প্রথম বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলো সিঙ্গাপুরে
প্রথমবারের মত কোনো বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেল। সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দ্য স্ট্রেইট টাইমস রোববার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমানও বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে নিশ্চিত করেছেন।
দ্য স্ট্রেইট টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরে তিনজন নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশের এবং অন্য দুজন সিঙ্গাপুরের নাগরিক। তবে ভাইরাসে আক্রান্ত তিনজনের কেউ কখনোই চীনে ভ্রমণ করেননি।
নিরাপত্তার স্বার্থে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই বাংলাদেশির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তবে এতটুকু জানা গেছে, ৩৯ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশি সিঙ্গাপুরে একজন বৈধ পুরুষ শ্রমিক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
এ মুহূর্তে ভাইরাস–আক্রান্ত ওই বাংলাদেশিকে ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিস বা এনসিআইসিডিতে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরের কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের এক কর্মীর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য আমাদের জানিয়েছেন। নিরাপত্তার খাতিরে ৩৯ বছরের ওই বাংলাদেশির পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। আশা করছি, সোমবারের মধ্যে তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারব।
তার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনার।
দ্য স্ট্রেইট টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই তার শরীরে অসুস্থতা দেখা দেয়। কিন্তু তাকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি চাঙ্গি জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। বাংলাদেশি আক্রান্ত ওই ব্যক্তি ভাইরাসের লক্ষণ বুঝতে পেরে ৩ ফেব্রুয়ারি সাধারণ একটি ক্লিনিকে যান।
৫ ফেব্রুয়ারি তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে যান চেঙ্গি জেনারেল হাসপাতালে। ৮ ফেব্রুয়ারি নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে করোনাভাইরাসে তার আক্রান্তের বিষয়টি চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করেন। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজেস (এনসিআইডি)-এর আইসোলেশন ওয়ার্ডে রয়েছেন।
অসুস্থ হওয়ার আগে তিনি সিঙ্গাপুরের মোস্তফা সেন্টারে (১৪৫ সৈয়দ আলাভি সড়ক) গিয়েছিলেন এবং দ্য লিও ডরমিটরিতে (২৫ বুকিত রোড) বসবাস করছিলেন।
জানা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মোস্তফা সেন্টারে লোকজনের ভিড় লেগেই আছে। ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক কেনার জন্য সেখানে লোকে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকছে। দেশটিতে এছাড়া আর কোথাও মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না।
রোববার পর্যন্ত চীনে করোনাভাইরাসে নিহত হয়েছেন ৮১২ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ৩৭ হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়া আরও ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
করোনাভাইরাসে হতাহতের দুই-তৃতীয়াংশ চীনের হুবেই প্রদেশের। এই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি।
করোনাভাইরাসের বিস্তারের তালিকায় চীনের পর এখন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জাপান। সেখানে আক্রান্ত হয়েছে ৯০ জন। তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর। সেখানে সর্বশেষ বাংলাদেশিসহ মোট আক্রান্ত হয়েছে ৪৩ জন।
অন্তত ২৮টি দেশে শনাক্ত হয়েছে এই ভাইরাস। চীনের বাইরে ফিলিপাইনে এতে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ওই ব্যক্তিও চীনা নাগরিক বলে জানা গেছে। তবে চীনে আক্রান্ত হয়ে মৃতদের তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশের নাগরিক রয়েছে।