জোটের সিদ্ধান্ত আমি নেব, প্রার্থীও আমিই চূড়ান্ত করব
একদিন হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়ে চারদিন গোপন স্থানে অবস্থানের পর দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীদের সাক্ষাত্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে এলেন জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্যদের নিয়ে মঞ্চে বসলেও উপস্থিত মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাত্কার নেওয়া হয়নি। তাদের উদ্দেশে এরশাদ বললেন, ‘তোমরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আমার ওপর ছেড়ে দাও, আমার ওপর আস্থা রাখো। দলীয় প্রার্থী কারা হবে আমিই চূড়ান্ত করব। প্রাথমিকভাবে তিনশ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করব। রাজনৈতিক কারণে অন্য জোটে যেতে হলে সেই সিদ্ধান্তও আমি নেব। দেশ, পার্টি ও নেতাকর্মীদের স্বার্থ বিবেচনা করে ভোট ও জোটের সিদ্ধান্ত নেব। প্রেসিডিয়াম সভায় আমাকে এ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আমি কখনও মুক্ত ছিলাম না, এখনও মুক্ত নই। মামলা মাথায় নিয়ে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছি। তোমরা ভালো থেকো।’
রাজধানীর গুলশানে ইমান্যুয়েলস কনভেনশন হলে গতকাল সকাল দশটায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা বিলম্বে আসেন এরশাদ। তার গাড়ির আগে-পিছে আরও বেশ কয়েকটি গাড়ির বহর ছিল। অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছানোর পর তাকে বেশ ক্লান্ত ও কিছুটা অসুস্থ মনে হচ্ছিল। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে স্ত্রী রওশন এরশাদের গাড়িতে করে চলে যান। পরে জানা গেছে, এরশাদ বারিধারায় তার নিজ বাসায় ফিরেছেন। উল্লেখ্য, অসুস্থ হয়ে পড়ায় বৃহস্পতিবার ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি হন এরশাদ। একদিন পর হাসপাতাল ছাড়লেও তিনি নিজ বাসায় না গিয়ে গুলশানে অন্য একটি স্থানে অবস্থান করছিলেন।
আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, জাপা থেকে এবার অনেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। পার্টি সাংগঠনিক রূপ নিয়েছে। এটা ধরে রাখতে হবে। অনেক দুঃসময় পেরিয়ে জাপা আবার জেগে উঠেছে। এ সময় উপস্থিত মনোনয়ন প্রত্যাশীরা একযোগে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার দাবি তোলেন। তাদের থামার নির্দেশ দিয়ে এরশাদ বলেন, আমার ওপর ছেড়ে দাও। আজ এতো লোক আমার সঙ্গে। জাপার দুঃখ ঘুচেছে। জাপা বিলীন হয়নি, তার প্রমাণ আজ তোমরা। চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হবে। সবাইকে মনোনয়ন দিতে পারবো না। আমি যাকে যোগ্য ভাববো সে মনোনয়ন পাবে। আর এটা সবাইকে মেনে নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, দেশের মধ্যে সবচেয়ে নির্যাতিত নেতা আমি। আমাকে প্রায় সাত বছর কারাগারে রাখা হয়েছিল। খালেদা জিয়া বলেছিলেন কারাগারে আমার মৃত্যু হবে কিন্তু এখন তিনি কোথায়?
অনুষ্ঠানে জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, সবাই তো আর মনোনয়ন পাবেন না, এক এলাকায় একজন প্রার্থী হবেন, বাকি সবাইকে জাপার প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, প্রার্থী নির্ধারণে পার্টির চেয়ারম্যান যে ধরনের সিদ্ধান্ত নেবেন তা সকলে মেনে নেবেন।
অনুষ্ঠান মঞ্চে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাপার কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মশিউর রহমান রাঙ্গা, মুজিবুল হক চুন্নু প্রমুখ। জাপা থেকে এবার ২ হাজার ৮৬৫ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও যাচাই-বাছাই করে গতকালের অনুষ্ঠানে ৭৮০ জনকে ডাকা হয়েছিল, এর মধ্যেও বেশ ক’জন আসেননি। সাক্ষাত্কার অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে করে মিছিল নিয়ে আসেন।