২৪ ঘন্টায় দেশে করোনায় প্রাণ গেলো আরও ৪৫ জনের,শনাক্ত ৩২৪৩ সুস্থ ২৭৮১
মোহাম্মদ হাসানঃ জোন ভিত্তিক লকডাউন জোড়ালো করা হয়েছে, কিন্তু করোনা সংক্রমণের লাগাম টানা যাচ্ছে না। প্রাণঘাতি করোনা থেকে বাঁচতে কোন আশ্বাসেই এখনও সুফল মিলছে না। দেশে ক্রমশই বেড়ে চলেছে করোনা রোগীর সংখ্যা। সেই সাথে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। তবে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছে সুস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যাও।
গত ২৪ ঘন্টায় দেশে প্রাণঘাতী করোনা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে আরও ৪৫ জনের। যার হাত ধরে দেশে করোনা সংক্রমণের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৩৮৮ জন।নতুন শনাক্ত ৩২৪৩ জন সহ দেশে এই মুহুর্তে শনাক্ত এক লাখ ৫ হাজার ৫৩৫ জন। তবে আশার কথা হলো গত ২৪ ঘন্টায় ২৭৮১ জন সহ মোট ৪২ হাজার ৯৪৫ জন সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন।
আজ ১৯ জুন শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর মহাখালিস্থ স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদপ্তরটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
ডাঃ নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬ হাজার ৩২৭ টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৫ হাজার ৪৫ টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৪৮ টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও ৩ হাজার ২৪৩ জনের মধ্যে। ফলে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৫ হাজার ৫৩৫ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৪৫ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ৩৮৮ জনের পাশাপাশি গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বরও ২ হাজার ৭৮১ মোট ৪২ হাজার ৯৪৫ জন।
বুলেটিনে ডা. নাসিমা আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। আজকের মৃতদের মধ্যে ৩২ জন পুরুষ ও ১৩ জন নারী।
এদিকে মহামারী এ ভাইরাসটিতে বিশ্বের ৪ লাখ প্রায় ৫৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর ভুক্তভোগী পৌনে ৮৬ লাখ মানুষ। যদিও আক্রান্তদের অর্ধেকেরও বেশি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন।
অন্যদিকে, হাতেগোনা কয়েকটি দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলেও মুক্ত হচ্ছে না পুরোপুরি। এমনকি নিয়ন্ত্রণে আসা উৎপত্তিস্থল চীনে দ্বিতীয় দফা আঘাত হানতে যাচ্ছে ভাইরাসটি। কম করে হলেও প্রতিদিনই সেখানে নতুন করে আক্রান্তের খবর আসছে গণমাধ্যমগুলোতে।
এখন পর্যন্ত করোনার সবচেয়ে ভুক্তভোগী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও লাতিন আমেরিকার ব্রাজিল। এতে যোগ হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত।
আজ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল পর্যন্ত বিশ্বখ্যাত জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের তালিকায় যুক্ত হয়েছে বিশ্বের ১ লাখ ৪০ হাজার ৫২৮ জন মানুষ। এতে করে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে ৮৫ লাখ ৭০ হাজার ৩৮৪ জনে দাঁড়িয়েছে। প্রাণ গেছে আরও ৫ হাজার ১২৬ জনের। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৫৭৮ জনে ঠেকেছে। আর সুস্থ হয়ে এখন পর্যন্ত হাসপাতাল ছেড়েছেন ৪৫ লাখ ৩০ হাজারের মতো মানুষ।
এর মধ্যে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই আক্রান্তের সংখ্যা ২২ লাখ ৬৩ হাজার ৬৫১ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৮৮ জন মানুষের।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও প্রাণহানির দেশ ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ৯ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৮৬৯ জনে ঠেকেছে।
আক্রান্তের তালিকায় তিনে থাকা রাশিয়ায় সংক্রমিতের সংখ্যা ৫ লাখ ৬১ হাজার ছাড়িয়েছে। দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ৬৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়।
সংক্রমণে চারে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতে সংক্রমণ এখন চার লাখের কোটায়। এখন পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত ৩ লাখ ৮১ হাজার পেরিয়েছে। প্রাণহানি ঘটেছে ১২ হাজার ৬০৪ জনের।
যুক্তরাজ্যে সংক্রমণ ৩ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪২ হাজার ২৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
নিয়ন্ত্রণে আসা স্পেনে করোনার ভুক্তভোগী ২ লাখ প্রায় ৯২ হাজার ৩৪৮ জন মানুষ। এর মধ্যে প্রাণহানি ঘটেছে ২৭ হাজার ১৩৬ জনের। টানা দশদিন মৃত্যু শূন্য দেশটি।
ইউরোপে প্রথম আঘাত হানা ইতালিতে ২ লাখ প্রায় ৩৮ হাজরের বেশি মানুষ করোনার শিকার। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩৪ হাজার ৫১৪ জনের।
আক্রান্ত ২ লাখ ৪৪ হাজার ছাড়িয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুতে। মৃত্যু ৭ হাজার ৪৬১ জন। ইরানে আবারও বেড়েছে সংক্রমণ। আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৯৭ হাজার ছাড়িয়েছে ইসলামি প্রজাতান্ত্রিক দেশটিতে। প্রাণ গেছে ৯ হাজার ২৭২ জনের।
জার্মানিতে আক্রান্ত ১ লাখ ৯০ হাজার অতিক্রম করেছে। এখন পর্যন্ত ইউরোপের দেশটিতে ৮ হাজার ৯৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিলিতে আড়াই লাখ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে প্রাণ গেছে ৩ হাজার ৮৪১ জনের।
মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে লাতিন আমেরিকার আরেক দেশ মেক্সিকো। যেখানে সংক্রমণ ১ লাখ ৬৫ হাজার পেরিয়েছে। প্রাণহানি এখন পর্যন্ত ২০ হাজার ছুঁই ছুঁই।
দক্ষিণ এশিয়ার আরেক ভুক্তভোগী পাকিস্তানে আক্রান্ত ১ লাখ ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৯৩ জনের।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে উৎপত্তি হওয়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাস সংকটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।