প্রাণের ৭১

শুভ বিদায় অধিনায়ক।

স্পোর্টস ডেস্কঃ মাশরাফিই বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার যিনি কিনা কয়েক প্রজন্মের সঙ্গে খেলেছেন। সাবেক হয়ে যাওয়া আকরাম-মাহমুদ-মাসুদ থেকে শুরু করে শরীফ-আশরাফুল-অলক-আফতাবদের সঙ্গে খেলেছেন। তাদের পরে আসা সাকিব-তামিম-মুশফিকদের সঙ্গে খেলেছেন।

বাদ যাননি মিরাজ-সাব্বির-তাসকিনরা। শেষ বেলায় খেলছেন আফিফ-শান্ত-নাঈমদের সঙ্গেও। আর কত দিন তিনি খেলা চালিয়ে যাবেন সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে শুক্রবার শেষবারের মতো অধিনায়ক হিসেবে মাঠে নামলেন এবং দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন।

অভিষেকের ৮ বছর পর ২০০৯ সালে টেস্ট দিয়ে মাশরাফির অধিনায়কত্বে অভিষেক। কিন্তু চোট প্রথম টেস্টেই ঠেলে দেয় মাঠের বাইরে। এরপর ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো হন ওয়ানডে দলের অধিনায়ক। ৭ ম্যাচ পর চোট আরও একবার ছিটকে ফেলে। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব ফিরে পান। সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই দীর্ঘ ৬ বছরের পথ চলা আজ শেষ হলো।

২০১৪ সালে জিম্বাবুয়েকে ধবলধোলাই করে শুরু মাশরাফির অধিনায়কত্বের দ্বিতীয় অধ্যায়। তার নেতৃত্বেই ২০১৫ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। ওরকম সাফল্য বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আর পায়নি।

বিশ্বকাপের পরেও অব্যাহত থাকে সেই সাফল্য । টানা তিনটি ওয়ানডে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ ঘরের মাঠে। পাকিস্তানকে ৩-০ ধবলধোলাই, ভারতের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জয়ের পর দক্ষিণ আফ্রিকাকেও হারায় ২-১-এ। এরপর আবারও আসে জিম্বাবুয়ে, ফেরে হোয়াইটওয়াশ হয়ে। মাশরাফির নেতৃত্বে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ হারেনি কখনও হারেনি, শেষটাও হলো জয়ে রঙিন।

সব মিলিয়ে মাশরাফির নেতৃত্বে ৮৮টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। শুক্রবার জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশকে উপহার দিলেন ৫০তম জয় । বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ওয়ানডে জয়ের রেকর্ড। প্রথম দফায় ৭ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে ৩টি ওয়ানডেতে জিতিয়েছিলেন বাংলাদেশের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ক।

মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল সবেচেয়ে বেশি দুটি বিশ্বকাপ খেলেছে। প্রথমবার ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা বাংলাদেশ প্রত্যাশামতো ভালো করতে পারেনি ২০১৯ বিশ্বকাপে। মাশরাফি ও মাশরাফির দলকে হতাশার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে এই বিশ্বকাপে, জয় মাত্র তিন ম্যাচে। তবে বিশ্বকাপ ছাড়াও ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মাশরাফির নেতৃত্বে সাফল্য পায় বাংলাদেশ।

প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক কোনও টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ হয় বাংলাদেশের। এর বাইরেও মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ সব সংস্করণ মিলিয়ে এশিয়া কাপের দুটি ফাইনালে খেলেছে। যদিও শিরোপাখরা ঘোচাতে পারেনি। তবে গত বিশ্বকাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ডকে নিয়ে অনুষ্ঠিতি ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। দুইয়ের বেশি দলকে নিয়ে আয়োজিত কোনও প্রতিযোগিতায় প্রথম শিরোপা।

কেবল মাঠের পারফরম্যান্সই নয়, মাঠের বাইরেও নেতা মাশরাফি অনন্য। সিনিয়র থেকে শুরু করে জুনিয়র সব ক্রিকেটারই মাশরাফির কথায় পান প্রেরণা। সতীর্থদের ভীষণই উজ্জীবিত করতে পারেন। আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল যে এক হাতে ব্যাট করে বিস্ময় উপহার দিলেন, সেও তো মাশরাফিরই অনুপ্রেরণায়। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুশফিককে সঙ্গ দিতে শেষদিকে হাতে প্লাস্টার নিয়ে নেমেছিলেন তামিম। একহাতে ব্যাটিং করেই খেলেছিলেন ১ বল। ম্যাচ শেষে তামিম বলেছিলেন, ড্রেসিংরুমে প্রথম তাকে ব্যাটিংয়ের কথা বলেছিলেন মাশরাফিই।

এশিয়া কাপে অধিনায়ক মাশরাফি নানা পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেছিলেন। ওপেনিং কেউ থিতু হতে পারছিলেন না বলে লিটনের সঙ্গে পাঠিয়েছিলেন মিরাজকে। লিটন পান ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। মাশরাফির সেই সেঞ্চুরি উদযাপন এখনও সবার চোখে লেগে আছে। ড্রেসিংরুমের সামনে দাঁড়িয়ে হাত, বুক দিয়ে ইশারায় লিটনকে অনেক কিছুই বুঝিয়েছেন মাশরাফি। এমন অধিনায়ক মাশরাফিকে আর দেখা যাবে না।

ক্রিকেটে মাশরাফির অবদান যেন শেষ না হয় সেটাই চাওয়া টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের। শুধু সাকিবের নয়, পুরো দেশই এমনটা চায়। শুক্রবার নিজের ফেসবুকে পোষ্টে সাকিব মাশরাফিকে শুভকামনা জানিয়ে লিখেছেন, ‘বিনয় আর সম্মানের সঙ্গে টিম টাইগার্স আর প্রিয় জাতীয় পতাকাকে বিশ্বের বুকে উঁচিয়ে ধরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। হয়তো আমাদের নেতৃত্বের দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন কিন্তু আমাদের সবার প্রিয় ‘মাশরাফি ভাই’ হয়ে সারাটা জীবন থাকবেন আমাদেরই মাঝে। সব সময়ই যেন আমাদের জন্য আপনার সেরাটা দিতে পারেন, এই শুভকামনা জানাচ্ছি।’

একজন অধিনায়ক মাশরাফির যত অর্জন:-

• জয়ের পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক

• ওয়ানডেতে সর্বাধিক জয় (৮৮ ম্যাচে ৫০ জয়)

• সব সংস্করণ মিলিয়ে সর্বাধিক জয় (১১৭ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৬১ জয়)

• মাশরাফির নেতৃত্বে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ

• একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলের নেতৃত্ব

• চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে খেলা

• টানা দুইবার এশিয়া কাপের রানার্সআপ

• আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*