কাজলের সন্ধান মেলেনি,ডিইউজে ও বিএফইউজের উদ্বেগ
ক্ষমতাসীন দলের একজন এমপি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার পর নিখোঁজ আলোকচিত্র সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের সন্ধান মেলেনি চার দিনেও।
এতে উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে বলেছে, এতে সাংবাদিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
এক সময় দৈনিক সমকাল ও বণিক বার্তায় ফটো সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা কাজল এখন ‘পক্ষকাল’ নামের একটি পাক্ষিক পত্রিকা সম্পাদনা করছেন।
যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার ওয়েস্টিন হোটেলকেন্দ্রিক কারবারে ‘জড়িত’দের নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কারণে মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, তাতে আসামির তালিকায় কাজলের নামও রয়েছে।
মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর গত ৯ মার্চ শেরেবাংলা নগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওই মামলা দায়ের করেন।
তারপর ১০ মার্চ কাজল পুরান ঢাকার বকশীবাজারের বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ জানিয়ে চকবাজার থানায় একটা সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্ত্রী।
তার ছেলে মনোরম পলক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চার দিন ধরে আমার বাবার কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। আমরা তাকে সুস্থভাবে ফেরত চাই।”
প্রথম দুই দিন পুলিশ একেবারেই কোনো ভূমিকা পালন করেনি বলে অভিযোগ মনোরমের।
তিনি বলেন, “আমার বাবা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমার মা পাঁচ বছর ধরে ক্যানসারের চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাবার অনুপস্থিতি আমাদের অসহায় করে তুলেছে, আমরা ভীষণ উদ্বিগ্ন।”
চকবাজার থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার বলেন, “সাংবাদিক কাজলের সন্ধানে যা যা করা দরকার, পুলিশ তার সব কিছুই করছে। আশা করছি, খুব দ্রুত কোনো সুখবর দেওয়া সম্ভব হবে।”
উদ্বেগ-প্রতিবাদ
কাজলের নিখোঁজ হওয়াসহ দেশব্যাপী সাংবাদিকদের উপর হামলা-মামলা ও হয়রানি নিপীড়নে উদ্বেগ প্রকাশ করে শনিবার বিবৃতি দিয়েছেন বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু।
বিবৃতিতে বলা হয়, “বেশ কিছুদিন যাবত সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল নিখোঁজ থাকলেও তার বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো বক্তব্য না পাওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সাংবাদিক সমাজ।”
মামলার প্রসঙ্গ তুলে বলা হয়, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী ও রিপোর্টার আল আমিনের মামলা সাংবাদিক সমাজের কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রকাশিত রিপোর্টে কারও নাম না থাকলেও মানবজমিন সম্পাদক ও রিপোর্টারের বিরুদ্ধে মামলা বাক-স্বাধীনতা তথা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপের শামিল।”
কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ড দেওয়ার ঘটনায়ও সাংবাদিকদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে বলে ম্তব্য করেন সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, “এসব ঘটনার মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকারের সঙ্গে সাংবাদিক সমাজের দ্বন্দ্ব তৈরি করার অপচেষ্টা করছে সংশ্লিষ্ট মহলগুলো। এসব ঘটনার মাধ্যমে বাক-স্বাধীনতার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার প্রতিশ্রুতি বারবার ব্যাহত করার চক্রান্তে ব্যস্ত নানা চিহ্নিত মহল।”
বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা এ ধরনের অপচেষ্টাকারীদের সতর্ক করে দিয়ে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দাবি করেন। নতুবা চিহ্নিত এ মহলের মুখোশ উন্মোচনে ‘কঠোর আন্দোলনের’ হুমকি দেন।