প্রাণের ৭১

গরু হারালে এমনই হয় গো মা–জাফর ওয়াজেদ

আইনের শাসন, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ডক্টর কামাল হোসেন অনেক বক্তৃতা, বিবৃতি দিয়েছেন, ক্ষমতাসীন দলের নিন্দামন্দ করে বলেছেনও, দেশে সুশাসন নেই। জবাবদিহিতা নেই। সেই তিনি এখন অপরাধী এবং অপশাসন পরিচালনাকারী, দুর্নীতিবাজদের জন্য প্রাণান্তকর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এই অশীতিপর বয়সে। বিএনপি-জামায়াত জোটের অতীতের দুঃশাসনকে সুশাসন হিসেবে সামনে তুলে ধরে তাদের পুনর্বাসনের জন্য নিজস্ব সত্তাকেও বিসর্জন দিয়েছেন। দুর্নীতি, লুটপাট, গ্রেনেড ও পেট্রোলবোমা হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা ও অর্থ পাচারের দায়ে আদালতে দ-িতদের মুক্তির জন্য আইন-কানুনকে চাপা দিয়ে যা বলে আসছেন, তাতে বিস্ময় জাগতেই পারে দেশবাসীর। সাম্প্রদায়িক শক্তি, যুদ্ধাপরাধীদের জন্য আজ যে মায়াকান্না জুড়ে দিয়েছেন, তাতে অনেকে একে ‘ভীমরতি’ বলে হাল্কা চালে উড়িয়ে দিতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে কামাল হোসেন অতীতের মুখোশ ফেলে দিয়ে স্বরূপে আবির্ভূত হয়ে যা করছেন, এটাই তার আদি অকৃত্রিম স্বভাবজাত।

ডক্টর কামাল বিএনপি-জামায়াতের পুনর্বাসন কাজটি অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে এসেছেন। খালেদা-তারেকের পাপ-তাপ মুছে দিয়ে তাদের পূতপবিত্র হিসেবে মানুষের সামনে তুলে ধরার কাজটি এখন অব্যাহত গতিতে চালিয়ে যাচ্ছেন। আর সে কাজটি সম্পন্ন হোক আর না হোক, অতঃপর তিনি হয়ে যাবেন তাদের জন্য বোঝা। অবশ্য তারাও ঝেড়ে ফেলে দেবে প্রয়োজন ফুরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই। দেশের মানুষ জানে, কামাল হোসেন বাংলাদেশের এমন একজন ‘নক্ষত্র’ যিনি আলোকিত হতে চান অপরের জ্যোতিতে। দীর্ঘ জীবনধারা পেরিয়ে এসে জীবনের স্বাদ নেয়ার অদম্য বাসনা থেকে ঠাঁই খুঁজে বেড়াচ্ছেন যেখানে সেখানে। অবশ্য এমনটাও বলা যায়, বিদ্বান হলেই বুদ্ধিমান হবেন; জ্ঞানী হবেন কিংবা মানবকল্যাণের অবতার হবেন এমন কোন কথা নেই; তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলেন কামাল হোসেন। তিনি একজন আইন বিশেষজ্ঞ। বিদেশে তেল কোম্পানিগুলোর আইনজ্ঞ হিসেবে তিনি কাজ করেন। অঢেল অর্থ আয় করেন। সেই আইনজ্ঞ ব্যক্তিটি কালো টাকা সাদা করেছেন এ দেশেই। তার মতো তার বর্তমান নেত্রী কারাদন্ডিত খালেদা জিয়াও একই সময়ে অনুরূপ কাজ করেছেন। প্রশ্ন জাগে মানুষের মনে, এমন নীতিবান মানুষটি কালো টাকা পেলেন কোথা থেকে? তিনি তো কালোবাজারি, ফটকা ব্যবসা বা মাফিয়া সংস্কৃতির লোক নন। তাহলে এই অর্থ তার পকেটে এলো কোন্ পথ বেয়ে? এসব প্রশ্নের কোন উত্তর বা সদুত্তর তার কাছ থেকে মেলেনি। দেশে-বিদেশে অঢেল আয়ের কথা লোকমুখে শোনা যায়, কিন্তু সে সব দৃশ্যমান হয় না। কোথায় ব্যয় করেন এত কাড়ি কাড়ি অর্থ, তা অজানা। দেশে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, জনহিতকর কর্মকা-, আইনবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র কামাল হোসেন নিজে গড়ে তুলেছেন বা স্থাপনে আর্থিক সহায়তা করেছেন এমনটা শোনা যায় না। দেখাও যায় না। কেউ হয়ত বলতে পারেন, গণফোরাম নামক রাজনৈতিক দলকে পরিচালনায় তিনি বিপুল অর্থ ব্যয় করেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাছে রাজনৈতিক দলগুলো আয়-ব্যয়ের যে হিসাব দিয়ে আসছে, তাতে এই দলের আয়-ব্যয় নামমাত্র। প্রায় তিন দশক ধরে তিনি দলের সভাপতি পদ আঁকড়ে রেখেছেন। কোন সম্মেলন আয়োজনের ধারে কাছেও যান না। ‘রাজনীতি করবেন না’ বলে হতাশ হয়ে একবার ঘোষণা দিয়েও তা রক্ষা করতে পারেননি। কারণ একটাই। শেখ হাসিনা বিদ্বেষ। সেই আশির দশকেই, যখন শেখ হাসিনা দেশে ফিরে দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, ভেবেছিলেন কামাল হোসেন আওয়ামী লীগকে নিয়ন্ত্রণ করবেন শেখ হাসিনার মাধ্যমে। এতিম, অসহায়, শোকাহত শেখ হাসিনা তার নির্দেশ ছাড়া কিছুই করতে পারবেন না। তাকেই নেতা মেনে দল চালাতে হবে, তারই পরামর্শে। সে রকম দাম্ভিকতা তিনি দেখিয়েছিলেন বৈকি। ১৯৮৬ সালে এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি শেখ হাসিনাসহ দলের নেতাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। জনশ্রুতি রয়েছে, এ জন্য তিনি মারমুখী প্রায় হয়ে উঠেছিলেন। মজার বিষয়, সে নির্বাচনে কামাল হোসেন তরুণ প্রার্থীর কাছে ‘গো-হারা’ হেরেছিলেন। কোন নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার ইতিহাস তিনি রচনা করতে পারেননি। জনগণ তাকে যে গ্রহণ করেনি, তা তিনি বুঝতে পারেন বলেই, এবার নির্বাচনে দাঁড়াবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এখানে সুবুদ্ধি কাজে লাগিয়েছেন বলা যায়। তবে এটা তো সত্য, তার কাজ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া নয়, জামায়াত-বিএনপিকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন শুধু নয়, ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া। আর ক্ষমতা পেলে তিনি তাদের ‘ডিক্টেট’ করার কাজটি করতে পারবেন বলে মনে মনে হয়ত ভেবে রেখেছেন। কিন্তু সে আশা যে গুড়ে বালি হবে, তা হয়ত বুঝতে পারবেন নির্বাচন শেষে তার অবস্থান কোন্খানে হবে, সেটি স্পষ্ট হলে। তখন তার সুর ও স্বর বদলে যাবে অতীতের মতো। যেমনটা তিনি একান্নব্বই সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে লেখা পত্রে বলেছিলেন, তিনি গণফোরাম নামে সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিবর্গ নিয়ে একটি প্ল্যাটফরম গঠন করতে চান। এ জন্য তিনি অনেক দিন ধরে কাজ চালিয়ে আসছেন। কিন্তু তিনি কিভাবে এ কাজটি করতে পেরেছেন, তা খোলাসা করেননি। নীতি নৈতিকতা বাদ দিলেও দলীয় গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলার দিক থেকে তিনি তা করতে পারেন না। একটি দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অবস্থান করে তিনি কি করে আরেকটি দল গঠনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেন, সে প্রশ্নেরও কোন জবাব দেননি। বিধিবিধান লঙ্ঘন করা সুশাসনের ধ্বজাধারীকে মানায় কিনা, সে জবাবও মেলে না। পথ হারানো সিপিবি, ফুরিয়ে যাওয়া ন্যাপ, শতধাবিভক্ত জাসদ নিয়ে তিনি যে গণফোরাম গঠন করেছিলেন, কয়েক বছরের মাথায়, তা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হতে থাকে। কামাল হোসেনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধজনেরা কেন কেউ বেশি দিন টিকতে পারেননি, সে ব্যাপারে অনেকেই মুখ খোলেন না। হয়ত লজ্জায়-ঘৃণায় কিংবা বিবমিষায় কোন কথা তাদের মুখ থেকে সরে না। ডক্টর ইউনূসের স্বপ্নের রাজনৈতিক দল হতে পারেনি গণফোরাম। বরং স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে সবার।

