প্রাণের ৭১

যুদ্ধে বিভক্ত ইয়েমেনীরা শান্তি চায়

বিদ্রোহী দখলকৃত সানা ও রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত এডেনের বাসিন্দারা একটি ব্যাপারে একমত। তারা সবাই শান্তি চায়।
চার বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ দেশটিতে চরম মানবিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে। খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
অনুন্নত দেশটির বাসিন্দারা প্রায় প্রতিদিনই প্রতিপক্ষ বিরোধী প্রপাগা-া ও উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বক্তব্য-বক্তৃতা শুনছে। এই ধরনের বক্তব্য দিয়ে যুদ্ধরত দলগুলো তাদের সমর্থক সাধারণ মানুষকে ‘শত্রুদের বিরুদ্ধে’ লড়াইয়ে উদ্ভুদ্ধ করছে।
ইয়েমেনের সর্বত্রই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। সশস্ত্র যোদ্ধারা সামরিক পোশাক পরে সরু অলিগলি থেকে শুরু করে বাজারের দেয়ালগুলোতে ‘শহীদ’ যোদ্ধাদের পোস্টার সেঁটে দিচ্ছে।
কিন্তু অনেক ইয়েমেনী মনে করেন যথেষ্ট হয়েছে। আর যুদ্ধ নয়।
ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহী আর সৌদি সমর্থিত সরকারের মধ্যে এই গৃহযুদ্ধ চলছে। সাধারণ নাগরিক যে দলের পক্ষেই থাকুক, এ যুদ্ধ আরব বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীটিকে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে।
সানার বাব আল-সাবাহ মার্কেটের দোকানি আমিন মোহাম্মদ বলেন, ‘যুদ্ধে কোন ক্ষমা নেই। এটা সবকিছু গ্রাস করে নেয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিদিনই ইয়েমেনিরা যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা শুনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।’
রাজধানীর বাজারগুলোতে মোহাম্মদের মতো দোকানীরা দোকান খুলে খদ্দেরের আশায় বসে থাকেন। ক্রেতা বিক্রেতা উভয়েই জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে চান।
কিন্তু দেশটির হুতি বিদ্রোহীরা নগরীর গণমাধ্যম ও মসজিদগুলোর মাইকে সরকার ও সৌদি সমর্থিত জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মানুষকে আহ্বান করছে।
হুতি নিয়ন্ত্রিত আল-মাশিরাহ টিভি মানুষকে হুতি বাহিনীতে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য অব্যাহতভাবে সামরিক অভিযান ও রণসঙ্গীত প্রচার করছে।
হুতিদের জনপ্রিয় স্লোগান হচ্ছে, ‘এটা আমাদের দেশ। এটা আমাদের যুদ্ধ।’
কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা হাসান আব্দেল করিম (৩৯) এতে ভ্রক্ষেপ করছেন না। সাত সন্তানের মুখের আহার যোগানোই এখন এই বাস চালকের একমাত্র চিন্তা।
তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধ, এতো রক্তপাত ও লাশ দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত।’
সানার এই বাসিন্দা আরো বলেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে। আর না। এখন সময় এসেছে ইয়েমেনকে নতুন করে সাজাবার। দেশ পুনর্গঠনে সকল মানুষের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।’
এদিকে সরকার নিয়ন্ত্রিত রাজধানী এডেন থেকে প্রায় ৩শ’ কিলোমিটার দক্ষিণের বাসিন্দা খুলুদ আল-আকেলও আব্দেল করিমের মতোই ভাবছেন।
তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধ দেখতে দেখতে আমরা খুবই ক্লান্ত।’
যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চলের এই নারী আরো বলেন, ‘আমাদের গ্যাস, পানি ও খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।’
বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এজন্যই আমরা এই যুদ্ধের অবসান চাই।’
২০১৪ সালে বিদ্রোহীরা সানা দখল করে নেয়ার পর সরকার এডেনকে ডি ফ্যাক্টো রাজধানী থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এডেনে অর্থনৈতিক ধস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বি হওয়ায় গত বছর ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।
গত বছর লোহিত সাগর তীরবর্তী নগরী হোদেইদায় লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় যুদ্ধ বন্ধের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। শহরটি দেশটির সকল বাণিজ্যিক ও মানবিক সহায়তা সামগ্রী আমদানির প্রবেশদ্বার।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস এই বন্দর ধ্বংস হয়ে গেলে দেশটির ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ অনাহারে মারা যাবার ঝুঁকিতে পড়বে বলে সতর্ক করেছেন।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*