প্রাণের ৭১

মার্কিন কংগ্রেসে বিল, জামায়াত-শিবিরকে রুখতে বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান

মার্কিন কংগ্রেসে মৌলবাদী সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে দেশের স্থিতিশীলতা ও ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের জন্য চলমান হুমকি উল্লেখ করে বাংলাদেশ সরকারকে তাদের রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের দাফতরিক ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ইন্ডিয়ানা স্টেটের কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাংকস ‘বাংলাদেশে সক্রিয় ধর্ম-রাষ্ট্রিক সংগঠনগুলোর সৃষ্ট গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি হুমকির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ’ শীর্ষক এ বিলটি গত ২০ নভেম্বর হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে উত্থাপন করেন।

ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, হাউজ রেজ্যুলেশন-১১৫৬ পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র কমিটিতে রেফার করা হয়েছে।

বিলটিতে ইউনাইটেড স্টেট এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএইড) ও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরকে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সব গ্রুপের সঙ্গে সব ধরনের অংশীদারিত্ব ও তহবিল ব্যবস্থাপনা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়।

বিলটিতে বলা হয়, বাংলাদেশে বিগত নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে, যার ফলে ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৪৯৫টি হিন্দু বাড়ি ধ্বংস করা হয়। ৫৮৫টি দোকানে হামলা ও লুট এবং ১৬৯টি উপাসনালয় ভাঙচুর করা হয়।

বিলটিতে আরও বলা হয়, জামায়াতের কর্মীরা সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে উল্লেখ করে বিলটিতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে সাড়া দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

বিলটিতে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে হতাহতদের কথা এবং বাংলাদেশ যে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চেতনার ওপর প্রতিষ্ঠিত—তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে এবং একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে, বিলে একথা উল্লেখ করে বলা হয়, এই স্বাধীনতা অর্জিত হয় প্রায় ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু, এক কোটির বেশি মানুষের উদ্বাস্তু হওয়া ও দুই লাখ নারী ধর্ষিত হওয়ার বিনিময়ে। আর এর অনেক ঘটনা ঘটেছে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ইসলামপন্থী উগ্রবাদীদের হাতে।

বিলটিতে আরও বলা হয়, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর উপর্যুপরি হামলা ও ধর্মীয় সহিংসতা বাড়াচ্ছে এবং জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উগ্র মৌলবাদী সংগঠনগুলোর সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ ক্ষুণ্ন করছে।

এদিকে, ফিলাডেলফিয়াভিত্তিক থিংক ট্যাংক মিডলইস্ট ফোরাম (এমইএফ) এক বিবৃতিতে এ বিলকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি প্রভাবশালী ও বিপজ্জনক ইসলামী গ্রুপ, যাদের সহিংসতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।’

গত অক্টোবরে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন হাইকোর্টের একটি আদেশ অনুযায়ী বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল করে।

২০১৩ সালের আগস্টে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক চাঁদপুরী ও অন্য ২৪ জনের দায়ের করা একটি রিট পিটিশনের প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে।

এ পিটিশনে তারা বলেন, ‘জামায়াত একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না।’

সূত্র: বাসস






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*