নির্বাচন সামনে রেখে কামাল হোসেনকে কেন্দ্র করে অনেকে আবার জড় হচ্ছেন তার পাশে। কিন্তু যারা আসছেন, তাদের ‘বাজার দর’ বা নির্বাচনী বাজারে কদর নেই। ‘নামের খসম আজিজমিসির, নামক প্রবাদটি এখানে স্মরণযোগ্য। যারা যোগ দিয়েছেন বা দিতে যাচ্ছেন, তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা শূন্যের কোঠায়। এদের অনেকে অতীতে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন। এবার ধানের শীষ মার্কা প্রতীক নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করতে চাইছেন। জাতিকে এরা কিছু দিতে না পারলেও ব্যক্তিগত লাভালাভের হিসেবটাকে কড়ায় গন্ডায় বুঝে নিতে পারবেন, হয়ত বিজয়ী হলে। ক্ষমতার লোভ ও শেখ হাসিনার বিরোধিতার মনোভাব ডক্টর কামাল গংয়ের এতটাই নিচে নামিয়ে দিয়েছে যে, বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে একত্রে ধানের শীষ আঁকড়ে ধরতেও সামান্য বাধেনি। বিবেকের পীড়নও নয়।

কামাল হোসেন নিশ্চয় ভুলে যাননি আইনবিশারদের বাইরে তার যতটুকু অর্জন, তার সবটাই বঙ্গবন্ধুর উদারচেতা দৃষ্টিভঙ্গির দান। এক্ষেত্রে ‘করুণা’ শব্দটি ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিভঙ্গিকে খাটো করতে চাই না। তিনি বঙ্গবন্ধু সরকারের আইনমন্ত্রী, জ্বালানিমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতার অন্যতমও ছিলেন। তবে পঁচাত্তর পরবর্তী থেকে অদ্যাবধি কামাল হোসেনের রাজপথে মেহনতী মানুষের পক্ষে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে, নিষ্পেষিত মানুষের হয়ে কোন উল্লেখযোগ্য অবদান খুঁজে পাওয়া যায় না। দেশের বিপদে-আপদে, অসময়ে তার দেখা পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। তার রাজনীতিক ক্ষেত্র বিশ্লেষণ করলে ভাল কোন দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি বর্তমান শাসকগোষ্ঠীকে লুটেরা হিসেবে প্রায়শই আখ্যায়িত করে এসেছেন। এমনকি এসবও বলেছেন যে, অনেক লুটপাট করেছ। এখন বিদায় নাও। লুটের টাকা নিয়ে তোমরা ভাল থাক। কানাডায় চলে যাও। দেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দাও। কিন্তু তিনি তার বক্তব্যে একবারও বলেননি, রাজনীতির যে পরিমন্ডলে বর্তমানে তিনি অবস্থান করছেন, যাদের সঙ্গে রয়েছেন, তাদের চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্য কি ধরনের। তিনি বলেননি, তার নিজস্ব রাজনৈতিক দলের মধ্যে অবস্থানরত নেতৃবর্গ কোন্ শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করেন এবং তাদের অতীত ‘প্রোফাইলে’ মেহনতী জনতার প্রতিনিধিত্বকারী কতজন তার দলে অবস্থান করছেন। ডক্টর কামাল অনেক কথাই বলেন। থেকে থেকেই কথা বলেন। তবে তা নিজের ওপর ভরসা করে যে বলেন, তা বলা যাবে না। কারও না কারও ওপর নির্ভরশীলতা কথা বলতে উৎসাহ যোগায়। বরং মান্না, সুলতানকে হাতের কাছে পেয়ে তাদের কাঁধে ভর করে বলেছিলেন, তাদেরকে সঙ্গে পেয়ে জীবন ধন্য হয়ে গিয়েছে। তার এ ভাষ্যে সত্যতা আছে অবশ্য। কারণ, তারাই তাকে রাজনীতিতে পুনরুজ্জীবিত করেছেন বা নবজীবন দান করেছেন। ধানের শীষের