মাদক নিয়ন্ত্রন অভিযানে ‘আইন-শৃংখলা’ বাহিনীর অঘোষিত শিথিলতা!
বহু ডাকঢোল পিটিয়ে সরকারে’র আইন-শৃংখলা বাহিনী মাদক নিয়ন্ত্রনের উদ্যোগ গ্রহন করেছিল। অবশ্য আশানুরূপ সুফলও আসতে শুরু করেছিল। বলতে গেলে অভিযান প্রাথমিক পয্যায় থাকাবস্থায় সরকারের এহেন জনহীতকর মাদক নিয়ন্ত্রন কায্যক্রম, কোন এক অন্ধকারের শক্তি পেছনে টেনে ধরেছে। বস্তুত দুইমাসের অধিক সময় হতে মাদক নিয়ন্ত্রনে সাঁড়াষি অভিযানের উপর সবার অলক্ষে বরফের আচ্ছাদন পড়া শুরু করেছে। দেশ ও জাতির কাংক্ষিত লক্ষ অর্জনের বহু পূর্বেই আইন-শৃংখলা বাহিনীর সাঁড়াষি অভিযানে কায্যতঃ শিথিলত। সরকারের আইন শৃংখলা বাহিনী’র ধীরলয়ে শিথিলতার সুযোগে, মাদকাসক্ত এবং মাদকের প্রাদুর্ভাব পুর্বের তুলনায় বহুগুন বৃদ্ধি পেয়ে দ্রুতগতিতে অর্ধগ্রাস সমাজকে পূণঃগ্রাস করে চলেছে।
ইহা একান্ত সত্য যে–ফে’ন্সিডিল (ডাইল)–ইয়াবা (গুটি)’ যিনি সেবনকারী, কালক্রমে তিনিই বিক্রয়কারী। যিনি একবার অভ্যস্ত হয়েছেন, মৃত্যু অবদি তিনি আর এই লোভাতুর নেশা ছেড়ে দিতে পেরেছেন–তেমন উদাহরণ পাওয়া যায়না। মাদকীর চিরাচরিত অভ্যেস কখনও পরিবর্তন হয়না, নেশার ধরনে পরিবর্তন হতে পারে।’জুয়াড়ি–মাদকী’র ধর্ম–‘পরিবার শেষ না করা পয্যন্ত তাঁরা নিঃশেষ হয়না’।
পুর্বকথায় ফিরে আসি–আইন-শৃংখলা বাহিনীর সাঁড়াষি অভিযানে অঞ্চলভিত্তিক এক বা একাধিক মাদক কারবারী হয় জেলে, না হয় পলাতক–ইহা যেমন সত্য। তেমনি রাজা মাদক কারবারীর অনুপস্থিতিতে, পাতি কারবারীদের সংখ্যা বহুগুন বেড়ে, বর্তমানে মাদক ব্যাবসা ফেরিওয়ালার ব্যাবসায় পরিণত হয়েছে–ইহাও সত্য। সামাজিক অস্থিরতার প্রতি লক্ষ করলে আমার বক্তব্যের সত্যতা অক্ষরে অক্ষরে পাওয়া যাবে, আশা করি।
পিতা কতৃক পুত্রবধ এবং অন্য এক পুত্রকে জিম্মি করে আইনের হাত থেকে বাঁচার উর্বর মস্তিস্কের চিন্তাচেতনা সাম্প্রতিক সময়ের একমাত্র ঘটনা নয়। ইতিপূর্বে পুলিশ কর্মকর্তার একমাত্র কন্যা, ঐশী কতৃক ইয়াবা নামক নেশার টাকা যোগাতে গড়িমসি করায় পিতা-মাতাকে হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনা দেশবাসী বিস্মৃত হয়নি। দুটি লোমহর্ষক ঘটনার মাঝে স্বামী কতৃক স্ত্রী নিধন, স্ত্রী কতৃক স্বামী, ভাই কতৃক ভাই,পুত্র কতৃক পিতাকে হত্যার হাজার হাজার সামাজিক অধঃপতন জনিত ন্যাক্কারজনক ঘটনা প্রতিনিয়ত পত্রিকার পাতা উল্টালেই চোখে পড়েছে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমনি কতশত ঘটনা রয়ে গেছে লোকচক্ষুর অন্তরালে, তাঁর কোন ইয়ত্তা নেই।
