পুড়ে যাচ্ছে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’, ভয়াবহতার ছবিতে কাঁদছে বিশ্ব
পুড়ছে অ্যামাজন। সর্বগ্রাসী আগুণে ছাই হয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম ‘রেনফরেস্ট’। এবারের অগ্নিকাণ্ড এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ- এমনটিই বলছে ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ।
স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে আগুনের বিস্তার মেপে ওই সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৮ সালের তুলনায় ৮৩ শতাংশ বেশি পুড়ছে অ্যামাজনের সবুজ।
গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে জ্বলতে থাকা ছোট-বড় আগুনের সংখ্যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ১৯৪টি।
ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ-এর হিসাব মতে, দাবানলে প্রতি মিনিটে অ্যামাজনের প্রায় ১০ হাজার বর্গমিটার এলাকা পুড়ে যাচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এ অবস্থা চলতে থাকলে জলবায়ু পরিবর্তনবিরোধী লড়াইয়ে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে থাকা অক্সিজেনের ২০ শতাংশেরই উৎপত্তি অ্যামাজনে। গবেষকদের মতে এই বন প্রতিবছর ২০০ কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। সে কারণে একে ডাকা হয়ে থাকে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ নামে।
এ কারণে অ্যামাজনে ব্যাপক মাত্রার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার কমাতে অ্যামাজনের ভূমিকাকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। বিশ্বের দীর্ঘতম এ জঙ্গলটির আয়তন যুক্তরাষ্ট্রের আয়তনের প্রায় অর্ধেক।
অ্যামাজন জঙ্গলে ৩০ লাখ জাতের উদ্ভিদের আবাসস্থল। এখানে বাস করেন ১০ লাখ মানুষ।
ইতিমধ্যে মানুষের প্রাণহানির কোনও খবর না পাওয়া গেলেও পুড়ে ছাই হয় গিয়েছে বেশ কয়েক হাজার হেক্টর জঙ্গল, মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য পশুপাখির।
এতটাই বিস্তার লাভ করেছে এই দাবানল, যে ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরে আটলান্তিক মহাসাগরের উপকূলে ব্রাজিলের সবচেয়ে জনবহুল শহর সাও পাওলো পর্যন্ত পৌঁছে গেছে ধোঁয়া, জানিয়েছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন। ১৯ অগাস্ট সূর্যাস্ত প্রায় দুই ঘণ্টা আগেই পুরো শহরটি অন্ধকারে ছেয়ে যায়।
ব্রাজিলের সরকার অ্যামাজন বন উজাড় হয়ে যাওয়া ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। ২০১৯ সালের আপাত পরিসংখ্যান থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে, অ্যামাজন বনাঞ্চল উজাড় হওয়ার হার প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পর তিনগুণ বেড়ে গেছে।
পরিবেশবাদীদের দাবি, বন সংরক্ষণে অতীতের সরকারগুলোর নীতির বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বলসোনারা। তবে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারো সন্দেহ করছেন বন উজাড় করতে এনজিওগুলো অ্যামাজন জঙ্গলে গিয়ে আগুন ধরাচ্ছে।
এদিকে, গত কয়েকদিন ধরে জার্মানি এবং নরওয়ের সরকার ব্রাজিলের আমাজন ফান্ডে অর্থ অনুদান বন্ধ করে রেখেছে, যা অ্যামাজনের বনভূমি উজাড় হওয়া ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সহায়তার অংশ হিসাবে কেন্দ্রীয় সরকারকে দেয়া হতো। নরওয়ে ছিল এই তহবিলের সবচেয়ে বড় দাতা দেশ। গত এক দশকে দেশটি একশো বিশ কোটি ডলারের বেশি অর্থ সহায়তা দিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্যাটেলাইট প্রকল্প কোপের্নিকাস আগুনের ধ্বংসযজ্ঞের একটি ম্যাপ প্রকাশ করেছে। ব্রাজিল থেকে পূর্ব আটলান্টিক উপকূল পর্যন্ত পুরো ‘আগুন পথের’ চিহ্ন আঁকা হয়েছে। দেশটির অর্ধেক এলাকাজুড়েই এখন কালো ধোঁয়া। সেই ধোঁয়া পৌঁছে গেছে পাশ্ববর্তী পেরু, বলিভিয়া এবং প্যারাগুয়েতেও।
লাতিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে অববাহিত হচ্ছে অ্যামাজন নদী। তবে এর বড় অংশই ব্রাজিলের এই বনটিতে।
বিশ্বজুড়েই ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহ ছবিগুলো সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।