ডগায় শিশির বিন্দু দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন। ন্যায় বিচারের প্রতীক দাঁড়িপাল্লাওয়ালাদের গণধিক্কৃত অবস্থান থেকে উঠিয়ে এনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ও রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছেন। আপাতত তাদের কাছে তিনি ‘নমস্য ব্যক্তিত্ব’ হয়ত। কিন্তু কামাল হোসেন যদি জবান খুলে এস্তেমাল করতেন যে, এরশাদের গৃহপালিত এবং কামাল হোসেনের শেখ মুজিবের সরকার উৎখাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ধ্বংস করার কাজে গণবাহিনী গঠনকারী আ স ম আবদুর রব ‘কোন্ গোয়ালের গরু’। মান্না, সুলতানদের রাজনৈতিক চরিত্র বিশ্লেষণ করতে হলে ফিরে যেতে হয় স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের কয়েক দশকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। তাদের রাজনৈতিক চালচিত্র মোটেই সুখকর নয়। তিনি এক সময় জেনারেল এরশাদের ঘোর বিরোধী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছিলেন ১৯৮৬’র নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর। যে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য তিনিই ছিলেন উদ্যোগী। বছরকয়েক আগে সেই এরশাদের সঙ্গেও রাজনৈতিক মিত্রতা করার পথে পা বাড়িয়েছিলেন। তার দুর্ভাগ্য বা সৌভাগ্য যা-ই হোক, তা-ও তার হয়ে ওঠেনি। ‘শান্তিবাদী’ নোবেল জয়ী ডক্টর ইউনূসকে উস্কে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের শুভ দৃষ্টি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে। সেখানেও তার সুবিধা হয়ে ওঠেনি। বিদেশে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার-অপপ্রচার চালিয়েও ইউনূস কারও পাতে পড়তে পারেননি। সর্বত্র বিফল মনোরথ হয়েছেন হাসিনা বিরোধী ভাষ্যে। পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। সেখানেও তার ব্যর্থতার নিদর্শন তিনি গেঁথেছেন। শোনা যায়, সেই ইউনূস ঐক্যফ্রন্ট গঠন প্রক্রিয়ায় তাকে প্রেরণা দিলেও তিনি সশরীরে অবস্থান নিচ্ছেন না। বিদেশীদের কাছে ধর্ণা দিয়েও সুবিধা করতে না পেরে তিনি সম্ভবত হতোদ্যম অবস্থায় প্রবাসেই কাটাচ্ছেন সামাজিক ব্যবসা নিয়ে।

আশী বছর পার করা কামাল হোসেনের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয় যে, সুবিধাবাদী এমন কোন পথ নেই ক্ষমতায় যাওয়ার তাড়না থেকে, সেসব পথ তিনি মাড়িয়ে আসেননি। তিনি কাউকে লুটেরা বলার আগে তাকে ভাবতেই হবে তিনি কোন্ শ্রেণীর লোক। তিনি যদি লুটেরাদের বিরুদ্ধে, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ইচ্ছাই করেন, তবে লুটেরশ্রেণীর রাজনীতি পরিহার করে অন্তত একবার প্রমাণ করতে পারেন তার জনসম্পৃক্ততা। পরের জোয়াল ধরে টানাটানি না করে লুটেরাশ্রেণীর বিরুদ্ধে নিজে জোয়াল বাঁধতে পারেন। লুটেরাশ্রেণীর সঙ্গে ওঠা-বসা বা বসবাস করে প্রতিপক্ষকে লুটেরা বলে নিন্দামন্দ করা তার মুখে বড়ই বেমানান লাগে। