বিভ্রান্তরা জনগণের ক্ষুদ্র একটি অংশ সেটাই প্রমাণ হয়েছে এবারের নির্বাচনে- আবদুল্লাহ হারুন জুয়েল
সোশ্যাল মিডিয়ার গুজব ও অপপ্রচারে জনগণের একটি অংশ বিভ্রান্ত হতে পারে, কিন্তু বিভ্রান্তরা জনগণের ক্ষুদ্র একটি অংশ সেটাই প্রমাণ হয়েছে এবারের নির্বাচনে। বিএনপিকে জনগণের সমর্থন করার মত একটি যৌক্তিক কারণও ছিল না। তবু তারা কিছু সংখ্যক মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পেরেছিল, এটা অবশ্যই তাদের সাফল্য। আর এই বাস্তবতা বিবর্জিত ধারণা তৈরিতে যে কয়েকটি ফ্রন্ট ভূমিকা রেখেছে তার অন্যতম হচ্ছে কোটা আন্দোলনের নামে মাঠে নামা শিবিরের অনলাইন এক্টিভিস্টরা। কর্মকাণ্ড শুরু করার পর থেকেই আমরা অনেকে বলেছিলাম, শেষ পর্যায়ে কৌশলগত কারণে বলা সম্ভব হয় নি।
গত ছয় মাস ধরে কোটা ছাগুরা যা করেছে তা হচ্ছে ছাত্রছাত্রী ও অনলাইন ইউজারদের মধ্যে বিষ প্রয়োগ। মাঠে সংগঠিত করে কিছু করবে এমন সক্ষমতা তাদের ছিল না কিন্তু নিরপেক্ষতার ভান করে ও সাধারণ ছাত্রদের প্রতিনিধি দাবি করে যে ক্ষতি করেছে তা নির্ধারণ করা যাবে না।
বিষয়টি এমন নয় যে তারা একটি ফোরাম গঠন করেছে এবং তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ব্যক্তিদের প্রভাবিত করেছে। বরং অনলাইনে গ্রুপ তৈরি করে লাখ লাখ মানুষকে যুক্ত করা হয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বলতে দেয়া হয় নি একজনকেও, বরং ব্যান করেছে। অন্যদিকে ক্রমাগত বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়িয়েছে। তারুণ্যের ইশতেহার নামে যে প্রচারণা চালিয়েছে তার উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র ৪ কোটি ২০ লাখ বেকার আছে এমন একটি মিথ্যা তথ্যকে প্রতিষ্ঠা করা।
কোটা ছাগুদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। রাজাকারদের সমতূল্য করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁসির দাবি করা হয় ফখরুলের ভাঁওতাবাজি ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত। সরকার নিষিদ্ধ করেছে এমন সকল ভুয়া পোর্টালের প্রচারণার ক্ষেত্র ছিল সেই গ্রুপ। সরকারের এত সাফল্যের বিপরীতে কোথায় কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে সেটাই ছিল প্রচারের উপাদান। সংস্কার টিভি সহ বিভিন্ন পেইজ ও গ্রুপ খুলে জামায়াতকে গ্রহণযোগ্য করার অপচেষ্টা চলে। বিভিন্ন টকশো থেকে বিএনপির পক্ষে যায় এমন খন্ডিত অংশ প্রচার করে। আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতি শিক্ষক, সাংবাদিক থেকে শুরু করে সকলকে দালাল হিসেবে প্রচার চালানো হয়েছে। সিইসি ও উপাচার্যদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত আপত্তিকর প্রচারণা চলেছে। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থক হলেই তাকে দেবতা জ্ঞান করে প্রচার করা হয়।
কোটা গ্রুপের প্রাথমিক লক্ষ্যই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও ছাত্রলীগ। শিবিরকে ধোলাই দেয়া এদেশের ছাত্রদের ঐতিহ্য। কিন্তু শিবির মারার কারণে হাতুড়ি লীগ আখ্যা দিয়ে অপপ্রচার চলেছে। সরকারি ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে মিনিমাম অভিযোগ পাওয়া যায় না কিন্তু উপস্থাপন করা হয়েছে সন্ত্রাসী হিসেবে।
প্রতিবার কোটা ছাগুরা ধোলাই খাওয়ার পর সংযত হয়েছে। এবার নিরাপদ বাংলাদেশ চাই নামে মাঠে নামার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ধোলাই খাওয়ার পর নিরপেক্ষ সাজার চেষ্টা করেছে।
এখনো এই ছাগুদের ম্যা ম্যা অব্যাহত আছে। যারা আগে নির্বাচন দেখেছেন তাদেরকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে কোনো জাতীয় নির্বাচন এতটা শান্তিপূর্ণ হয় নি। কিন্তু বিতর্ক তৈরিতে এখনো সক্রিয় তারা।
ঐক্যফ্রন্ট সকল আসনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এজেন্টদের যেভাবে তিন স্তরে দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছিল তাতে অন্তত কয়েকটি আসনে বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার থাকার কথা। তারা যে ধারণা পোষণ করতো তাতে বাস্তবতার লেশমাত্র থাকলে উল্লেখযোগ্য আসনে তার প্রতিফলন ঘটতো। তা না ঘটলেও একই ধারণা বহাল রাখতে অনলাইন ব্যবহার করে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে বিতর্ক তৈরির অপচেষ্টা চলছে।
এবার গুজব ও অপপ্রচার প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত কোটা ছাগুদের গুটিকয়েক শিবির কর্মী যে অপতৎপরতা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ইতোমধ্যে তারা যে ক্ষতি করেছে তা পূরণে সময় লাগবে।
আবদুল্লাহ হারুর জুয়েল এর ফেসবুক থেকে