ইহা একান্তই সত্য যে–বাংলাদেশের তথাকথিত উচ্চবিত্তের ছেলেমেয়েদের শৌখিনতার মাদক “ইয়াবা–ফেন্সিডিল’–‘মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, ‘নিম্নবিত্তের ১৬কোটি মানব সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে’।বাংলাদেশের গোটা সমাজ ব্যাবস্থাকে করে তুলেছে অস্থির, চঞ্চল, হিতাহীত জ্ঞান শূন্য। এই সময়ে এসে অতিসহজলভ্য ‘ফেন্সিডিল–ইয়াবা’–“স্কুল কলেজের ছাত্র/ছাত্রী, সর্বশ্রেনীর যুবক/যুবতি, সর্বস্তরের আবাল, বৃদ্ধ, বণিতার মাঝে সমভাবে আদৃত হচ্ছে”। শহর, বন্দর গ্রাম, গঞ্জের কোথাও এতটুকু স্থান বাকী নেই, চাইলেই যেকোন প্রকারের মাদক হাতের নাগালে পাওয়া যায়না।দেশব্যাপী মাদকাসক্ত মানুষের ‘সংখ্যাগত দিক এবং মাদকের সহজলভ্যতা’ বিবেচনায় বলতে গেলে–“মাদক এবং মাদকাসক্তের এক ভয়াবহ মহামারী আকার ধারন করেছে উন্নয়নকামী বাংলাদেশের সমাজে”।
বাংলাদেশের তিনদিকে ভারতীয় সীমান্ত অঞ্চল জুড়ে ফেন্সিডিল কারখানা, মিয়ানমার সীমান্ত অঞ্চল জুড়ে ‘ইয়াবা কারখানা একমাত্র বাংলাদেশের ১৬কোটি অপব্যায়ী মানুষের বৃহৎ বাজার উপলক্ষ করেই গড়ে উঠেছে। ভারতীয় সীমান্তের তিনদিকের সমগ্র অঞ্চল জুড়ে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের বাণে ডুকছে ফেন্সিডিল, মায়ানমারে’র নাফ নদী পেরিয়ে টেকনাফ-কক্সবাজারে ডুকছে নৌকাভর্তি ইয়াবার চালান। উভয় প্রকারে’র মরণব্যাধি মাদক আকারে ক্ষুদ্র এবং সহজে বহনযোগ্য।
বাংলাদেশ এবং মায়ানমারে’র সীমান্ত বিভাজন একমাত্র নাফ নদী পাড়ি দিয়ে অনায়াসে ইয়াবার চালান টেকনাফ, কক্সবাজার হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সর্বজনবিদীত যে–‘ইয়াবা প্রবেশের পথটি অতি সংকির্ণ, মাত্র একটি নদীর নির্দিষ্ট একটি অঞ্চল এবং নদীতে ভাসমান কয়েক শত নৌকা মাত্র’। ভাবতেও অবাক লাগে মাত্র কয়েক মাইল এলাকা নিয়মিত পাহারায় নিয়োজিত সরকারে’র সীমান্তরক্ষি বাহিনী বিজিবি, সমুদ্রসীমা রক্ষক কোষ্ট গার্ড, ডাঙ্গায় আইনশৃংখলা বাহিনী পুলিশ, বিশেষ অভিযানে সরকারের বিশেষায়ীত বাহিনী র্যবের কঠোর নজরদারী সত্বেও ‘ইয়াবা’ নামক ‘মরণ মাদক’ সারা বাংলাদেশ সয়লাব! আশ্চায্য হলেও সত্য– সময় সময় খাদ্যের অভাব হতে দেখি বা শুনী, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রির অভাব দেখা দিতে দেখি বা শুনী, কিন্তু ইয়াবা সেবিদের ইয়াবা প্রাপ্তিতে একমহুর্ত অভাব হয়েছে–৮/১০ বছরের মধ্যে শুনা যায়নি।
মিয়ানমারের দেখাদেখি বাংলাদেশ ভারতের সীমান্ত অঞ্চলের ভারতের অভ্যন্তরে ত্রিপুরা, মেঘালয়, শিলিগুড়ি অঞ্চলের গভীর জঙ্গলে ‘ইয়াবা’ উৎপাদনের কারখানার অস্তিত্ব সম্প্রতি উৎঘাটিত হয়েছে।কিছু দিন আগে, আইন-শৃংখলা বাহিনীর অভিযানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবৈধ অর্থ উপার্জনকারী প্রভাবশালীদের ‘ইয়াবা’ উৎপাদনের একাধিক কারখানা সীলগালা করা হয়েছে।
