বনানী কবরস্থানে জামিলুর রেজা চৌধুরী সমাহিত
জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
ধানমন্ডি ঈদগাহ মসজিদে জানাজা শেষে জামিলুর রেজা চৌধুরীকে আজ বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয় বলে তার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে।
আজ ভোররাতে তিনি ইন্তেকাল করেন। সোমবার রাতে ধানমন্ডির বাসায় জামিলুর রেজা চৌধুরী ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোরে সেহরির সময় তার স্ত্রী তাকে ডাক দেন। কোনো সাড়া না পাওয়ায় তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা জানান হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা যান।
জামিলুর রেজা চৌধুরী সবশেষ এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
জামিলুর রেজা চৌধুরী একাধারে গবেষক, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী ছিলেন।
দেশের প্রথম মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে ৫ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চেয়ারম্যান ছিলেন জামিলুর রেজা চৌধুরী। পদ্মা সেতু প্রকল্পের আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্যানেলেরও নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন তিনি।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেলসহ চলমান নানা উন্নয়ন প্রকল্পেও বিশেষজ্ঞ প্যানেলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন তিনি।
১৯৪৩ সালের ১৫ নভেম্বর সিলেট শহরে প্রকৌশলী আবিদ রেজা চৌধুরী ও হায়াতুন নেছা চৌধুরীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয় ৷
ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (তখনকার আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ)। ১৯৬৩ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়াারিংয়ে স্নাতক শেষ করে সেখানেই শিক্ষকতা শুরু করেন।
১৯৬৪ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে চলে যান জামিলুর রেজা চৌধুরী। সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডভান্স স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়াারিংয়ে স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৬৮ সালে সেখানেই পিএইচডি শেষ করেন। এরপর দেশে ফিরে আবার বুয়েটে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি।
অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৭ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে একুশে পদক লাভ করেন। ২০১৮ সালে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক নির্বাচিত হন। জামিলুর রেজা চৌধুরী ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে সম্মানসূচক ডক্টর অব ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন।
২০০৩ সালে তিনি বাংলাদেশ ম্যাথমেটিকাল অলিম্পিয়ার্ড কমিটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও পালন করেছেন।
বুয়েট থেকে অবসরে যাওয়ার পর ২০০১ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, সেই দায়িত্বে তিনি ছিলেন ২০১০ সাল পর্যন্ত। এরপর ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য হিসেবে তিনি কাজ শুরু করেন।
বিশেষজ্ঞ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করার পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়েও সরকারের বিভিন্ন পরামর্শক প্যানেলে জামিলুর রেজা চৌধুরীর ডাক পড়েছে।
তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সফটওয়্যার রপ্তানি এবং আইটি অবকাঠামো টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ছিলেন ১৯৯৭ সাল থেকে পাঁচ বছর। ১৯৯৯ সালে সরকার তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা করার জন্য যে কমিটি করেছিল, জামিলুর রেজা চৌধুরীকেই তার আহ্বায়ক করা হয়। ২০০১ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর আইটি টাস্কফোর্সেরও সদস্য করা হয়।
পুরকৌশলের এই শিক্ষক নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৯৬ সালে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দেখভাল করতে হয়েছিল তাকে।
যুক্তরাজ্যের ইনস্টিটিউশন অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্সের ফেলো জামিলুর রেজা চৌধুরী নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটিতেও তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন।BSS