৩৮০ বার জিন বদলে আরও শক্তিশালী করোনা, ঘুম হারাম বিজ্ঞানীদের
বারবার নিজের জিন বদলে উত্তরোত্তর শক্তিশালী হয়ে উঠছে করোনা ভাইরাস। এরই মধ্যে সে টিকে থাকার স্বার্থে ৩৮০ বার নিজের জিন বদলে ফেলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কোভিড-১৯ এর এই জিন মিউটেশনই ভ’য়ের আসল কারণ। যার ফলে বিশ্বের সব বিজ্ঞানীদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। আত’ঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে আমজনতার মধ্যেও। মাঝেই মাঝেই শোনা যাচ্ছে এবারে এই ভাইরাসকে জ’ব্দ করা যাবে ভ্যাক্সিন দিয়ে। কিন্তু প্রতিষেধক কতটা কাজের কাজ করতে পারবে সেই নিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরাও চিন্তায় পড়েছেন।
হিউম্যান প্যাথোজেনিক ভাইরাসের সংক্র’মণজনিত রোগ গবেষকদের মতে, এত কম সময়ের মধ্যে ঘন ঘন জিন মিউটেশন করে নিজের চরিত্র বদলে ফেলছে এই ভাইরাস। তাই একে ঠেকাতে সুনির্দিষ্ট কোনও ও’ষুধ ব্যবহার করা মুশকিল।
প্রায় দু’দশক ধরে করোনা গোত্রেরই ভাইরাস নিয়ে চিকিৎসকরা চিন্তিত। চীনের উহান থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই কোভিড-১৯ ভাইরাসের ১৮ বছর আগে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা সার্সও ঘুম কেড়ে নিয়েছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের। সার্স রোগাক্রা’ন্তদের মধ্যে মা’রা পড়তেন প্রায় ১০ শতাংশ। মার্স বা মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোমও ২০১২ সালে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। তখন দ্রুত ভ্যাক্সিন তৈরি করে তার সাহায্যে রোগের বাড়বাড়ন্ত আটকে দেয়া হয়।
কোভিড-১৯ সেই গোত্রেরই জীবাণু। তবে আগের ভাইরাসদের থেকে এর কিছু চরিত্রগত তফাৎ আছে। তাই প্রতিষেধক নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চললেও কোনও কার্যকর ভ্যাক্সিন বা ও’ষুধ বানানো মুশকিল হয়ে পড়ছে।
গবেষকরা এখন হোস্ট ডিরেক্টেড থেরাপির কথা ভাবছেন। ব্যাপারটা হলো, মানুষের জিনের যে প্রোটিনের উপর কোভিড-১৯ ভাইরাস বেড়ে ওঠে, তাকে নি’ষ্ক্রিয় করে দেয়া। তাদের ধারণা, তা হলেই হয়তো এই ভাইরাসের জারিজুরি শেষ হবে।
নভেল করোনা ভাইরাসের চরিত্রগত বিশ্লেষণ করে ইতিমধ্যই গবেষকরা বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেছেন।
• কোভিড-১৯ ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে, শরীরে রোগ প্র’তিরোধ ক্ষমতা ক্রমেই বাড়িয়ে চললে শিশুদের বিশেষ কোনও ক্ষ’তি করতে পারে না। এই ভাইরাসের কবলে পড়লেও শিশুরা ক্রমশ সুস্থ হয়ে ওঠে। শিশুদের তুলনামূলকভাবে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখা হলে সংক্র’মণের ঘটনাও কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।
• নারীরাও কোভিড-১৯ ভাইরাসের থাবা থেকে কিছুটা নিরাপদ। এর কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, মেয়েদের মধ্যে অটোইমিউন ডিজিজের (শ্বেতী, এসএলই, থাইরয়েড ইত্যাদি) প্রবণতা বেশি হওয়ায় কোভিড-১৯ এর বিরু’দ্ধে যু’দ্ধে তারা বেশির ভাগ সময়ই জিতে যান। শরীর কোনও না কোনও অ্যান্টিবডি তৈরি করে ফেলে। তাই আক্রা’ন্ত মেয়েদের মৃ’ত্যুহার অনেক কম।
• ধূমপায়ী পুরুষদের মধ্যে এই অসুখের মা’রাত্মক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। মনে করা হচ্ছে যে, ধূমপানের ফলে শ্বাসনালী ও ফুসফুসের লাইনিং কিছুটা দুর্বল থাকে। তাই কোভিড-১৯ ভাইরাস এদের শ্বাসনালী ও ফুসফুসকে আক্র’মণ করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
• কোভিড-১৯ আক্রা’ন্ত অতি বয়স্কদের মৃ’ত্যুর হার সব থেকে বেশি। কারণ এদের শরীরে রোগ প্র’তিরোধ ক্ষমতা কম হয়।
• কোভিড-১৯ ভাইরাসের বড় সড় সংক্র’মণে শুধুই যে শ্বাসনালী ও ফুসফুস আক্রা’ন্ত হয় তা নয়, ইন্টেস্টাইনের আবরণ একেবারে ন’ষ্ট করে দেয়। শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ হু হু করে কমে যেতে শুরু করে। ক্রমশ মাল্টি অরগ্যান ফেলিওরের দিকে এগোতে থাকে।
• কিছু কিছু অ্যান্টিভাইরাল ও’ষুধ ব্যবহার করা হলেও খুব যে কার্যকর তা এখনও বলা যাচ্ছে না।
• অনেকেরই ধারণা, গরম পড়লে কোভিড-১৯ ভাইরাসের দাপট কমবে। কিন্তু এই ভাইরাসের জিন মিউটেশনের ধরন দেখে এখনই এ বিষয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
• কোভিড-১৯-এর হাত থেকে বাঁচতে ন্যুনতম ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধুতেই হবে। হাত ধুলে এনভেলপ ফ্লু জাতীয় কোভিড-১৯ ভাইরাসকে নি’শ্চিহ্ন করা সম্ভব। পানি না থাকলে ৬০–৭০ শতাংশ ইথাইল অ্যালকোহল-যুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে ভালো করে হাত পরিষ্কার করে নেয়া উচিত। ভাইরাসের বিরু’দ্ধে ল’ড়তে টাটকা শাকসব্জি ও ফল খেতে হবে। ধুমপান ও মদ্যপান ছাড়তে হবে।
সূত্র: আনন্দবাজার