প্রাণের ৭১

বাংলাদেশে সাংবাদিক নিপিড়নের শেষ কোথায়?- মোঃ শামসুল আরিফ

সাংবাদিক সংবাদ লেখেন ও প্রচার করেন, সংবাদ পত্র গুলো হলো সমাজের আয়না।  সমাজে যা কিছু ঘটে তার প্রতিবিম্ব দেখা যায় সংবাদ পত্র গুলোতে। সংবাদপত্র  গুলোতে সমাজের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত প্রতি হিংসা ও নিপিড়নের শিকার হচ্ছে সাংবাদিকেরা।

সংবাদ পত্রে সমাজে ঘটে যাওয়া ঘটনা সমূহ প্রচার করতে গিয়ে সংবাদ কর্মিরা প্রতিনিয়ত ক্ষমতাসীনদের দ্বারা প্রতিনিয়ত মিথ্যা মামলা, হামলা হয়রানির শিকার হচ্ছে। অনেক সাংবাদিক খুন ও নিখোঁজ হচ্ছে। পরিবার ও আত্মীয় স্বজনকে নির্যাতন ও হয়রানি করছে। কিছু সাংবাদিক আহত  পঙ্গু হয়ে দুর্বিষহ জীবন পার করছে।

 

দুর্বল গনতান্ত্রিক যে কোন রাষ্ট্রের সমাজে সব সময় সাংবাদিকেরা আতঙ্কের মধ্যে থাকে। তাদের উপর বিভিন্ন প্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ প্রয়োগ করা হয়।

গত কয়েকদিন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সাংবাদিক নিপিড়নের কয়েকটি ঘটনা।  পূর্বের ধারাবাহিকতায়  দেশের ক্ষমতার সুবিধা ভোগকারী প্রশাসন  কতৃক সাংবাদিক দের উপর নিপিড়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। সেগুলো হলো

বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে শুক্রবার (১৩ মার্চ ২০২০ইং) গভীর রাতে বাসার গেট ও ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চোখ বেঁধে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয়েছে। সে নির্যাতনের ঘটনার পুরো দৃশ্য ভিডিও করে একজন।  শনিবার (১৪ মার্চ) কুড়িগ্রাম কারাগারে আটক আরিফের সঙ্গে দেখা করতে গেলে স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার নিতুর কাছে এসব অভিযোগ করেছেন তিনি (আরিফ)। এসময় রাতের ঘটনায় নেতৃত্ব দানকারী কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব) নাজিম উদ্দিনকে চিনে ফেলেন নিতু। তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, আরডিসি নাজিম উদ্দিনই তার বাসায় হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন।

 

দ্বিতীয় ঘটনাটি হলোঃ

এমপির মামলার পরদিন ফটো সাংবাদিক নিখোঁজ। ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি গত তিন দিনেও ৷ পুলিশ বলছে তারা চেষ্টা করছেন৷ তবে দ্রুত উদ্ধার চাইলে পুলিশ পরিবারের সদস্যদের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷

‘পক্ষকাল’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করা  শফিকুল ও বণিক বার্তায় ফটো সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন।তার পরিবারের সদস্যরা জানান, গত( ১০ মার্চ ২০১০ইং) বাসা থেকে বের হয়ে তিনি আর ফিরে আসেননি৷ নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন৷ ওই মামলায় তিন নাম্বার আসামি কাজল৷

অপর ঘটনাটি হলোঃ

মাদারীপুর এলজিইডি অফিসের উচ্চমান সহকারীর (ইউডিএ) বিরুদ্ধে এক নারী সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এতে সাবরিন জেরিন (২৫) নামের ওই সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তিনি ‘আজকের বিজনেস বাংলাদেশ’ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার এবং আমাদের নতুন সময় পত্রিকার মাদারীপুর প্রতিনিধি। অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাকে বাঁচাতে এসে তার স্বামী সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মামুনও (৩৬) আহত হন। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার মাদারীপুর প্রতিনিধি।

এই সংবাদটি যখন লিখছি তখননি বাংলাা নিউজ পোর্টাল গুলোতে দেখছি আরেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা।অনলাইন নিউজ সুত্রে জানা যায়। মহবুব আলম লাভলু নামে এই সাংবাদিক ইউটিউব চ্যানেল ‘শুদ্ধ সত্য’ চালান। ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লাভলু এর আগে দৈনিক জনকণ্ঠ, সমকাল, মানবজমিন, যায় যায় দিন, বৈশাখী টেলিভিশন ও ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনে কাজ করেছেন।

আশিকুর রহমান নামে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক একজন নেতা গত বৃহস্পতিবার চকবাজার থানায় তার বিরুদ্ধে এই মামলা করেন। আশিক বর্তমানে তিতুমীর কলেজে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকের শেষ বর্ষের ছাত্র

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের উদ্বেগ

‘মানবজমিন’ পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাউথ এশিয়া ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, ‘এই মামলাবিষয়ক পরবর্তী কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া এবং অবিলম্বে মামলাটি প্রত্যাহার করার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মানহানির মামলা ফৌজদারি কার্যবিধি থেকে বাদ দেওয়া উচিত বাংলাদেশের এবং আইনটি পর্যালোচনা করে তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করা প্রয়োজন।

 

এগুলো হলো চলমান সাংবাদিক নিপিড়নের সাম্প্রতিক চিত্র।দেশে সাংবাদিক নিপিড়ন নতুন নয়। এটি চলমান একটি সমস্যা যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। দেশে সুশাসনের অভাব প্রশাসনের কর্মকতাদের ক্ষমতার অপব্যবহার দূর্নীতি, তাদের কুকর্ম প্রকাশ গোপন করার কারনে  সাংবাদিকদের উপর নিপিড়ন করে। ভয় ভীতি দেখায়।

আমি সাংবাদিক দের উপর নিপিড়ন নির্যাতন হামলা, মামলা করার তীব্র নিন্দা জানায়।  অবিলম্বে সাংবাদিকদের উপর চলা সকল নিপিড়ন বন্ধ হোক।

আমরা এর শেষ দেখতে চাই।

তথ্যসুত্রঃ ডিডব্লিউ,বিবিসি,বাংলাট্রিবিউন,অনলাইন

 

মোঃ শামসুল আরিফ

সাংবাদিক

প্যারিস, ফ্রান্স

 

 

 






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*