দেশে করোনায় একদিনে আরও ৪৩ মৃত্যু, আক্রান্ত চার হাজার ৮ জন
মোহাম্মদ হাসানঃ প্রাণঘাতী ভয়াবহ বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংক্রমণ বাড়ার পাশাপাশি মৃত্যুও বাড়ছে প্রতিদিন। চতুর্থ মাসে এসে দেশে করোনা সংক্রমণ আরও তীব্র আকার ধারণ করছে। লক্ষণীয়ভাবে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। গত ৯ জুন থেকে শুরু হওয়া সংক্রমণের চতুর্থ মাসের প্রথম ৮ দিনে মৃত্যুর দৈনিক গড় প্রায় ৪২। আর গড়ে প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার সংক্রমণ শনাক্তের ১০১তম দিনে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যু ও আক্রান্তের নতুন রেকর্ড গড়েছে।
গত একদিনে করোনা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে আরও জনের। যার হাত ধরে দেশে করোনা সংক্রমণের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৩০৫ জন।নতুন শনাক্ত জন ৪ হাজার ৮ জন সহ দেশে এই মুহুর্তে শনাক্ত ৯৮ হাজার ৪৮৯ জন। তবে আশার কথা হলো গত ২৪ ঘন্টায় ১৯২৫ জন সহ মোট ৩৮হাজার ১৮৯ জন সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন।
আজ ১৭ জুন বুধবার দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর মহাখালিস্থ স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদপ্তরটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
বুলেটিনে আরও জানানো হয়, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬১ টি পরীক্ষাগারের মধ্যে ৫৯ টিতে আরও ১৮ হাজার ৯২২ টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৭ হাজার ৫২৭ টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ৫ লাখ ৫১ হাজার ২৪৪ টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও ৪ হাজার ৮ জনের মধ্যে। ফলে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৯৮ হাজার ৪৮৯ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৪৩ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ৩০৫ জনের পাশাপাশি গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বরও ১ হাজার ৯২৫ মোট ৩৮ হাজার ১৮৯ জন।
বুলেটিনে ডা. নাসিমা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৩৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
এদিকে বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮১ লাখ। আর এতে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪ লাখ ৪১ হাজার।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ২৪১ জনে। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৫০৫ জনের।
বিশ্বে একক দেশ হিসেবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার সকাল পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২১ লাখ ৩৬ হাজার ৪৩ জন। আর এতে মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৬২ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ব্রাজিল। আক্রান্ত ও উভয় মৃত্যু উভয়- বিবেচনায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৯ লাখ ২৩ হাজার ১৮৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৪৫ হাজার ২৪১ জনের।
মৃত্যু বিবেচনায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য, তবে আক্রান্তের দিক থেকে দেশটির অবস্থান পাঁচ নম্বরে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৯৯ হাজার ৬০০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৪২ হাজার ৫৪ জনের।
মৃত্যু বিবেচনায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে ইউরোপের আরেক দেশ ইতালি, তবে আক্রান্ত বিবেচনায় দেশটির অবস্থান সাতে। ইতালিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৪ হাজার ৪০৫ জনের।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউরোপের আরও দুই দেশ- ফ্রান্স ও স্পেন। মৃত্যু বিবেচনায় পঞ্চম স্থানে থাকা ফ্রান্স আক্রান্ত বিবেচনায় আছে নবম স্থানে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫৫০ জনের। আর মৃত্যু ও আক্রান্ত উভয় দিক দিয়ে ষষ্ঠ স্থানে থাকা স্পেনে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৪৪ হাজার ৩২৮ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৭ হাজার ১৩৬ জনের।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আক্রান্ত বিবেচনায় বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ স্থানে থাকা ভারতে বুধবার সকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৯১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ৯০০ জনের।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে উৎপত্তি হওয়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাস সংকটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।