প্রাণের ৭১

প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার চাইতে গিয়ে চাকরি গেল ইমামের

করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সারা দেশে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার পেলেও নীলফামারীর ডোমারে একটি মসজিদের ইমাম তা চাইতে গিয়ে চাকুরিচ্যুত হয়েছেন ঈদে। জানা গেছে, সারা দেশের ন্যায় ডোমার উপজেলার ৪৯১টি মসজিদে গত ২১ মে ২০২০ মোট ২৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা বিতরণ করেন ডোমার উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা। মসজিদপ্রতি বিতরণকৃত পাঁচ হাজার টাকা পান ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা।

উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়নে বামুনিয়া করানীপাড়া জামে মসজিদে তিন হাজার ৮ শ টাকা বেতনে ইমাম হিসাবে চাকরি করতেন মো. মোস্তাকিন ইসলাম। উল্লেখিত মসজিদ কমিটি চুপিসারে ইমাম ও মুয়াজ্জিনের প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার (আর্থিক অনুদান) তুলে নেন। ঘটনাটি টের পেয়ে ইমাম কমিটির নিকট অনুদানের টাকা দাবি করেন। এতে কমিটি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে চাকরিচ্যুত করে পরবর্তী মাস থেকে না আসার জন্য নির্দেশ দেন।

করানীপাড়া জামে মসজিদের সাবেক ইমাম মো. মোস্তাকিন ইসলাম জানান, কমিটি চুপিচুপি টাকা তুলেছে। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা আমাকে চার্জ করে বলে- এ টাকা মসজিদের উন্নয়নের জন্য। হুজুর চালাক হয়ে গেছে। আর হুজুরকে রাখা যাবে না। ওই টাকা আর আমাকে দেয়নি। ওখানে আট মাস চাকরি করেছি। প্রতিমাসে তিন হাজার ৮ শ টাকা সম্মানী দিত। রমজান মাসে ওখানে কোনো মুয়াজ্জিন ছিল না। আমিই আজানসহ মুয়াজ্জিনের বিভিন্ন কাজ করেছি। এটা অমানবিক। বাড়িতে বিদ্যুৎ নাই। অন্য কোথাও থেকে চার্জ দিতে হয়। তাই সব সময় মোবাইল খোলা থাকে না। ওই টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ নিতাম, ঈদের খরচও করতাম।

 

ডোমার উপজেলা ইমাম ও মুয়াজ্জিন সমিতির সভাপতি মুফতি মাহমুদ বিন আলম বলেন, ঘটনাটি জেনেছি। এটা অমানবিক। তীব্র নিন্দা জানাই। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।  ইমাম যেন তার চাকরি ফিরে পায়। অনুদানের টাকাসহ সরকার কর্তৃক নিধারিত বেতনও পায়।

করানীপাড়া জামে মসজিদের সম্পাদক ইজানুর রহমান জানান, মসজিদের উন্নয়ন করা হবে। এ টাকা ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের জন্য বরাদ্দ জানালে বলেন, পরবর্তী ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে দেওয়া হবে।

ডোমার উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম জানান, করোনার কারণে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। মাননীয় ধর্মমন্ত্রী গত পরশু (৮ মে) এ বিষয়টিা স্পষ্ট করেছেন। এটা তারাই পাবেন। আমি এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।

 

নীলফামারী ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মো. মারুফ রায়হান জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ টাকা ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের ঈদ উপহার। কিন্তু সরকারি চিঠি অনুসারে মসজিদের কমিটির নামেই চেক বিতরণ করা হয়েছে। তারা মসজিদের উন্নয়নও করতে পারে, ইমামদের সম্মানীও দিতে পারে। তারা সমন্বয় করবেন। এই অস্পষ্টতার সুযোগ নিয়েছে তারা। কমিটির নিকট টাকা চাইতে গিয়ে চাকরিচ্যুত করেছে, এটা অমানবিক, দুঃখজনক।

কালেরকন্ঠ






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*