চাঁদপুরে সংখ্যালঘু স্কুল শিক্ষিকাকে গলা কেটে হত্যা
চাঁদপুরে স্কুল শিক্ষিকাকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত শিক্ষিকার নাম জয়ন্তী চক্রবর্তী।
তিনি শহরের ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। রবিবার রাত সাড়ে ৮টায় শহরের ষোলঘর ওয়াপদা কলোনির নিজ বাসা থেকে পুলিশ হতভাগী এই শিক্ষিকার লাশ উদ্ধার করে। সন্ধ্যার কিছু আগে গলা কেটে শিক্ষিকাকে হত্যা করা হয়েছে, এমন তথ্য পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এ সময় নিহতের স্বজনরা কেউ বাসায় ছিলেন না।
ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল বাবুল জানান, রবিবার জয়ন্তী চক্রবর্তী (৪৮) ছুটিতে ছিলেন। যে কারণে তিনি বিদ্যালয়ে যাননি। হত্যাকাণ্ডের সংবাদ পেয়ে বিদ্যালয়ের পাশে ওয়াপদা কলোনিতে তিনি সহকর্মীদের নিয়ে ছুটে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিহত শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তীর স্বামী অলোক গোস্বামী চাঁদপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা পদ থেকে সদ্য অবসরে যান। যে কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাসায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তারা সেখানে থাকতেন।
তার বড় মেয়ে অনন্যা গোস্বামী এশিয়ান প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছেন।
দ্বিতীয় মেয়ে তন্বী গোস্বামী এবারে এইচএসসি পাশ করেছে এবং একমাত্র ছেলে রাজধানীতে নটর ডেম কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথমবর্ষে পড়াশোনা করছে। আর সেই ছেলেকে নিয়ে রবিবার ভোরে স্বামী অলোক গোস্বামী ঢাকায় যান। ঘটনার সময় দুই মেয়েও বাসায় ছিলেন না। ফলে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা দিনের কোনো এক সময় বাসায় ঢুকে শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তীকে গলায় ধারাল অস্ত্র দিয়ে জবাই করে হত্যা করে।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশের সুরতহাল শেষে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, দুর্বৃত্তরা খুব ঠান্ডা মাথায় জয়ন্তী চক্রবর্তীকে হত্যা করে। তবে ঘাতকরা বাসা থেকে কোনো কিছু নিয়ে যায়নি। লাশ বাসার মেঝেতে পড়েছিল। তার পাশেই ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ছিল। এমনকি টিভি সেটও চালু ছিল। মিজানুর রহমান আরো জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের যে চারতলা দালানে জয়ন্তী চক্রবর্তী পরিবার নিয়ে থাকতেন, সেখানে অন্য কোনো পরিবার ছিল না। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, যারাই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের দ্রুত আটক করে আইনের হাতে সোপর্দ করা হবে।
নিহত জয়ন্তী চক্রবর্তীর সহকর্মী চাঁদপুর হাসান আলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ইসমত আরা বন্যা বলেন, বেশ বিনয়ী ও সজ্জন ছিলেন, জয়ন্তী চক্রবর্তী। তার কোনো শত্রু থাকতে পারে না। তাকে কেনো এভাবে হত্যা করা হলো- এমন প্রশ্ন করেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতা শাহাবউদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, এভাবে একজন শিক্ষককে হত্যার ঘটনা কোনো অবস্থায় মেনে নেবার মতো নয়। তাই এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
এদিকে, রাতেই নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। সদর মডেল থানার ওসি মো. নাসিমউদ্দিন জানান, পরিবারের সদস্যরা রাজধানী ঢাকা থেকে ফিরে আসার পর এই ঘটনায় মামলা রুজু করা হবে।
নিহত শিক্ষক জয়ন্তী চক্রবর্তীর বাবার বাড়ি চাঁদপুরে শাহরাস্তি উপজেলায়। স্বামীর বাড়ি কিশোরগঞ্জে। বিগত ১৯৯০ সালের ১৬ মে শিক্ষক পদে যোগদান করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ মাস আগে চাঁদপুরের এই ষোলঘর এলাকায় দুর্বৃত্তদের হাতে কলেজ অধ্যক্ষ শাহীন সুলতানা ফেন্সী নিহত হন।