গত কয়েক বছরের মধ্যে আইনশৃংখলা বাহিনীর সময় সময় বিশেষ অভিযানে–“ফেনী, চট্রগ্রাম, রাজধানী ঢাকায় এইরুপ একাধিক কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে’।যথারীতি ঐসমস্ত কারখানার একাধিক মালিক/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়েছিল–পত্রিকান্তরে যথারীতি সমূদয় খবর প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু এ পয্যন্ত কোন কারখানা মালিকের সাজা হয়েছে কোন পত্রিকায় খবর প্রকাশ হতে দেখা যায়নি। তবে কি ঐসমস্ত কারখানা পরবর্তিতে পুলিশী তদন্তে প্রাপ্ত কাঁচামাল এবং মেশিনারীজ সমূহ ভিটামিন তৈরির কাজে ব্যাবহারে মজুদ করা হয়েছিল, এমনটি তদন্তকারী সংস্থা বা আদালতের নিকট প্রমানীত হয়েছিল?
যে সমাজের রন্ধে রন্ধে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে শাসকগোষ্টি দীর্ঘ ত্রিশ বছরের অধিককাল অনৈতিকতার বীজ রোপন করেছে।সেই সমাজ ৫/১০ বছর সৎ সরকারের শাসনে নৈতিকতা ফিরে আসবে কল্পনা করা বাতুলতা মাত্র। প্রবাদে আছে-“সৎকর্মের খবর স্বকানে শুনেনা, স্বচক্ষেও দেখেনা। অসৎ কর্মের খবর বদিরও শুনে, অন্ধেও দেখে”। অবশ্য আরো একটি অন্তঃনিহীত বিষয় রয়েছে–যেকোন নিষিদ্ধ জিনিষের প্রতি মানুষের আগ্রহ চিরাচরিত। যার ফলে যুগেযুগে প্রতিটি নিষিদ্ধ পণ্যের বিপরীতে গড়ে উঠেছে সমাজে সমাজে, দেশে দেশে অন্ধকার জগৎ। যে জগতে অনায়াসে প্রবেশ করা যায়, কিন্তু বেরিয়ে আসার কোন পথ খোলা থাকেনা।
খুবই ছোটাকারের সহজে বহনযোগ্য অথছ ব্যায়বহুল মাদক “ইয়াবা–ফেন্সিডিলের” বিরূপ প্রভাব ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে দৃশ্যমান। বিশেষ করে শক্তিশালী মাদক ইয়াবার প্রভাবে–পারিবারিক সুখশান্তি,ছাত্র/ছাত্রীদের লেখাপড়া, শ্রমিকদের উৎপাদন, রাষ্ট্রের কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের নিয়মাতান্ত্রিক কর্মতৎপরতা, রাজনৈতিক দলের আন্দোলন-সংগ্রাম সর্বত্রই স্থবিরতা নেমে এসেছে।
অস্বিকারের কোন উপায় নেই–‘রাষ্ট্র চিন্তক রাজনীতিবীদের রাজনীতি, রাজনৈতিক কর্মি বাহিনীর দলীয় কর্মসূচি ভিত্তিক ‘আন্দোলন–সংগ্রামে’র প্রতি অনীহা দৃশ্যমান।”রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজের উন্নয়ন-অগ্রগতির অন্যতম স্বিকৃত সোপান বুদ্ধিজীবি, সুসিল সমাজ সহ সর্বস্তরের বুদ্ধিভিত্তিক সমাজেও নেমে এসেছে নির্লিপ্ততা, হীমশীতল স্থবিরতা।
আগেই বলেছি– আকারে ও প্রকারে অতিশয় ক্ষুদ্রাকৃতির শক্তিশালী মাদক “ইয়াবা–ফেন্সিডিলে’র নেতিবাচক প্রভাবে সর্বত্র নির্লিপ্ততা, স্থবিরতা ও বন্ধাত্বের একমাত্র কারন। শক্তিশালী এবং লোভাতুর মাদক ‘ইয়াবা’ ফেন্সিডিল গোটা দেশ ও জাতিকে নিস্তব্দ, নির্লিপ্ত, স্থবির, অবিবেচক করে দিয়ে মেধাহীন, বুদ্ধিহীন, বিকলাঙ্গ প্রজম্ম গড়ে তুলছে।ঘটে যাওয়া হাজার হাজার ঘটনার নেপৈথ্যের ইতিহাস বিশ্লেষন করলে আমার উল্লেখিত অভিমতের সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে।
এককথায়–গোটা জাতি, রাষ্ট্র, সমাজ অবচেতন এবং ঝিমিয়ে পড়ার একমাত্র কারণ ফেন্সিডিল-ইয়াবা। বলতে গেলে- এই দুই প্রকার মরন নেশার নিয়ন্ত্রনে গোটা দেশ–নেশায় বুঁথ গোটা প্রজম্ম। রাষ্ট্রচিন্তকদের অলক্ষে গড়ে উঠছে অলস, অথর্ব, বুদ্ধিহীন, অবিবেচক, অরাজনৈতিক,অসামাজিক, বিকলাঙ্গ জাতি। গোটা দেশ সহসাই অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে উপনীত বললে একেবারেই অত্যুক্তি হবেনা।
ইহা একান্ত সত্য যে, সহসাই প্রজম্মকে জাগ্রত করার উপায় খুঁজে না পেলে, অচিরেই চিরতরে গোটা জাতি নিশ্চিত তলিয়ে যাবে। অচিরেই ভেঙ্গে পড়বে বাঙ্গালী জাতির ঐতিহ্যগত পারিবারিক, সামাজিক বন্ধন। ভেঙ্গে পড়বে রাষ্ট্রীয় কাঠামো– এতে কোন পক্ষের সন্দেহের অবকাশ আছে বলে অন্ততঃ আমি মনে করিনা। এক সমীক্ষায় প্রকাশিত হয়েছে বছরে মাদকের পেছনের সমূদয় খরছ, এক পদ্মাসেতু নির্মানেরও অধিক। ইহাই প্রমান করার জন্যে যথেষ্ট বর্তমান সময়ে মাদকের ভয়াবহতা, সার্বজনীনতা।
সরকারের আইন-শৃংখলা বাহিনী বিলম্বে হলেও রাষ্ট্র এবং সমাজের সার্বিক নেতিয়ে পড়া, সমাজের পারিপাশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করতে পেরেছিল। আমি এবং আমার মত অনেকেই বিশ্বাস করেছিল আইনশৃংখলা বাহিনীর দ্বারা অতীতে যদিও সম্ভব হয়নি মাদক নিয়ন্ত্রন এবার সম্ভব হবে। দেশবাসীও মনে করেছিল দেরীতে হলেও সরকারের আইন-শৃংখলা বাহিনী ব্যাক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রের ঝিমিয়ে পড়ার যথাযথ কারন অনুধাবন করতে পেরেছে।এই বিশ্বাসের কারন ছিল- সরকারের পক্ষ থেকে যথারীতি দৃশ্যমান কায্যকর উদ্যোগ গ্রহন, নিরপেক্ষভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যাবহারের সরকার প্রধানের আন্তরিকতা অনূভব করে। মাদক নিয়ন্ত্রনে সরকার প্রধানের কঠোর নির্দেশনা সকল মহলের প্রসংশা কুড়িয়েছিল।
সরকার প্রধান এবং আইনশৃংখলা বাহিনী মাদক নিয়ন্ত্রনে বারংবার জিরো টলারেন্সের ঘোষনা জনমনে স্বস্তি, শান্তি আনতে পেরেছিল। আইনশৃংখলা বাহিনী’র কতিপয় প্রসংশনীয় উদ্যোগ, কায্যকর ব্যবস্থা কিছুকিছু ক্ষেত্রে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল।
নিশ্চিত করে বলতে পারি–“আইন শৃংখলা বাহিনীর দু একটি অনিভিপ্রেত ঘটনা ব্যাতিরেকে, সার্বিক মাদক নির্মূল অভিযান সর্বস্তরের জনগনের অকুন্ঠ সমর্থন, আন্তরিকতা, সার্বিক সহযোগীতা পেয়েছিল। মাদকাসক্ত সদস্যদের জ্বালা যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে–“পিতা কতৃক মাদকাসক্ত পুত্র, স্ত্রী কতৃক মাদকাসক্ত স্বামী, ভাই কতৃক মাদকাসক্ত ভাইকে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার একাধিক ইতিবাচক উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল।সার্বিক মাদক নিয়ন্ত্রন অভিযানের সফলতা জনমনে স্বস্তি, শান্তি, আনন্দ, উল্লাস লক্ষনীয়ভাবে ফুটে উঠেছিল।আইনশৃংখলা বাহিনীর সাঁড়াষি অভিযান জনমনে কাংক্ষিত আস্থা, মাদক নিয়ন্ত্রনে দৃশ্যমান বিশ্বাস স্থাপন করতে পেরেছিল।
