আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ
রোহিঙ্গাদের জরুরি সহায়তা অব্যাহত রাখুন
বাংলাদেশে আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি সহায়তা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। শুক্রবার বাংলাদেশ সফর শেষে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের তিন সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে তারা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে কাজ করে যাওয়ার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন।
সম্প্রতি তিন দিনের বাংলাদেশ সফরে আসেন জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা ও জরুরি ত্রাণ বিষয়ক সমন্বয়ক মার্ক লোকক, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক অ্যান্টনিও ভিটোরিনো এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি। সফর শেষে দেয়া ওই যৌথ বিবৃতিতে তারা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও সংকটের সমাধানে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করে যাবেন বলে উল্লেখ করেছেন।
সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গাদের সর্বশেষ পরিস্থিতি দেখার পর তাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেন। বিশেষত শিশুশিক্ষার ওপর বেশি জোর দেন তারা। কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন, শরণার্থীদের অর্ধেকের বেশির (প্রায় ৫ লাখ ৪০ হাজার) বয়স ১২-এর নিচে।
ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ‘এটা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী সংকট। বাংলাদেশে ৯ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। এদের অধিকাংশই ২০১৭ সালে আসা। আমি সেখানে (শরণার্থী শিবির) বেশ উন্নতি দেখেছি। কিন্তু নারী ও শিশুদের অবস্থা এখনও উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। সংকটকালীন অবস্থা দুই বছর ধরে রয়েছে। শরণার্থীদের শিক্ষা ও দক্ষতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য প্রস্তুতও করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ এখনও ঝুলে রয়েছে।’
ঝড়-বৃষ্টির মৌসুম শুরুর মুহূর্তে বাংলাদেশ সফর করলেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। কক্সবাজারের পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থান করা শরণার্থীরা বন্যা, ভূমিধস ও রোগের প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অবস্থায় শরণার্থীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র, অবকাঠামোর উন্নয়ন ও প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবী প্রয়োজন। এ কারণে আরও অর্থ ও প্রয়োজনীয় সহায়তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত এগিয়ে আসার আহ্বান জানান আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার প্রধান ভিটোরিনো।
প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে চাপ দেয়া হচ্ছে : যুগান্তরের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার বিকাল ৩টায় কক্সবাজারের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেন জাতিসংঘের তিন কর্মকর্তা। সম্মেলনে ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের জনগণ, মিয়ানমারকেই তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকারকে চাপ দেয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এখনও নিরাপদ নয় মিয়ানমার। রাখাইনে এখনও বিচ্ছিন্ন সহিংসতা রয়েছে।’
এর আগে তারা উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরের ১১, ১৬ ও ১৭নং ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং নারী ও শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন। ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি গত বৃহস্পতিবার বিকালে কক্সবাজার পৌঁছে জেলা প্রশাসন এবং কক্সবাজার ত্রাণ ও রোহিঙ্গা শরণার্থী কমিশনারের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।