গরিবের গড় আয়ু ৫৯ বছর, ধনীর ৭৮ : ইউএনডিপি
বিশ্বজুড়ে ধনী-গরিবের বৈষম্য অনাদীকালের। বিত্তবানদের জীবনযাত্রা, খাদ্য-চিকিৎসাসহ সবকিছুই গরিবদের থেকে উন্নততর। কথায় আছে- আয় বুঝে ব্যয়। অর্থাৎ যেমন উপার্জন তেমন খরচ। আর এই কথার ভেতরেই স্পষ্ট হয়ে উঠে গোটা বিশ্বে ধনী আর গরিবের বৈষম্য। দূরে নয়, আমরা যদি নিজের চোখের চারপাশেও একটু মনোযোগ দিয়ে তাকাই তাহলেও এই বৈষম্য দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠে।
যেখানে একশ্রেণির মানুষ আরামে আয়েশে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে, আর বিপরীত শ্রেণিটি দুবেলা দুমুঠো ভাতের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছে। এক শ্রেণির মানুষ টাকার পাহাড় গড়ে নিশ্চিত নিরাপদ জীবনযাপন করছে, অন্য শ্রেণিটি অর্থাভাবে কষ্টে দিনাতিপাত করছে। এসবের মূলে মূলত অর্থনৈতিক শ্রেণিবৈষম্য।
জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনডিপি) প্রকাশিত ২০১৯ সালের মানব উন্নয়ন রিপোর্টের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, উচ্চ আয়ের মানুষের তুলনায় জীবনযাত্রায় নিম্ন আয়ের মানুষ শুধু পিছিয়েই থাকে না, বরং উচ্চ ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে গড় আয়ুর পার্থক্যও প্রায় ১৯ বছর। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা উপলক্ষে বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান জানিয়ে ইউএনডিপি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিম্ন আয়ের পরিবারে জন্ম নেয়া একটি শিশুর গড় আয়ু হয় ৫৯ বছর। বিপরীতে উচ্চ আয়ের পরিবারে জন্ম নেয়া শিশুটির গড় আয়ু হয় ৭৮ বছর। বর্তমান সময় মানুষের জীবনযাত্রার মনোন্নয়নে উল্লেখযোগ্য সফলতা প্রত্যক্ষ হয়েছে।
ইউএনডিপি প্রতিবেদনে জানানো হয়, পিছিয়ে পড়া মানুষদের মধ্যে চরম দারিদ্র্যতার মধ্যে বাস করে বিশ্বের প্রায় ৬০ কোটি মানুষ। আর বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক পরিমাপে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩০ কোটিতে।
রিপোর্টে বলা হয়, গোটা বিশ্বে অসংখ্য মানুষ ব্যাধি ও দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তি পেয়ে ন্যূনতম জীবন ধারণের ঊর্ধ্বে উঠে গেছে। প্রভূত এ উন্নতির সূচক নির্দেশ করে যে, এর মূলে আছে শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস। তবে সবক্ষেত্রে যে অসমতা রয়েছে সেই অসমতাগুলো জীবন-মৃত্যু, সুযোগ-সুবিধা ও উন্নয়নের পথেও বাধা হয়ে আছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, নিম্ন মানব উন্নয়ন ও উচ্চ মানব উন্নয়ন সূচক দেশগুলোর মধ্যে গড় আয়ুর পার্থক্য প্রায় ১৯ বছর। ৭০ বছর বয়স মাত্রার নিম্ন ও উচ্চ মানব উন্নয়ন সূচক দেশগুলোর মধ্যে প্রত্যাশিত গড় আয়ুর ব্যবধান প্রায় ৫ বছর। এ ছাড়া নিম্ন মানব উন্নয়ন দেশগুলোর মাত্র ৮২ শতাংশ মানুষ প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেছে, যেখানে উচ্চতম মানব উন্নয়ন দেশগুলোতে এই হার ৯১ শতাংশ। আর শিক্ষাক্ষেত্রে সর্বস্তরেই এখনও অসমতা বিরাজমান।
এতে বলা হয়, বিশ্বের নিম্ন মানব উন্নয়ন দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ। যে সুযোগ উন্নত দেশগুলোতে ২৯ শতাংশ। বর্তমান বিজ্ঞান-প্রযুক্তির দুনিয়ায় উন্নয়নশীল দেশে শতকরা ৬৭ জন মুঠোফোন গ্রাহক, অথচ উন্নত বিশ্বে এ সংখ্যা দ্বিগুণ।