ঝামেলা এড়াতে প্রথম চীন ভ্রমণে যা করবেন!
চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক কোম্পানি গুলোর বেশীর ভাগই চীনের সাথে জড়িত। বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা কাজে সরবরাহকারী, ব্যবসায়িক অংশীদার, কারখানা মালিক ও অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন এবং নিজেদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর জন্যে চীনে যাতায়াত বেড়েছে।
দিনের পর দিন, চীনের অর্থনীতি আন্তর্জাতিক সংবাদ শিরোনাম হয়ে উঠছে। এটা মনে হচ্ছে, যে কোন প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিকভাবে বা নিজ দেশে ব্যবসায় শক্তি টিকিয়ে রাখতে চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ছাড়া উপায় থাকছে না। আমাদের দেশেরও অনেকে চীন যাতায়াত করছেন।
চীনে আপনার প্রথম ব্যবসায়িক ভ্রমনের জন্য পরিকল্পনা করবেন কিভাবে, সেটা নিয়েই নিচে একটু আলোচনা করা যাকঃ নিশ্চিত করুন যে আপনি চীন ভ্রমণের জন্যে একটি ভিসার আবেদন করেছেন। চীনে মার্কিন ডলার ব্যাপকভাবে গ্রহণ করা হয় না, চাইনীজ মুদ্রা “রেনমিনবি” নিয়ে যান সরাসরি। ডলার এক্সচেঞ্জ এ আপনার খরচ বেশী পড়ে যাবে।]
হোটেল রিজার্ভ করুন এবং অভ্যন্তরীণ বিমান টিকেট পূর্বেই করে ফেলুন। আপনি ছোট-খাট সমস্যার জন্যে ঔষধপত্র নিতে ভুলবেন না। স্থানীয় খাদ্য আপনার সহ্য নাও হতে পারে। তবে আমি এবং আমার বন্ধু আকন্ঠ খেয়েছি। কিছুই খারাপ লাগে নি। রহস্যটা পরেই বুঝতে পারবেন।
চীনের মানুষ ইংরেজি জানেই না বললে ভুল হবে না। “How are you?” এর মানে বোঝে না এমন মানুষও কম নয়। রাস্তা ঘাট, দোকান, সাইনবোর্ড সবত্র শুধুই চাইনিজ ভাষা চোখে পড়বে। ইংরেজি ১% বলতে পারেন। চীনের ব্যবসা এবং সংস্কৃতির উপর নির্দেশিকা এবং গাইড রাখতে পারেন
চীনে ব্যবসায়িক ভ্রমনের সময় যোগ্যতাসম্পন্ন চীনা দোভাষী সাথে রাখুন। পরিচিত কেউ না থাকলে দোভাষী ভাড়া করুন। ফেসবুক, গুগল কিংবা ইয়াহু সেখানে কাজ করবে না। তাই আপনি মোবাইল বা কম্পিউটারে VPN সফটওয়্যার ইন্সটল করে যাবেন।
চীনা বিমান গুলোতে চেকইনে জনপ্রতি একটির বেশী বড় ল্যাগ্যাজ বহন করলে আপনাকে মাসুল দিতে হবে ৫০০০/= টাকা করে প্রতিবারে। একটি বড় ল্যাগাজ যা বিমানের সাথে চলে যাবে চেকইনে। আর একটি ছোট ব্যাগ আপনার সাথে রাখা যাবে যাত্রী ক্যাবিনেটে।
সবসময় আগে থেকে পরিকল্পনা করা ভাল। চীনের তিনটি সুবর্ণ সময় আপনাকে ব্যবসায়িক যে কোন ভ্রমণ এড়াতে হবেইঃ চীনা নববর্ষের সময় দুই সপ্তাহ সবকিছু বন্ধ থাকে। জানুয়ারীর মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়টায় তাদের নববর্ষ পড়ে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে (শ্রমিক দিবসের এর ছুটি) এবং অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে (তাদের জাতীয় দিবসের ছুটি)।
চীনা ব্যবসায়ীরা খুবই অতিথিপরায়ণ এবং অধিকাংশ সময় তারা সাক্ষাৎ করতে চায় এবং এয়ারপোর্ট থেকে আপনাকে হোটেলে নিয়ে যাবার জন্যে পিড়াপিড়ি করবে। অধিকাংশ প্রধান চীনা বিমানবন্দর থেকে শহর অন্তত এক ঘন্টা বা তার বেশি দুরত্বে হয়। ঠিক এই সময়টা ধরে নিয়ে আপনার চীনা প্রতিনিধিকে সময় দিতে হবে।
যদি আপনাকে হোটেলে পৌঁছে দেবার কেউ না থাকে, তবে আপনি সবরকম ঠিকানা চাইনীজ ভাষায় প্রিন্ট করে নিয়ে আসবেন। ইংরেজি কেউ বুঝে না, চীনা ঠিকানা ছাড়া আপনার হোটেল পৌঁছতে অনেক কঠিন হয়ে যাবে। ট্যাক্সি ব্যবহার করুন। সাধারনত ট্যাক্সিওয়ালারা বিল বেশী উঠানোর চেষ্টা করে না।
