শ্রীলঙ্কার তওহীদ জামায়াত কারা?
গতকাল রবিবার ইস্টার সানডেতে শ্রীলঙ্কায় গির্জাসহ কয়েকটি স্থানে ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৯০ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
দেশটির কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল তওহীদ জামায়াত নামের একটি দলের ওপর ‘ফোকাস’ করে এ তদন্ত চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তওহীদ জামাত দেশটির এমন একটি ছোট্ট দল যাদের সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তারা ইসলামের সন্ত্রাসী মতাদর্শ প্রচার করে থাকে।
কেউই এই আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করেনি। এ ঘটনার নেপথ্যে জড়িত কোনো গোষ্ঠীকে এখনো পর্যন্ত চিহ্নিত করতে পারেনি শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ। তবে তারা বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন লোককে গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে, ওই হামলার ১০ দিন আগে একজন পুলিশ কর্মকর্তা ন্যাশনাল তওহীদ জামাত কর্তৃক গীর্জার ওপর সম্ভাব্য হুমকির বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে রবিবার জানিয়েছেন, তিনি এবং অন্য শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা হুমকি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না।
তিনি বলেন, কী কারণে যথাযথ পূর্বসতর্কতা অবলম্বন করা হয়নি তা অবশ্যই আমরা খতিয়ে দেখবো।
২০১৬ সালে শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ মূর্তি ভাঙ্গার সঙ্গে ন্যাশনাল তওহীদ জামায়াতের নাম জড়িয়ে ছিল। দলটির সেক্রেটারি আবদুল রাজিককে বর্ণবাদের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তাতা করা হয়েছিল।
ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ শ্রীলংকায় কয়েক দশক ধরে গৃহযুদ্ধ চলেছে। ২০০৯ সালে এই গৃহযুদ্ধের অবসান হয়। দেশটিতে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের সহিংসতার খুবই কম ইতিহাস রয়েছে।
গৃহযুদ্ধের সেই সংক্ষুদ্ধ সময়ে শ্রীলঙ্কার সরকার ব্যাপকভাবে বৌদ্ধ অভিজাতদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছিল।
জাতিগত তামিলদের বিদ্রোহ দমন করতে এ পন্থা অবলম্বন করেছিল সরকার। তামিলরা জাতিগতভাবে মূলত হিন্দু। কিন্তু তাদের মধ্যে মুসলমান ও খ্রিস্টানও ছিল।
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য স্টাইল অব ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম নামের সংস্থার পরিচালক অ্যান স্পিকার্ড জানান,বিদ্রোহ করা ন্যাশনাল তওহীদ জামায়াতের লক্ষ্য নয়। বরং তাদের লক্ষ্য হলো, বিশ্বব্যাপী চলমান জিহাদি আন্দোলনকে শ্রীলঙ্কায় ছড়িয়ে দেওয়া এবং সমাজে ঘৃণা, ভয় ও বিভাজন করা।
তিনি বলেন, এটি (জামায়াত) একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট নয়। এটা ধর্ম এবং শাস্তির বিধান নিয়ে কাজ করে।
স্পিকার্ড জানান, রবিবার সমন্বিত আত্মঘাতী বোমা হামলায় শ্রীলঙ্কার রোমান ক্যাথলিক সংখ্যালঘু এবং হোটেলগুলোর বিদেশি পর্যটকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়। প্রধান ইসলামী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর মতোই এ হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, এই হামলাগুলো বেশ আলাদা বলে মনে হচ্ছে। আইএসআইএস, আল কায়েদা, বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদী জিহাদি সংগঠনগুলোর কৌশলকে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে। ধর্মের ঘৃণাকে উপজিব্য করে কয়েকটি গীর্জায় ধর্মীয় ছুটির দিনে আক্রমণ করা হয়েছে।
সূত্র : দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস