খুলনায় শীর্ষ ৫০ মাদক বিক্রেতার নতুন তালিকা, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ৫৩
খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় মাদক বিক্রিতে শীর্ষ তালিকায় রয়েছেন ৫০ জন। এদের কাছ থেকে খুচরা মাদক বিক্রেতাদের হাত ঘুরে বিভিন্ন জেলায় মাদকের স্পটে পৌঁছে যায়।
খুলনা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের গোয়েন্দা বিভাগ শীর্ষ মাদক বিক্রেতাদের এমন একটি হালনাগাদ তথ্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বশেষ গত ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত খুলনা বিভাগে র্যাব ও পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৫৩ মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছে।
অভিযানের সময় মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদক বিক্রেতাদের হাতে হামলারও শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
খুলনা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্র মতে, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় মাদক বিক্রেতার শীর্ষ তালিকায় রয়েছে খুলনা জেলার রূপসা উপজেলা রামনগর এলাকার মো. হালিম শেখ (৩৩), দৌলতপুর থানাধীনে মিনাক্ষী রোডের আলম আজম, কাশিপুরে মো. শেরেকুল (৪৫), দাকোপ উপজেলা চালনা বাজার এলাকার আসমা বেগম (৪০) এবং দৌলতপুরে রেলগেটে রেললাইনের পূর্ব পাশের চম্পা বেগম (২৫)।
এর বাইরে খুলনায় জেলায় চিহ্নিত পাইকারি ও খুচরা মিলে আরও ২০ জন মাদক বিক্রেতা রয়েছে।
এছাড়া বাগেরহাটে শীর্ষ মাদক বিক্রেতার তালিকার মধ্যে মোল্লাহাটে হেলাল মোল্লা (৪৫), জাকির মোল্লা (৩৫), ফকিরহাটে সুজন, রনবিজয়পুর গ্রামে মো. দেলোয়ার হোসেন (৫২) ও তামালতলা গ্রামে মো. মুকুট (৪৮)। সাতক্ষীরার দেবহাটায় মো. আমিরুল (৩৫), কালীগঞ্জে জহির আলী (৪০), দেবহাটায় আ. ওহাব কারিগর (৪৫), আমজাদ (৩৫) ও নজরুল (৪৫) রয়েছে।
সূত্র জানায়, যশোর জেলায় অভয়নগরে মহিদুল ইসলাম (২৫), মণিরামপুরে মসিয়ার (৪৫), বেনাপোল পোর্টে মো. মিন্টু হোসেন (৪০) ও মো. আ. সাত্তার মোড়ল (৪৫) এবং নড়াইল জেলায় রয়েছে কালিয়ায় শহিদ বিশ্বাস (৩৫), নড়াগাতী থানাধীন বাবুল মোল্লা (৩৫), নড়াইল থানাধীন শামীম ম-ল (৪০), শেখ বদিরুজ্জামান ওরফে বদর শেখ (৪৫) ও পাপ্পু মোল্লা (২৮)।
তালিকায় আরও রয়েছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে রুবি বেগম (৫০), লালভানু (৪৫), শৈলকুপায় মিল্টন হোসেন (৩৫), বাঘাযতীন সড়ক এলাকায় কায়েম হোসেন (৩৫) ও মহেশপুরে আব্দুর রাজ্জাক (৩৬) ও মাগুরা জেলায় রয়েছে মোহাম্মদপুর থানাধীন এলাকায় দাউদ শেখ (৩৫), মাগুরা থানাধীন আরজিনা বেগম (৪২), অশোক কুমার দাস (৪৫), রেজাউল (২৮) ও মো. রাসেল (৩০)।
কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে ভেড়ামারায় মাজেদুল (৩০), সিদ্দিক প্রামাণিক (২০), দৌলতপুর থানাধীন দৌহিদুল ইসলাম (৩০), আনোরুল ইসলাম (৩৫) ও রুবেল (২৫) এবং চুয়াডাঙ্গা জেলার মধ্যে জীবননগর থানাধীন স্বপন (৩৫), জুলিয়া (২৫), সিরাজ (৩৫), চুয়াডাঙ্গায় সীপ্রা বেগম (৩০) ও বাবলু (৩৫) ও মেহেরপুর জেলায় শীর্ষ মাদক বিক্রেতাদের তালিকার মধ্যে রয়েছে মেহেরপুর থানাধীন এলাকায় মো. নজরুল ইসলাম নজু (৫৫), মো. আরজ আলী (৫৫), মো. লালন ম-ল (৪০), মোসা. মালা খাতুন (৪৫) ও গাংনী থানাধীন আক্কাস আলী (৪০)।
বিভাগীয় মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সূত্র জানায়, শীর্ষ মাদক বিক্রেতারা ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা ও হেরোইন পাইকারি বিক্রি করে থাকে। এদের হাত থেকে খুচরা মাদক বিক্রেতাদের বিভিন্ন হাত ঘুরে স্ব স্ব জেলার মাদক স্পটে পৌঁছে যাচ্ছে।
মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হলে গত ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত খুলনা বিভাগের মাদক বিক্রেতাদের সাথে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তালিকাভুক্ত ৫৩ মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছে। এরা হচ্ছে- খুলনা সদর থানাধীন এলাকায় বাসিন্দা মোঃ রাজু, মানিক শেখ, খুলনার দৌলতপুর থানাধীন ইমরান ওরফে রকি, নওয়াপাড়ায় আবুল কালাম (৪৭), হাবিবুর রহমান শেখ (৩৮), মিলন কাসারী (৪০), শার্শায় মুক্তাজুর রহমান (৩০), সিরাজুল ইসলাম (৪০), চৌগাছায় শফিকুল ইসলাম (৩৫), ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সবদুল হোসেন ম-ল (৪৮), জীবননগরে জোনাব আলী (৩২), মাগুরায় আইয়ুব আলী (৫০), মিজানুর রহমান কালু (৩৮), চুয়াডাঙ্গায় কামরুজ্জামান সাদু (৫০), কালীগঞ্জে শামীম সরদার (৪৫), সাতক্ষীরা কলারোয়ায় ইউনুস আলী দালাল, আনিছুর রহমান (আনিছ), অভয়নগরে আবুল কালাম (৪০), কুষ্টিয়ায় হালিম ম-ল (৩৫), শামসুদ্দীন ওরফে শ্যাম (৩৬), মোকাদ্দেস আলী (৪০), ফুটু ওরফে মোন্না (৩৫), রাসেল আহম্মেদ (৩০), মেহেরপুরে হাফিজুর রহমান হাফি (৪৮), শৈলকুপায় রফিকুল ইসলাম লিটন (৩৬), বাগেরহাটের চিতলমারীর মিঠুন বিশ্বাস (৪৫), সাতক্ষীরা ভোমরায় খলিলুর রহমান পুটে (৪০), ঝিনাইদহে ফরিদ (২৫), সাজ্জাতুল ইসলাম ডি এম (৩৫), যশোরে মানিক (২৭), মো. শহিদুল ইসলাম (৪৫), আব্দুর রাজ্জাক (৩৪), বাবলা হোসেন (২৬), জাহিদ হাসান টোকন (২৯), শাহিনুর রহমান শাহিন (৩৫), রাজু আহম্মেদ (৩২), মো. শহিদুল (৩৫), লিটন হোসেন (৪২), আহসান আলী (৫৬), কুষ্টিয়ায় মোকাদ্দেশ হোসেন (৪২), রতন আলী (৩৫), মদন (৪৫), মোকাদ্দেস আলী (৪০), শামসুদ্দীন ওরফে শ্যাম (৩৬), নাইম ইসলাম (২৭), ফজলুর রহমান টাইটেল (৪৮), জোয়ার আলী (২৮), সাতক্ষীরা কলারোয়ায় আনিসুর রহমান (৪০), মাগুরা সদরে বাচ্চু চোপদার (৫৫), রায়হান ঢালী ব্রিটিশ (২০), কিশোর অধিকারী (৪২), নড়াইলে সজিব (২৫), গোলাম মোস্ত ওরফে ঘোলা মোস্ত (৫০) এবং চুয়াডাঙ্গায় তানজিল আহম্মেদ (৩০)। এ সব মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে স্ব স্ব থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
খুলনা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, তাদের মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, অস্ত্র ছাড়াই মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে কর্মকর্তারা থাকেন আতঙ্কে। সম্প্রতি ‘খ’ সার্কেলের পরিদর্শক সাইফুর রহমান রানা এক মাদক বিক্রেতাকে ধরতে গিয়ে হামলায় শিকার হন।
এই কর্মকর্তঅ বলেন, মাদক বিক্রেতারা নিজেদেরকে বাঁচানোর জন্য অস্ত্র ব্যবহার করছে, সেখানে আমরা অভিযানে গেলে জীবনের ঝুঁকিতো থাকবেই।
খুলনা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক পারভীন আক্তার বলেন, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় শীর্ষ মাদক বিক্রেতার তালিকা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এর বাইরে খুচরা বিক্রেতারা রয়েছে। কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছে আবার কেউ নতুন মাদক বিক্রির পেশায় জড়িয়ে পড়ছে।
সম্প্রতি রায়পাড়া রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিজু নামে এক ফেনসিডিল বিক্রেতাকে আটক করা হয়েছে। সে দীর্ঘদিন ধরে গোপনে ফেনসিডিল বিক্রি করে আসছিল।UNB