উচ্চবিত্তের চৌয্যবৃত্তির উল্লেখযোগ্য, সাড়াজাগানো এবং ব্যাতিক্রমি ঘটনা সমূহ এখনও ঘটে চলেছে সমাজের প্রতিটি স্তরে। প্রতিটি ঘটনাই একই দৃষ্টিকোন থেকে দেখার যথেষ্ট উপকরন বিদ্যমান রয়েছে। প্রতিটি ঘটনা উচ্চবিত্তের সহজ উপায় অথবা চৌয্যবৃত্তির মাধ্যমে অবৈধ অর্থের অহরণ এবং উক্ত অর্থ অবাধ, যথেচ্ছ ব্যবহারের সুযোগ, প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য ব্যায়ের দৃষ্টান্ত গোটা জাতিকে অনৈতিকতার পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত করে চলেছে।
অবৈধ অর্থ অর্জনের চতুর্মূখী পথ খোলা রেখে এবং উক্ত অর্জিত অবৈধ অর্থ যথেচ্ছ ব্যবহারের উপকরন রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে লালন করে সমবন্টনের সমাজ কল্পনা করা বাতুলতা মাত্র।তেমনি বছর বছর অবৈধ উপায় অর্জিত অর্থ যথাযথ বৈধকরনের সকল পথ রাষ্ট্রীয়ভাবে উম্মুক্ত রেখে সামাজিক বৈশম্য দুরীকরন সম্ভব নয়।
ঘুষ, দুর্নীতি, সুদ, পতিতাবৃত্তি, মদ, জুয়া, মাদক রাষ্ট্রীয়ভাবে লালন করে যেমন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অস্থীরতা দূরীকরন সম্ভব নয়।তেমনি ঘুষ দুর্নীতি, দখলবাজী, টেন্ডারবাজী, দুর্বৃত্তায়নে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা অব্যাহত রেখে সামাজিক নীতি নৈতিকতার উন্নয়ন কোন ভাবেই সম্ভব নয়।
শুধুমাত্র কঠোর আইন প্রনয়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে উচ্চবিত্তের অহমিকায় সৃষ্ট দুস্তর পথ রুদ্ধ বা নিয়ন্ত্রন সম্ভব হবেনা।এর জন্য প্রয়োজন সম্পদ আহরনের বৈধ উৎসের যথাযথ জবাবদিহীতা নিশ্চিতকরন। অবৈধ উৎসের ছিদ্র অন্বেষন, অবৈধ অর্থের উৎসমূখে প্রয়োজনে পাথর ঢালাই বাঁধ নির্মান। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর, পরিদপ্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল নিশ্চিতকরন সহ তাঁদেরকেও তদারকীতে রাখার উপযুক্ত সংস্থা গঠন। এইসব রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ বাস্তবায়নে সর্বাজ্ঞে প্রয়োজন জনগনের নির্বাচিত শক্তিশালী সরকার কতৃক সম্পদের সূষম বন্টনের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রনয়ন।
সর্বাত্বক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলে–বৈধ সম্পদ অর্জনে রাষ্ট্রীয় পয্যায় উৎসাহ প্রদান, অবৈধ সম্পদের যথাযথ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পয্যায় ”তিরস্কারে”র ব্যবস্থা গ্রহন।এর জন্যে সর্বাজ্ঞে প্রয়োজন অনৈতিকতা, ঘুষ, দূর্নীতি শব্দ সমূহের প্রতি জনগনের পুর্বের প্রচলিত ঘৃনাকে পূণঃপ্রতিষ্ঠাকল্পে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উদ্যোগ গ্রহন এবং নেতিবাচক শব্দসমূহকে ঘৃনিত শব্দের ‘প্রথায়’ রুপান্তরের ব্যবস্থা গ্রহন।
