বৌদ্ধ হতে হলে ধর্মান্তরিত হওয়া লাগেনা
সাকিবঃ মুসলিম ও খ্রীস্টান মহিলাদের বৌদ্ধ ধর্ম চর্চা। জর্দান, মিশর, গ্রিস, স্পেন, ফ্রান্স ইতালি, জার্মানি সহ অনেক দেশেই এখন বৌদ্ধিক জ্ঞান ও দর্শন চর্চা করা হচ্ছে। পুরো বিশ্বে এখন বৌদ্ধিক দর্শন চর্চা হয়।
অনেকের ধারনা; বৌদ্ধ ধর্ম একটি অন্যান্য ঐশ্বরিক বিশ্বাসে গড়ে উঠা সম্রাজ্যবাদের নিয়মে বাঁধা একটি ধর্ম। অনেক বৌদ্ধ বিশেষ করে, মহাযানী ও বজ্রাযানীরা মনে করে; বুদ্ধ সৃস্টিকর্তা বা ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রাখে। সব চেয়ে বড় কথা হল; স্বর্গ নরকের স্থান বা ৩১ লোকভূমিকে সনাতনী ধর্মের রীতি অনুসারে তারা ইন্দ্র, ব্রহ্মা সহ দেবদেবী, পরী, অস্পরা অনেক কিছুই ঐশ্বরিক হতে প্রাপ্ত অদৃশ্য ও কাল্পনিক স্বত্তা হিসেবেই মানে। যা বুদ্ধের শিক্ষা ও দর্শনের পূর্বটাই পরিপন্থী।
এটা বর্তমান মহাযানীদের দোষ নয়; এটা তাদের পূর্বসূরীদের খামখেয়ালীপনা ও বিশ্বাসে স্থাপিত মিশ্রবাদের ফসল বলা চলে। কারণ মহাযানীদের উৎপত্তি যারা করেছিল; তাদের সবাই হিন্দু ব্রাহ্মন ও পুরোহিত ছিল।
তাদের বুদ্ধের দর্শনে প্রেম ভালবাসায় হউক কিংবা নিজেদের জীবন জীবিকার জন্যে হউক তারা বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ ও প্রতিপালন করা শুরু করেন। কিন্তু তাদের পূর্বের ধর্মীয় রীতিনীতি অভ্যাস কৃষ্টিকালচার রেখেই বৌদ্ধ ধর্ম প্রতিপালন করেছিলেন। তারও গ্রহণযোগ্যতা বুদ্ধ নিজেই দিয়ে গিয়েছিলেন। বুদ্ধ বলেছিলেন, বুদ্ধের দর্শনে প্রাপ্ত বৌদ্ধিক বা জ্ঞানের চর্চা ও অনুসরণ করাটাই হল মানুষের বৌদ্ধ হওয়া বা জ্ঞানী হওয়া। তারজন্য প্রতিরূপ দেশ প্রয়োজন। প্রতিটি মানুষ স্বীয় সাধনা বলে স্বীয় কর্মবলে বা কর্মফলে তার নির্দিস্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে। সেখানে বৌদ্ধিক বা জ্ঞানের সাধনাই হলো মূখ্য।
অনেকে মনে করে থাকে, অন্যন্য ধর্মের মত শপথ বা প্রতিজ্ঞা করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করতে হয়। এটি পুরোটাই মিথ্যা ও বানোয়াট। মহাযানী ও বজ্রাযানী বা তান্ত্রিকযানী বৌদ্ধরা যেহেতু হিন্দু অনুশাসনের মতবাদ থেকে উৎপত্তি হয়েছিল (তখন হিন্দু ব্রাহ্মনরা জীবনজীবিকার জন্য এসব নিকায় সৃষ্টি করেছিল কিন্তু কালের বিবর্তনে তারা ধীরে ধীরে প্রকৃত বৌদ্ধ অনুশাসনে ফিরে আসে কিন্তু রীতিনীতি ও বিশ্বাস ঠিক আগের মতই আছে।
যেখানে বৌদ্ধ ধর্মে এর বিরোধিতা করার কোন কিছুই নাই)। তাই তারা কিছুটা শপথ কিংবা দীক্ষা বলে কিছু নিয়ম পালন করে থাকে। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মে শপথ করে বা জোর করে আসার কোন নিয়ম নীতি নাই। যেকেউ মন চাইলে বৌদ্ধিক পথ অনুসরণ করে তার জীবন জীবিকা পরিচালনা করতে পারে। তবে প্রব্যজ্জা, উপসম্পদা নিতে হলে, তাদের শাসন মেনে চলতে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তারজন্য তাদের সম্মান বৃদ্ধি হয় এবং অবস্থান গৃহীদের চেয়েও উঁচুতে হয়। কিন্তু সাধারন মানুষের ক্ষেত্রে কোনভাবেই প্রতিজ্ঞা বা শপথ করে ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আর তাই বৌদ্ধ জ্ঞান চর্চায় অন্য ধর্মের মত ধর্মান্তরিত হতে হয় না। যেকোন ধর্মের অনুসারী তাদের নিজস্ব সম্প্রদায় বা পরিবেশে থেকেও বৌদ্ধ ধর্মের চর্চা করতে পারে।