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে কামাল হোসেনের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা তিন উদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে যেসব মামলা হয়েছিল, তিনি সে সবের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। সেসব মামলার কয়েকটিতে বেগম জিয়া দন্ডিত হয়ে কারাগারে রয়েছেন। কামাল হোসেন এখন তার মুক্তি চাইছেন আইনের শাসনকে ধামাচাপা দিয়ে। সর্বশেষ খালেদা জিয়া গংয়ের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ও কানাডিয়ান পুলিশের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। আইনজীবী হিসেবে তিনি নিশ্চয় তা অবগত হয়েছেন। এই প্রতিবেদনে দুর্নীতির তালিকায় ব্যারিস্টার মওদুদও রয়েছেন। তা ছাড়া ফৌজদারিসহ একাধিক মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হওয়া সত্ত্বেও তারেক রহমান নির্বাচনের বিষয় নিয়ে বিবৃতি দিচ্ছে কোন্ আইনের শাসনে, সে বিষয়ে কামাল হোসেন নিশ্চয় মুখ খুলবেন। পাঁচ বছর ধরে ডক্টর কামাল শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে নানা বিষোদগার করে যাচ্ছেন। এমনকি হুমকিধমকিও দিয়েছেন যে কঠোর শাস্তি দেবেন। অথচ দুর্নীতির মাতা-পুত্রকে রক্ষার জন্য তিনি জামায়াতের মতো যুদ্ধাপরাধী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অধঃপতনের চূড়ান্ত স্তরে এসে তিনি যে গরু হারিয়ে ফেলেছেন, তা বুঝতে পারবেন নির্বাচন পূর্বাপর সময়ে। বিএনপির ছাতা হিসেবে তিনি বেশ সুখপ্রদ রয়েছেন। কিন্তু ছাতা গুটিয়ে নেয়ার সময় এলে তিনি পথপ্রান্তরেই পড়ে থাকবেন। খালেদা-তারেক-জামায়াতের হাতের পুতুল কামাল হোসেন যাদের হাতে ব্যবহৃত হচ্ছেন, তারা নাক ঝেড়ে টিস্যু পেপার হিসেবে তাকে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে কসুর করবে না। খালেদা জিয়া যদি কামাল হোসেনের আইন ব্যবহারের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসে নির্বাচনে নামেন, তখন কামালেেক সাইড লাইনে দাঁড়িয়ে দৃশ্য দেখার বাইরে কিছু করার থাকবে না। নির্বাচনে ক্ষমতায় আসুক বা না আসুক বিএনপি-জামায়াত, কামাল হোসেন গংয়ের ‘আমাকে ব্যবহার করুন’-এর ঢাকনা বন্ধ করে দিতে বেশি সময় নেবে না। বিএনপির সিদ্ধান্ত মেনেই কামাল গংয়ের চলতে হচ্ছে। এখন অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, তাতে বিএনপি-জামায়াত যা বলবে, যে সিদ্ধান্ত নেবে, তাই মেনে নিতে হবে তাদের। তারেক রহমানের মুক্তির দাবিও তুলতে হবে। কামালের এখন একচক্ষু হরিণের মতো বিএনপি-জামায়াতের সব অপকর্ম মেনে নিয়ে, বৈধতা দিয়ে চলতে হবে। না মানলে বা প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ‘গুডবাই’ বলে বিদায় জানাতে পারে। কামাল হোসেনের নির্বাচন পরবর্তী পরিণতি সম্পর্কে আগাম ধারণা তৈরি হয়ে যায় সহজেই। গ্রামীণ লোকগল্পের সেই চাষির কথা মনে আসে। গরু হারিয়ে খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত হয়ে চাষিটি ঘরের দাওয়ায় বসে স্ত্রীকে ডেকে বললেন, এক গ্লাস পানি দাও গো মা। স্ত্রী খেপে গিয়ে বললেন, স্ত্রীকে মা বলে কেন ডাকছ। চাষী বললেন, গরু হারালে এমনই হয়গো মা। কামাল হোসেনের গরু হারিয়ে যাওয়ার সময় এখন সামনে। এ কূল ও কূল সবকূল হারিয়ে তিনি দিশাহারা হয়ে কোন্ পথ বেছে নেবেন, সেটা উপলব্ধি করা কঠিন নয়। শেখ হাসিনার বিদ্বেষ তাকে শেষ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত বিদ্বেষে পরিণত করতে পারে। শেষের সেদিন হবে তার জন্য ভয়ঙ্কর।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*