অসামাজিক, অনৈতিক, অসাধু কাজে “তিরস্কার প্রথা”র প্রক্রিয়ায় জাতিকে উদ্ভোদ্ধকরনের নিমিত্তে–“নিয়ন্তর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক গোষ্টি সর্বপয্যায়ে প্রচার প্রচারনায় অংশগ্রহন রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত করণ অতিব জরুরী। নীতি ও নৈতিকতার সামাজিক ধর্মীয় দিক সমূহ প্রচার প্রচারণা এবং বাস্তবক্ষেত্রে কঠোর অনুশীলন অব্যাহত রাখাই হতে পারে নেতিয়ে পড়া সমাজকাঠামো উন্নয়নের একমাত্র মোক্ষম হাতিয়ার। ঘুষ, সুদ, দুর্নীতি, মাদক, পতিতা বৃত্তি, জুয়া, মিথ্যা ইত্যাদি সামাজিক ও ধর্মীয় অনৈতিক বিষয় সমূহ সমাজে নিরুৎসাহীত করনের লক্ষে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে উক্ত বিষয় সমূহের কূফল সম্পর্কে নিয়মিত প্রচার প্রচারনা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে অব্যাহত রাখা বাঞ্চনীয়। বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মোটিবেশন কায্যক্রম অব্যাহতভাবে চালু রাখাই হ’তে পারে, বাংলাদেশের পতিত সমাজের উন্নতির একমাত্র চাবিকাঠি।
উল্লেখিত বিষয় সমূহে লক্ষ অর্জনে “ঐশী”র ডেথ রেফারেন্স শুনানীতে মহামান্য আদালতের দেয়া পয্যবেক্ষন হতে পারে অন্যতম এক ‘মহৎ উৎস’। “ঐশী”র মৃত্যুদন্ড রহিত করে যাবজ্জীবন কারাভোগের পয্যবেক্ষনে মহামান্য আদালত বলেন-“আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা সহ বিভিন্ন দেশে মৃতুদন্ডকে নিরুৎসাহীত করা হয়েছে। আমাদের দেশে মৃত্যুদন্ড কমানোর কোন ”গাইড লাইন” আজব্দি নেই, এবং কি বিলুপ্ত করার পরিবেশ এখনও আসেনি। শিক্ষার হার বেড়েছে সত্য সাথে জনসংখ্যাও বেড়েছে,পাল্লা দিয়ে অপরাধ প্রবনতাও বেড়েছে। এমত:বস্থায় “মৃত্যুদন্ড রহিতকরন” আদৌ সম্ভব নয়, সামাজিক পরিবেশ উন্নয়ন যতক্ষন সম্ভব হবেনা, ততক্ষন অমানবিক মৃত্যুদন্ড আইন রহিত করা সম্ভব নয়।
আদালত আরো বলেন–অপরাধ প্রবনতা নিয়ন্ত্রনে “মৃত্যুদন্ড একমাত্র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নয়”। এটি কায্যকর করলেই যে সমাজ থেকে অপরাধ দূর হবে তা নয়। কম সাজাও অনেক সময় সমাজ থেকে অপরাধ প্রবনতা কমাতে সুস্পষ্টভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বা সাহায্য করতে পারে। মৃত্যুদন্ড রহিত করতে সমাজের প্রতিটি স্তরে সূশাষন ও মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবনতারোধে সচেতেনতা বৃদ্ধি করাই উত্তম পথ বিবেচিত বিশ্বের দেশে দেশে, সমাজে সমাজে। শুধু রাষ্ট্রের মধ্যে নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের শক্তিশালী জনপ্রতিনীধিত্বশীল ব্যবস্থাপনাই সুশাসন নিশ্চিত করতে পারে, সমাজের অনৈতিকতা দূরিকরন করতে পারে। অনির্বাচিত তথাকথিত জনপ্রতিনীধিদের মানসিক জোর কখনই থাকেনা সমাজের অনৈতিকতা দুরিকরণে কায্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে, ইহা পরিক্ষিত এবং বাস্তব সত্য।
রুহুল আমিন মজুমদার, সম্পাদক।।