এই দিক থেকে ওরা কিছুটা ভাল আছে। যদি কোন হোটেল বুকিং দিয়ে না যান, তবে আপনাকে অবশ্যই এয়ারপোর্টে ট্র্যাভেল হেল্প ডেস্কের সাহায্য নিতে হবে। এইটাই উত্তম উপায়, নিজে গিয়ে হোটেল ঠিক করার চেয়ে। এর ফলে হোটেল গুলো অনেক সময় আপনাকে এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে যেতে পারে।
কাঁচা খাদ্য রান্না করা হচ্ছে: আপনাকে সময় বিজ্ঞতার সঙ্গে চীনে ব্যবসায়িক যোগাযোগ/সাক্ষাৎ বা ব্যবসা প্রাঙ্গনে পরিদর্শন পরিকল্পনা করতে হবে। চীনে ব্যবসায়িক আলোচনা কিন্তু একটু ধীর গতির হয় এবং আলোচনার পরে প্রায়ই দীর্ঘ এক দুপুরের খাবার ব্যবস্থা করে ফেলবে আপনার চীনা ব্যবসায়ী পার্টনার।
অতএব, সাধারন হিসেবের চেয়ে দ্বিগুণ সময় লাগবে ধরে নিয়ে পরিকল্পনা করুন। আপনি যদি কোন ফ্যাক্টরি প্রদর্শন করতে গিয়ে থাকেন, তবে আপনাকে হোটেল কিংবা শহর থেকে অনেক দূরে যেতে হবে। সাধারনত ফ্যাক্টরি গুলো শহর থেকে ১-২ ঘন্টার দুরত্বে হয়ে থাকে।
চীন এর অফিসিয়াল ভাষা ম্যান্ডারিন, আপনার চীনা ব্যবসার ভবিষ্যৎ এবং সম্ভাবনা এই ভাষার উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করছে। একটি চমৎকার দোভাষীর মাধ্যমেই কার্যকরভাবে আলোচনা সফল হয়। আপনার চীনা সহযোগী দোভাষীর ভাল যোগ্যতা থাকাটা জরুরী, না হয়, যেকোন ব্যবসায়িক আলোচনা কিংবা পরিদর্শনে আপনার আলাপচারীতায় অনেক কষ্ট হবে এবং সম্পূর্ণ যাত্রা বিফলেও যেতে পারে।
আপনার ব্যবসায়িক ভ্রমন একটি দুঃস্বপ্ন হতে পারে। একজন ভাল দোভাষী আপনার হয়ে অপরপক্ষের সাথে ভাল ভাবেই আলোচনা চালিয়ে যাবে, সে আপনার লাভ-ক্ষতির চিন্তা করবে। আমি এমনটাই দেখেছি।
চাইনিজ সামুদ্রিক খাবার: কাজ করার পর, বিনোদনকে চীনা ব্যবসা সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এইটাকে না বলাটা অভদ্রতা হিসেবে দেখা হয় এবং আপনার চীনা ব্যবসায়িক পার্টনার আপনাকে খাবার তুলে দিতে পছন্দ করবে, এখানেও আপনি না করবেন না। এইটা তাদের সংস্কৃতি এবং ভদ্রতা।
দীর্ঘ ডিনার, পানীয় এবং কারাওকেতে গান গাওয়া ইত্যাদি মিলিয়ে প্রতি রাতে আপনার হোটেল ফিরে আসতে দেরীও হতে পারে। চীনের রেস্টুরেন্ট গুলোরও একই অবস্থা, কেউ ইংরেজি বোঝে না। অনেক ক্ষেত্রে সবই কাঁচা সাজানো থাকে এবং আপনাকে বেছে নিয়ে নিজেকেই রান্না করে খেতে হবে টেবিলে। টেবিলে রান্নার ব্যবস্থাটা খুবই সুন্দর এক ব্যাতিক্রমী ব্যবস্থা।
চীনের মানুষদের ভুলে যাওয়াটা অনেক কঠিনই হবে, কারন তাদের অতিথিপরায়ণ ব্যবহার আপনার মন জয় করে নেবে। তাদের মধ্যে কোন সাম্প্রদায়িকতা নেই, নেই কোন অহংকার। বাজারে কিংবা মার্কেটে স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা আপনার সাথে ছবি তুলতে চলে আসতে পারে, আপনি অবাক হবেন।
ঠিক যেমনটা আমরা অনেকেই করি দেশে কোন বিদেশীকে কাছে পেলে। ফিরে আসার সময় আপনি তাদের কথা মনে করতে থাকবেন এবং মধুর সময় গুলো ভাবতে থাকবেন। এই ব্যবহারের জন্যই বোধহয় আজকের চীন এতটা এগিয়ে। কারন ব্যবসার প্রথম শর্তই হচ্ছে “মন জয় করো আগে”, কম মুল্যে পন্য বা সেবার ব্যাপারটা তো আছেই।
নিশ্চয় তারা ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলে মানুষের মন জয় করেছে বিশ্বব্যাপী। আর কারো মন জিতুক বা না জিতুক, আমাদের মন যে জিতেছে সেটা বলতে পারি নির্দ্বিধায়। তাদের উত্তর উত্তর উন্নতি কামনায়।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।