ইতিহাসে প্রথমবার বিচার সরাসরি সম্প্রচার
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিমকোর্টের বিচারিক কর্মকাণ্ড সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।
সোমবার টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানি ও তর্ক-বিতর্ক শুরু করেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। যার যার বাড়ি থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আইনজীবীরা।
বাসায় বসেই তা শোনেন ও ফয়সালা দেন বিচারকরা। আর আদালতের এসব কর্মকাণ্ড রেডিও ও টেলিভিশনের সামনে বসে উপভোগ করেন দেশবাসী।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিচারকার্য পিছিয়ে পড়ায় ফের বিচারিক কার্যে ফেরার পদক্ষেপ হিসেবে এই আয়োজন করা হয়। এই পদক্ষেপকে যুগান্তকারী বলে মনে করছেন অনেকেই। খবর আলজাজিরা।
খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় প্রথম মামলার শুনানি শুরু হয়। প্রথমবারের মতো ফক্স ও সি-স্প্যান নেটওয়ার্কসহ কয়েকটি মিডিয়া বাদী-বিবাদীর শুনানি ও আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক সরাসরি সম্প্রচার করে।
এ ছাড়া বিচার প্রক্রিয়ায় ৯ বিচারকের বক্তব্য প্রচার করা হয়। আর এর মধ্য দিয়েই ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আদালতের বাইরে বসে বিচার কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেন সাধারণ মার্কিনিরা।
আগামী দুই সপ্তাহে আর ৯টি মামলার শুনানি অনলাইনেই চলবে। বিচারক বাড়িতে টেলিফোনে থাকবেন, সেখানে কোনো ক্যামেরা থাকবে না, তাদের নির্দিষ্ট কাপড় না পরলেও চলবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির সোমারসেট হাসপাতালে ১০ দিন ভেন্টিলেটর সাপোর্টে ছিলেন ডায়ানা আগুইলার। তার শরীরে ১০৫ ডিগ্রি জ্বর আঘাত হানে।
জ্বরে তিনি প্রলাপ করছিলেন। ডায়ানা অনুভব করছিলেন যে, অচেনা কেউ তার মুখোশ এবং গাউনের ওপর ঝাঁকুনি দিচ্ছেন। মনে হচ্ছিল, এক ডাক্তার তার মুখ থেকে ভেন্টিলেটর টিউব সরানোর প্রস্তুত নিচ্ছিলেন। অনুভব করলাম, আমি শ্বাস নিতে পারছি না।
আমার শ্বাস-প্রশ্বাস নেই। আমি হাল ছেড়ে দেই। ব্ল–মবার্গ জানায়, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে দশ দিন যান্ত্রিক ডিভাইসের মাধ্যমে বেঁচে ছিলেন আগুইলার। তিনি আর কোনো কিছুই জানেন না।
তিনি অনুভব করেছিলেন যে, এটিই তার শেষ সময়। তিনি তার স্বামী, পুত্র এবং কন্যাকে তার বিদায়যাত্রা ফিসফিস করে বলছিলেন। অথচ তার পাশে তাদের কেউ ছিল না।
তারপরে তিনি তার আদি স্প্যানিশ ভাষায় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। ‘আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন’- এই ভয়েসটি তাকে আশ্বস্ত করেছিল।
‘এখনই গণনা শুরু করুন- এক দুই।’ ভয়েসটি একজন অ্যানাস্থেসিওলজিস্টের। গত ১৮ মার্চ নিউজার্সির সামারভিলের রবার্ট উড জনসন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল সমারসেটে ডায়ানা কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছিলেন। ভাইরাস ইতোমধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে তার দেহে ছড়িয়ে যাচ্ছিল এবং তার ফুসফুসের ক্ষুদ্র কোষগুলো সংক্রমিত করেছিল। তিনি শ্বাস নিতে লড়াই করে যাচ্ছিলেন এবং তার শরীরের প্রতি ইঞ্চিতে ব্যথা অনুভব হচ্ছিল।
হাজার হাজার রোগীর প্রত্যেকের জন্যই এটি এক ভয়াবহ মুহূর্ত। ভেন্টিলেটরে থাকা রোগীর দুই-তৃতীয়াংশের বেশিই মারা গেছে বলে এক রিপোর্টে জানা গেছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১২ লাখ আমেরিকান কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছেন। ডায়ানার মতো বহু রোগী একই ভয়ংকর চিকিৎসা দিচ্ছেন।
ভাগ্যবানরা বেঁচে যাচ্ছেন, কিন্তু তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার যাত্রা আরও দীর্ঘ, আর ভয়ংকর এবং বিপজ্জনক। চিকিৎসকরা কেবল হাসপাতালে আগত লোকদেরকে শ্বাস-প্রশ্বাস ফিরিয়ে দেয়ার চ্যালেঞ্জ হিসেবে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দিচ্ছেন। অনেকের বিশ্বাস, একটি ভেন্টিলেটর জীবন এবং মৃত্যুর মধ্যে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু এটি তার পরবর্তী জীবনে ভয়ানক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকে বলছে, ভেন্টিলেটর থেকে বের হওয়ার পরবর্তী জীবন নরকতুল্য।
ওহাইও’র ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের প্রধান হাসান খৌলি বলেন, ‘যান্ত্রিক ভেন্টিলেটর একটি জীবন রক্ষাকারী আবিষ্কার। রোগীরা বেঁচে থাকলেও তাদের মধ্যে কেউ কেউ গভীরভাবে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এটি এমন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে যেখানে নিত্যদিনের ক্রিয়াকলাপ যেমন শেভ করা, গোসল করা, খাবার প্রস্তুত করতে পারবে না। এমনকি রোগী শয্যাশায়ীও হয়ে যেতে পারে।’ ‘কেউ কেউ কখনই পুরোপুরি সুস্থ নাও হতে পারে’ বলে জানিয়েছেন সোমারসেটের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের মেডিকেল ডিরেক্টর মাইকেল রড্রিক্স।