্রধান ঐক্যফ্রন্ট প্রধান ড. কামাল হোসেন সাহেবকে সরকার গঠন করার আহব্বান জানাবেন।
ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সংসদ সদস্যগন বৈঠকে বসে তাঁদের সংসদ নেতা ড. কামাল হোসেন ব্যাতিত অন্য কাউকে নির্বাচিত করলেও ‘ঐক্যফ্রন্ট’ প্রধান ড. কামাল হোসেন সাহেবের স্বাক্ষরিত চিঠি রাষ্ট্রপতির হস্তগত হওয়ার পরই কেবলমাত্র নবনির্বাচিত সংসদ নেতাকে সরকার গঠন করার জন্যে রাষ্ট্রপতি আহব্বান জানাতে পারবেন।
সংখ্যাগরিষ্ট দলের বা জোটের সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী সহ অন্যান্ন মন্ত্রীদের নামের তালিকা যতক্ষন না রাষ্ট্রপতি বরাবর প্রেরণ করবেন, ততক্ষন পয্যন্ত বাংলাদেশের নতুন নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ট সংসদ সদস্যদের ‘ঐক্যফ্রন্ট সরকার’ রাষ্ট্রপতি গঠন করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে বিলম্বে’র কোন কারন উদ্ভব হতে দেখা গেলে, চলমান সরকারকে আরো কিছুদিন দায়িত্ব পালন করার জন্যে রাষ্ট্রপতি অনুরুধ জানাতে হবে।
নির্বাচন পরবর্তি সময়ে কোন কারনে যদি সংসদ সদস্যগন ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করেন–তাহলে তিনি নির্বাচন কমিশনে তাঁর নেতৃত্বে’র ঐক্যফ্রন্টের রেজিঃ মার্কায় নির্বাচিত উক্ত সংসদ সদস্যদের সদস্যপদ বাতিলের চিঠি প্রেরণ করতে পারবেন। ফলে যে কয়জনের নাম তিনি তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করবেন, সেই কয়জনের সংসদ সদস্যের সদস্যপদ বাতিল করতে কমিশন বাধ্য থাকবেন।
নির্বাচন পরবর্তি যদি কোন কারনে ঐক্যফ্রন্টে বিভক্তি ঘটে বা দলগুলী স্ব-স্ব দলের অবস্থানে চলে যায়, সরকার সংখ্যাগরিষ্টতা হারালে রাষ্ট্রপতিকে সরকার প্রধান নতুন নির্বাচন আয়োজনের অনুরুধ করবেন। পরবর্তি নির্বাচনে উক্ত বিভাজন বহাল অনূভব হলে একাদশ সংসদ নির্বাচনের মার্কাটি দ্বাদশ নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বের দল বা জোটের নামে বরাদ্ধা বহাল থাকবে।এক্ষেত্রে একাদশ নির্বাচনে মার্কা সমর্পনকারী দল দ্বাদশ নির্বাচনে নতুন করে অন্য একটি মার্কা বরাদ্ধ পাওয়ার আবেদন করবেন।
লেখক, সম্পাদক,কলামিষ্ট।